নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ মে ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
প্রবাসীদের ভোটদানে অনলাইন পদ্ধতির পক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
সোমবার (১২ মে) বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্নার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিতে এমন মতামত দিয়েছে দলটি।
চিঠিতে দলটি বলেছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক সম্পর্ক আবর্তিত হয় যে নির্বাচনকে ঘিরে; তার মূল প্রসঙ্গেই থাকে ভোট ও ভোটার। ২০২৫ সালে নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। যার মধ্যে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় বর্তমানে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী কর্মীর সংখ্যা এক কোটি ৫৫ লাখ যারা সকলেই প্রাপ্ত বয়স্ক তথা ভোটার। এই দেড় কোটি ভোটারের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে দাবি তোলা আমরা মনে করি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
এতে বলা হয়েছে, মুক্তিজোট নির্বাচন কমিশনের ২০১৭ সালের সংলাপ থেকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে সোচ্চার। ২০১৭ সালে প্রবাসী ভোটারদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র স্থাপনপূর্বক ভোটের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয় মুক্তিজোট। কিন্তু প্রযুক্তিগত উত্তরণের ফলে বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। এনআইডি স্মার্ট কার্ড হয়েছে, সমস্ত ভোটারদের তথ্য সংবলিত অ্যাপস তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুক্তিজোটের প্রস্তাব হলো প্রবাসী ভোটারদের অনলাইনের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমে প্রবাসী ভোটারদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে; যেখানে তারা কোন দেশে এবং কোন শহরে আছে তা নির্দিষ্ট করে তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
দলটি ইসিকে আরও জানায়, সেমিনারে আমাদের যে ধারণাপত্র সরবরাহ করা হয়েছিল ভোটার নিবন্ধন পদ্ধতি হিসেবে; তার ৬ এর (চ) এবং (ছ) এর ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি আছে। (চ) এর ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র অনলাইন ভোট পদ্ধতির পক্ষে এবং (ছ) এর ক্ষেত্রে যেহেতু আমরা অনলাইন ভোটের পক্ষে তাই আমরা অনলাইন প্রসঙ্গেই কথা বলব। সেক্ষেত্রে ওটিপি এককালীন না করে; একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে এবং সেই সময়ের মধ্যে তা পূরণ করতে হবে। অনলাইন ভোটিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে ধারণপত্রের ৪নং পেজে যে প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে আমরা একমত। তবে একই ডিভাইস বা একই আইপি এড্রেস থেকে একজন বা একাধিক ব্যক্তি ভোট প্রদান করবে তার উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাব হলো, একই ডিভাইস বা একটি আইপি এড্রেস থেকে একটা ভোটই প্রদান করতে পারবে।
প্রবাসীদের অনলাইন ভোটের রেকর্ড সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করে দলটি বলেছে, প্রবাসীদের অনলাইন ভোটের রেকর্ড থাকতে হবে যা প্রিন্ট করা যাবে। প্রিন্ট না থাকা নিয়ে বড় সমালোচনা ছিল ইভিএম পদ্ধতির।
দলটি আরও জানায়, অনলাইন ভোট পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন সাইবার হামলার শিকার না হয়। সেজন্য আইটি সেক্টরকে সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করার সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা জানি ঝুঁকিবিহীন কোনোকিছুই হয় না। আর ঝুঁকি থাকা সত্বেও আমরা দেখছি সমগ্র দুনিয়ার আর্থিক লেনদেন এখন অনলাইনে হচ্ছে। তার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ। তাহলে কেনো আমরা অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি শুধুমাত্র ঝুঁকির কারণে বন্ধ রাখব।
প্রবাসীদের ভোটদানে পোস্টাল ব্যালটের বিরোধিতা করে মুক্তিজোট জানিয়েছে, আমাদের জানা মতে নির্বাচন কমিশনের মোট জনবল প্রায় ৩৭৪২ জন। এর মধ্যে সদর দফতরে রয়েছে ৪৫০ জনের অধিক আর বাকি প্রায় ৩৩০০ জন ৬৪ জেলা ও ৫০৬টি উপজেলাতে হলে মোট ৫৭০ অফিসে গড়ে প্রতিটি অফিসে ৬ জন করে জনবল হয়। তাহলে দেশে প্রায় সাড়ে বার কোটি ভোটারের জন্য নির্বাচন কমিশনের জনবলের চেহারাটা কেমন দেখায়? যে কারণে দেশে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে এমনিতেই সরকারমুখী হয়ে পড়তে হয়। সেখানে প্রবাসীদের ভোট ব্যালটে ভাবাই অবান্তর; যদি তা অনলাইনে হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগের সক্ষমতা বাড়ালে দেশে বসেই প্রবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে মাত্র কয়েকজনের একটি টিম আর কিছু ডিভাইস। এক্ষেত্রে যে বড় সংকট তৈরি হতে পারে তা হল প্রবাসীদের কাছে স্মার্ট ফোন এবং অ্যাপস ডাউনলোড প্রসঙ্গে ধারণা যা সচেতনতার প্রশ্নে আমরা আমাদের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। অন্যদিকে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট ভোট পদ্ধতি সমর্থন করে না মুক্তিজোট। কারণ বিগত ৫৪ বছরের ভোট পদ্ধতিতে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।
প্রক্সি ভোট পদ্ধতি সমর্থন না করে দলটি বলেছে, ‘আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব’ ভোটের এই রাষ্ট্রীয় স্লোগানই শুধু নয় প্রতিটি ভোটারের ভোট দেওয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার তার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় প্রক্সি ভোট পদ্ধতিও সমর্থন করে না মুক্তিজোট।
এমএইচএইচ/এফএ