নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে রাজনীতিতে নানান প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিদায়ের পর। গত আড়াই দশক ধরে চলা তাদের জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে? আসন্ন নির্বাচনে তারা একে অপরকে সমর্থন করবে নাকি পৃথকভাবে প্রার্থী দেবে—এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে, দল দুটির শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে কোনো বড় দ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য ছিল, তা বজায় থাকবে। আমরা দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করব। এ বিষয়ে কোনো দূরত্বের প্রশ্ন নেই। তবে, এটি কৌশলগত বিষয় হতে পারে।’’ সালাহউদ্দিন আহমেদের এ বক্তব্যে একটি কৌশলগত সুর ফুটে উঠছে, যা বেশ স্পষ্ট করে বলছে— মতপার্থক্য থাকলেও তাদের ঐক্য অটুট থাকবে। দলটি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ঐক্য অব্যাহত রাখবে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘একসঙ্গে চলতে গেলে প্রত্যেকের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে, তবে সেটা কোনো দ্বন্দ্বের লক্ষণ নয়।’’ জামায়াতের শীর্ষ নেতা দাবি করেন, ‘‘যতদিন পর্যন্ত দল দুটি ঐক্যবদ্ধ আছে, তাদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে।’’ জামায়াতের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য ঐক্যের প্রতি আস্থার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে পার্থক্য সত্ত্বেও দলটি একটি যৌথ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে চায়।
এখন প্রশ্ন হলো— আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত আবারও একে অপরের সঙ্গে জোট গড়বে নাকি ২০২২ সালের পর সব কিছুই বদলে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে দল দুটি কৌশলী উত্তর দিয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘জামায়াত সব দলের সঙ্গেই আলোচনা করছে। এখনকার মতবিনিময়গুলোতে আন্তরিকতা ও সহযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মেরুকরণ হবে। তখন বোঝা যাবে কে কার সঙ্গে জোট করবে এবং কী হবে।’’ জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়নি, তবে তাদের মতে— পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা একসঙ্গে একমত হয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার অবিলম্বে সম্পন্ন করা উচিত। তাদের মতে— দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে তারা উভয়েই একই মত পোষণ করেছেন।
তবে তাদের বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ এক দিক স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তা হলো—রাজনীতির মাঠে শেষ কথা কিছুই বলা যায় না। পরিস্থিতি অনুযায়ী জোটের কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
শেষমেষ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও, তাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো বড় ধরনের দ্বন্দ্বের চিহ্ন নেই। এই কথা তাদের নেতাদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি যেমনই হোক, দলের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে—এটাই তারা জানিয়েছেন।
এইউ