images

অর্থনীতি

ব্যবসার সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান ডিসিসিআই সভাপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মে ২০২৫, ০৬:১২ পিএম

নির্বিঘ্নে, স্বচ্ছভাবে ও নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। 

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা অনিরাপদ পরিবেশ, চাঁদাবাজি, প্রতারণামূলক অনলাইন কার্যক্রম, পণ্য পরিবহন ঝুঁকি, জালিয়াতি প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসা ও বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন ব্যবসায়ী। 

বুধবার (২১ মে) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার অত্যাবশকীয়তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন৷ 

ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে তাসকীন আহমেদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

দাবি আদায় গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের অংশ হলেও অর্থনীতির এ কঠিন সন্ধিক্ষণে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের দৈনন্দিন কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। 

এছাড়া রাজধানী ঢাকার উপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়ন আরও সুসংহত হবে বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।  

ডিসিসিআইয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা কীভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করব, তা নিয়ে চিন্তিত। ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স দিলেও বর্তমানে অনাকাঙ্ক্ষিত ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়।’ 

ডিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় পার্কিং সুবিধা বাড়নোর পাশাপাশি দক্ষিণের ট্রাফিক বিভাগের অফিস শান্তিনগর থেকে গুলিস্তানে স্থানান্তরের সুপারিশ করেন। তিনি বৈদ্যুতিক ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে ঢাকা শহরের বাইরে স্থানান্তরিত করারও সুপারিশ করেন। সেইসঙ্গে অতিদ্রুত ঢাকা শহরের পরিবহনের কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও দাবি জানান।     

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। স্থল বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করতে গিয়ে ব্যবসায় ব্যয় বাড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মৌলভীবাজার এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় বাবুবাজার ব্রিজে প্রচন্ড যানজট হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া লালবাগ, কোতায়ালি, চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তার স্বার্থে উক্ত এলাকায় সান্ধ্যকালীন পুলিশি টহল বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।     

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. আবুল হাসেম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হলেও চিনির উপর সরকারের অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপের ফলে চিনির মূল্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট। 

তাই তিনি সরকারকে ট্যাক্স কমানোর আহ্বান জানান। সরকারের ১৪টি চিনিকল থাকলেও উৎপাদিত চিনি দিয়ে মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ মেটানো যায়। এছাড়া বেসরকারি খাতে চিনিকল রয়েছে মাত্র তিনটি। এ খাতের পাইলট প্রকল্পের আওতায় সরকারের অন্তত দুটি চিনিকল সারা বছর চালানো উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

তিনি আরও বলেন, চিনি আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে সুষম প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সাপ্লাইচেইন বৃদ্ধি করা গেলে চিনির দাম হ্রাস পাবে। 

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী সৈয়দ মোহাম্মদ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এখনো সক্রিয় ভূমিকা রাখছে না। চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানিকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে, অবৈধ মজুদদারি বন্ধ হবে এবং এ ধরনের পণ্যের মূল্য হ্রাস পাবে।  

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি নেসার উদ্দিন খান বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের নৈরাজ্যে এখন জনজীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যা প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।   

বাংলাদেশ মনিহারী বণিক সমিতির সহসভাপতি হাজী ফয়েজউদ্দিন বলেন, পুরান ঢাকায় প্রবেশের রাস্তাগুলো বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির কারণে বন্ধ থাকায় চকবাজারসহ অন্যান্য জায়গায় পণ্যবাহী ট্রাক যেতে পারছে না। ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হলেও চকবাজার, মৌলভীবাজার এলাকায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট অসহনীয় হয়ে পড়ছে, যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। তিনি বলেন, পণ্য আমদানিতে শুল্কের হার বৃদ্ধি, ব্যাংকের ঋণের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফুর রহমান বাবু বলেন, মোহাম্মদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এছাড়া তিনি মোহাম্মদপুর এলাকায় ফুটপাতগুলো হতে  অবৈধ দখল উচ্ছেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।  

ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, ঢাকা শহরের আশপাশে ৩৭০টি ইটভাটা থাকলেও লাইসেন্স নবায়নের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এ খাতের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা কামনা করেন তিনি। 

ডিসিসিআই পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট সেক্টহোল্ডারদের মধ্যকার সমন্বয় সভা এবং এ বিষয়ে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ফুটপাতে ভাসমান দোকান উচ্ছেদের প্রস্তাব করেন। 

মতিঝিল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মহায়মেনুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আরও উন্নতি করতে হবে। তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করেন যে, এখনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। 

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে এবং জনগণের হস্তক্ষেপ ছাড়া পুলিশ একা সফল হতে পারে না। তিনি বলেন, কিশোর ও যুবক গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ বরাবরের মতো কঠোর এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। 

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/এএইচ