জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ওপর সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের সংবাদকে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বড় অর্জন’ একইসঙ্গে ‘দেশের জন্য ভালো খবর’ বলে অভিহিতি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ জন্য তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
শুক্রবার (০১আগস্ট) বিকেল উত্তরার আজমপুরে আমির কমপ্লেক্সের সামনে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব শুল্ক নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এসময় উপস্থিত নেতামকর্মী ও জনতাকে শুল্ক আরোপের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আজকে একটা ভালো খবর আছে, কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন যে আমেরিকা আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে। ট্যারিফ কী জানেন? আমরা যেসব পণ্য রফতানি করব তার ওপরে ৩৫ ভাগ ট্যাক্স নিয়ে নেবে। অর্থাৎ আমাদের যে জিনিসটার দাম ১০০ টাকা, ওটার সঙ্গে আরও ৩৫ টাকার যোগ হবে। তার মানে ১০০ টাকার জিনিস ১৩৫ টাকা দাম হবে। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না। সেই শুল্ককে আমাদের পররাষ্ট্র দফতর এবং উপদেষ্টারা আলোচনা করে কমিয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, অভিজ্ঞতা নাই বেশি। আমি আশা করেছিলাম যে, এক বছরের মধ্যে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে, প্রকৃত তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য তারা পুরোটা করতে পারেনি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, দুই-এক দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হচ্ছে, যে ঘোষণা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়। দেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলো, আমি কার কাছে যাবো? কোনো এমপি নাই তো? আছে? তাহলে আমি যাবো কার কাছে? আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? এ জন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার। খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার। যে পার্লামেন্টে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।’
লুটেরাদের সঙ্গে কোনো আপস নয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা বিরাট ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে, যখন তাদেরকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব। যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, যারা চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায়, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো রকমের আপস থাকবে না। তাদেরকে আমরা কখনোই স্বীকার করব না এবং কোনো মতেই সামনে আসতে দেব না।’
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
বিএনপি মাহসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার উপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ, একইভাবে আজকে তারা তারেক রহমান সাহেবের উপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান সাহেব দেশে আসবেন, কবে নেতৃত্ব দেবেন? আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তারেক রহমান সাহেব অতি দ্রুত দেশে আসেন, আমাদেরকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বারবার প্রতিদিন কথা বলছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছেন। তিনি বলছেন যে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, যে বাংলাদেশে মানুষ ভোট দিতে পারবে, যে বাংলাদেশে সাধারণ গরীব মানুষ আর গরীব থাকবে না, আস্তে আস্তে সে উন্নতির দিকে যাবে এবং বারবার করে বলেছেন যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
আগামীতে তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মাস কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
এক বছর আগে এই দিনে উত্তরা উত্তাল হয়েছিলে উল্লেখ করে ফ্যাসিবাদী পতনের আন্দোলনের শেষ দিকে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের শহীদদের পরিবারের কষ্ট ও বেদনার সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, জাসাসের হেলাল খান, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীরসহ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।
বিইউ/এএইচ