নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০৩ পিএম
সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করা হলে তা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, জনগণের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আজকের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সেই রক্তের মর্যাদা রক্ষা করতেই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ ক্ষমা করবে না।
সোমবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। গণসমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল বের হয়, যা মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে ডা. তাহের বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে ছাত্র-জনতা যে ঐক্যবদ্ধ গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে দেশে দুঃশাসন, লুটপাট, দমন-পীড়ন চালিয়েছে। সেই অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধই ছিল জুলাই অভ্যুত্থান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অপসৃত শাসকগোষ্ঠী আবার নতুন করে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না। একইসঙ্গে যারা নতুন করে স্বৈরশাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তাদের বিরুদ্ধেও জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
ডা. তাহের বলেন, দেশের অধিকাংশ নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই ছিল ভোট ডাকাতির নজির। ব্যালট ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট, সিল মারা ও ভোটারবিহীন নির্বাচন আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছে। তাই এসব প্রহসনের নির্বাচন থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে যদি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হয়, তবে আনতে হবে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি—প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ভোট চুরি, কেন্দ্র দখল বা অর্থের প্রভাব থাকবে না। জনগণের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত হবে। যাদের জনসমর্থন নেই, তারাই এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। তারা মাস্তানি ও টাকার জোরে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু জনগণ তাদের সে সুযোগ আর দেবে না।
নির্বাচন নিয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি ও আপনার পরিবারের কেউ আন্দোলনে আহত হননি বা শহিদ হননি। কিন্তু এখন আপনার কাঁধেই সেই আন্দোলনের রক্তের ভার। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করা হলে তা হবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। এমন বিশ্বাসঘাতকতা দেশ ও জাতি মেনে নেবে না। সময় থাকতে সরকারকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।
অতীতের শাসকদের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয়ের শাসন দেখেছি। কিন্তু দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কেউই জনগণকে মুক্তি দিতে পারেনি। তিনি বলেন, যদি জামায়াতকে একবার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা দেশের ইতিহাসই পাল্টে দেবো। দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি ব্যবহার করবেন না, সরকারি প্লটও নেবেন না।
ডা. তাহের আরও বলেন, জামায়াত একটি কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো আপস করবে না। গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অপরিহার্য।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, তা জনগণের প্রত্যাশার বাইরে হলে দেশপ্রেমী জনতা তা মেনে নেবে না। শুধু ঘোষণা নয়, সনদের বাস্তবায়ন নির্বাচনের আগেই দেখতে চায় মানুষ। জনগণ চায় গণহত্যার বিচার হোক, সুশাসন ফিরুক, এবং নির্বাচন হোক একটি বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতির ভিত্তিতে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াছিন আরাফাত, জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার এবং সদস্য নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
এইউ