জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৯ পিএম
দেশে কেমন একটা অস্থিরতা চলছে এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি, সর্তক থাকুন।
রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে এক স্মরণসভায় বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আজকের এই সময়টা আমাদের পরীক্ষার সময়। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন; পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, টকশো সবকিছু দেখছেন কেমন একটা অস্থিরতা চলছে। কতগুলো নির্ধারিত বিষয়কে অনির্ধারিত করে ফেলেছি; অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার, নির্বাচন এই কথাগুলো অনেক বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, সকল রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীসহ সকলের দায়িত্ব হবে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে নজরুল ইসলাম খান ভাই আছেন; তিনি প্রতিদিন এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকে বসছেন। আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আলোচনার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে এবং আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব পাব একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে কিন্তু সজাগ থাকতে হবে। আমাদের সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি। আমাদের কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ এখনও হয়নি। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত সরকার ও পার্লামেন্ট এখনও পাইনি। সেজন্য আমাদেরকে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে আমাদেরকে কাজ করতে হবে; দলকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণে এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির বাসায় আবদুল্লাহ আল নোমান মারা যান।
প্রয়াত নেতা আবদুল্লাহ নোমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার অনুসরণীয় পথে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের চলার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের একজন ছাত্রদল কর্মী প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. জাহেদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। কারা হত্যা করেছে আমরা জানি না। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা এই সময়ে একজন ত্যাগী ছাত্রনেতাকে হত্যা করতে পারে তারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এই পরিবর্তনের আন্দোলনের সঙ্গে কোনোমতেই সংযুক্ত ছিল না।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা আজকে বাংলাদেশে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায় তারা কখনই বাংলাদেশের পক্ষের মানুষ নন। তারা গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ নন। তারা শ্রমজীবী মানুষের পক্ষের মানুষ নন।
তিনি আরও বলেন, আমার ইচ্ছা হচ্ছিল নজরুল ইসলাম খান ভাইকে জিজ্ঞাসা করি এত সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু শ্রমজীবী মানুষদের কথা তো কোথাও শুনতে পারছি না। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের কথা আছে কিন্তু এই সংস্কার কমিশনের মধ্যে এ নিয়ে কি আছে আমি জানি না। কৃষকরা তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না, যখন পানির প্রয়োজন হয় সেচের জন্য পানি পায় না। শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হয় না, শ্রমিকদের সন্তানেরা ভালো স্কুলে যেতে পারে না, স্কুলে গেলেও বই পায় না; সেই কথাগুলো আলোচনা হয় না।
তিনি বলেন, আপনারা খুব ভালো করে লক্ষ করে দেখবেন টেলিভিশন বলেন, টকশো বলেন এমনকি টেলিভিশনে যে নাটকগুলো হয় সেখানেও কিন্তু এই সাধারণ মানুষেরা অনুপস্থিত; শ্রমজীবী মানুষেরা অনুপস্থিত। অথচ এরাই হচ্ছে দেশের বড় অংশ। আমাকে আজকে একটা টেলিভিশন চ্যানেল ইন্টারভিউ করছিল; বিভিন্নভাবে কথা বলতে গিয়ে তারা মনে করেন একটা বিশেষ শ্রেণির মানুষের অবদান রয়েছে। আমি বললাম, আপনারা তো একবারও জিজ্ঞাসা করলেন না (২০২৩ সালে) বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে যে মকবুল শহীদ হয়েছিল সে কে ছিল? সে ছিল একটি ফ্যাক্টরির শ্রমিক; শাওন ভোলার, সে অটো চালাত। মুন্সিগঞ্জে-নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে যারা আত্মহুতি দিয়েছিলো তারাও শ্রমিক ছিল।
গত ১৫ বছরের আন্দোলনে কতজন শ্রমিক আত্মাহুতি দিয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে তার তালিকা শ্রমিক দলের তৈরি করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় প্রয়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিইউ/এফএ