images

রাজনীতি

‘নির্বাচন বিলম্বিত করে দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৮ মে ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করে দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

রোববার (১৮ মে) রাজধানীর বনানীতে হোটেল সারিনায় সমসাময়িক বিষয়ের ওপরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, ‘দেশের জনগণ যেটা মনে করে, নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে, দেশকে তত বেশি অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। জাতি এখন এক গভীর শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে আছে। দেশ কোথায় যাচ্ছে, কেউ জানে না।’ 

তিনি বলেন, ‘এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে সবাই মিলে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচার পালিয়েও গেছে। এরপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনার যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো হয়নি। জনগণ এজন্য শঙ্কায় আছে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘জনগণ মনে করে, সরকার আস্থা হারাচ্ছে, এটি দেশের জন্য দুর্ভাগ্য। দুই মাস আগে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি, যা লিখিতভাবে আমরা দিয়েছি। অর্থাৎ আইনি প্রক্রিয়ায়। তাহলে সরকার নাটক কেন করল? মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারটি কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন। তাদের মূল দায়িত্ব, মূল কর্তব্য হচ্ছে, দেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করা, গণতান্ত্রিক অর্ডারে দেশকে নিয়ে যাওয়া।’

মিয়ানমারের সীমান্তে আরকানে ‘মানবিক করিডোর’, চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির কাছে দেওয়া ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কোনো আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, ‘করিডোর, বন্দর, বিনিয়োগ সম্মেলন- এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এগুলো কী জন্য? তারা সময় নষ্ট করছে। এগুলো দেখিয়ে তারা কী বোঝাতে চাচ্ছে? চট্টগ্রাম পোর্ট হ্যান্ডওভার করছে। এসব সিদ্ধান্তে তারা কী বোঝাতে চাচ্ছে? তাদের ম্যান্ডেট কে দিয়েছে? প্রশ্ন হলো, এই সরকারের এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈধতা কোথায়? তারা কি নির্বাচিত সরকার? তাদের কি জনগণের ম্যান্ডেট আছে? নাই।’

আদালতের রায় কেন মানছে না?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আমীর খসরু।

তিনি বলেন, ‘যদি আদালতে অর্ডার হয়ে থাকে, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন হতে অসুবিধাটা কোথায়? যখন আদালতের আদেশ মানা হচ্ছে না, তখন আইনের শাসনের প্রশ্ন চলে আসে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার স্বার্থে কাজ করছে? সেটাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’

নির্বাচন আগামী মাসের মধ্যেই হতে পারে

আমীর খসরু বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত যেতে হবে কেন? আমি তো দেখছি, ডিসেম্বর পর্যন্ত যাওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের জন্য তিন মাস সময় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। আগস্ট, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে নির্বাচন হতে পারে। ডিসেম্বরে কেন যেতে হবে? আমি নির্বাচন ডিসেম্বর পর্যন্ত যাওয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না। ইমিডিয়েটলি যেখানে ঐকমত্য হয়েছে, এটা ডিক্লেয়ার করে আপনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। আগস্ট, সেপ্টেম্বর যেকোনো সময় হতে পারে।’

সংস্কারের আলোচনায় ঐকমত্য বিষয়গুলো বলুন

আমীর খসরু বলেন, ‘যে সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) বলতে পারে। এক দিনের মধ্যেও বলতে পারে। এতদিন তো লাগে না। ঐকমত্য কোথায় হয়েছে, যেকোনো কাউকে বললে এটা দুই-চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সব রেডি হয়ে যায়। ঐকমত্য যেখানে হয়েছে, এসব আপনি বলে দেন। তার ভিত্তিতে আপনি ইমিডিয়েটলি রোডম্যাপ ডিক্লেয়ার করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট কথা, কারও ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সংস্কার দেখতে চাই না। একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণ যেভাবে চায়, সেভাবে সংস্কার হবে। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পেতে চায়। তারা নির্বাচিত সরকার চায়।’

তার প্রশ্ন, ‘নির্বাচনি কার্যক্রমের দিকে কেন এগোনো যাচ্ছে না? নির্বাচনি রোডম্যাপ দেওয়া হচ্ছে না কেন? তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দায়িত্ব যেগুলো, সেগুলো এড়িয়ে অন্য কাজ কেন তারা করছে? এমন ভাব করছে যে, তারা নির্বাচিত সরকার, তারা দীর্ঘমেয়াদে দেশ পরিচালনা করবে।’

বিইউ/এএইচ