জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৬ জুলাই ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই। আগে যে ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হতো, এখন তাকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। পুলিশেও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান রচিত ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’ শীর্ষক বই প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোথাও কোনো সুশাসন নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় লাগবে। এ জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এ জন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে।
ফখরুল বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখা দরকার যে রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন দাবির অসারতা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। ‘সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন একটা জগাখেচুরি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই।’
তিনি বলেন, ‘যেমন আপনি দেখুন খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। আমাদের সাধারণ মানুষ তো বুঝেই না যে, আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যাই হোক সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি কিছুটা বুঝার চেষ্টা করি… তাতে করে ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে … যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য। এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়। প্রতিনিধি চায় তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খুঁজে সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্ন কক্ষের যে পার্লামেন্ট সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।
‘নির্বাচন বিএনপি কেনো চায়?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন জনগণ প্রতিনিধি আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেনো চাই সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে? কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কী দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ সরল কথা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।’
‘নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি বদলাতে হবে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঠিক একইভাবে আমাদের যে আমলাতন্ত্র এই আমলাতন্ত্র এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা..ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সেই বিষয়গুলো করতে হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কাছে চলে যাওয়া… জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।’
জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দকে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্মের ওপর গবেষণা করে তা জনগণের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন।
বিইউ/ইএ