images

রাজনীতি

জামায়াতের সমাবেশে ঘোষণা আসছে বৃহৎ ঐক্যের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী ১৯ জুলাই শনিবার দুপুর ২টায় সাত দফা দাবিতে ডাক দেওয়া হয়েছে এই জাতীয় সমাবেশের। ইতোমধ্যে জোরেশোরে চালানো হচ্ছে প্রচার। রাজধানীসহ সারাদেশের মহানগর, জেলা-উপজেলা, এমনকি পাড়া-মহল্লাতেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। হচ্ছে প্রচার মিছিল ও সমাবেশ। এই সমাবেশে কমপক্ষে ১০ লাখ লোক সমাগমের আশা করছে দলটি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এই সমাগম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাত দফা দাবিতে ডাক দেওয়া হয়েছে জাতীয় সমাবেশের। দাবিগুলো হলো- ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে, রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার করতে হবে, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন করতে হবে, জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র বলছে, এই সাত দফা ছাড়াও সেদিন ডানপন্থী ও সমমনা দলগুলো মিলে একটি বৃহৎ ঐক্যের ঘোষণা আসতে পারে। সেদিন সমাবেশে যেসব দলকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তাদের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদসহ জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের অধিকাংশ দলকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তবে মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জামায়াতের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তবে দাওয়াত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।

jamat2
ডিএমপির সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব জুবায়ের ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সমাবেশকে ঘিরে আমাদের খুব ভালোভাবেই কার্যক্রম চলছে। সারাদেশেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সেদিন লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে। আমরা তো আশা করছি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উপস্থিতি থাকবে জাতীয় সমাবেশে। এখন পর্যন্ত বিপুল সাড়া পাচ্ছি। শুধু ১০ হাজারের মতো বাস আসবে। এছাড়া, ট্রেন, লঞ্চ তো আছেই। আশা করছি ১০ লাখের বেশি জনসমাগম হবে।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘অলরেডি ঢাকায় উৎসব-আমেজ তৈরি হয়েছে। সমমনা অনেক দলকেই আনুষ্ঠানিক দাওয়াপত্র দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সময় হলেই সব জানতে পারবেন।’

আরও পড়ুন

এখন বিএনপি, এরপর জামায়াত-এনসিপিও মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হবে!

কে কত শতাংশ ভোট পাবে, যা জানা গেল সবশেষ জরিপে

এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে সারাদেশে কয়েক হাজার বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে প্রায় দেড় হাজার বাস রিজার্ভ করার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৮ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম-ঢাকা ২০/৪০ লোডের একটি স্পেশাল ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। যা সকল নিয়ম মেনে ভাড়া পরিশোধ করে রিজার্ভ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বুকিং দেওয়া হয়েয়ে নৌ রুটেও। এছাড়াও যাদের আত্মীয়-স্বজন ঢাকায় রয়েছে তারা দু-একদিন আগেই ঢাকায় আসবেন বলে জানা গেছে। এতে সমাবেশকে ঘিরে এক ধরনের উৎসব আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সমাবেশ সফল ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে গঠিত বাস্তবায়ন কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে- সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুতি, মাইকিং, ব্যানার ও ডিজিটাল ডিসপ্লেসহ যাবতীয় কারিগরি প্রস্তুতি ১৮ জুলাইয়ের পূর্বেই সম্পন্ন করা হবে। স্বেচ্ছাসেবক দলকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করা হবে এবং তারা আগত জনসাধারণকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। অংশগ্রহণকারীদের আসনব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত প্রবেশ ও নির্গমন পথ নিশ্চিত করা হবে। ট্র্যাফিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দিতে মিডিয়া উপকমিটিকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Jamat3
সমাবেশ বাস্তবায়নে একের পর এক বৈঠক করছে জামায়াত। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুলিশের সার্বিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠকে অংশ নেয়।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই-আগস্টের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন এবং জীবন উৎসর্গকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই সমাবেশের আয়োজন করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেমিক জনগণকে ব্যাপকভাবে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

টিএই/জেবি