জেলা প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পিএম
বাংলাদেশকে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে, যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সবকিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি আয়োজিত শহরের পায়রা চত্বরে সাড়ে ১৬ বছর পর দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খাঁন শিমুলসহ জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ । অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি সভাপতি এডভোকেট এম.এ মজিদ।
এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকেই জেলার ৬টি উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে সমাবেশস্থলে। একপর্যায়ে বিএনপির জাসাস আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলে পুরো এলাকা কর্মী-সমর্থকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, বক্তব্যের প্রথমেই গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে ঝিনাইদহের ছেলে শহীদ রাকিব ও শহীদ সাব্বীর হত্যার বিচারের দাবি করেন। সেই সাথে গত ১৬ বছরে বিএনপির যেসব নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে তাদের হত্যার বিচার করা হবে বলেও জানান।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি যেখানে কারো কোনো ভয় নেই। সকলে আমরা শংকামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলছে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সাথে আমরা অন্যের কথা শোনবার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারতো না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীন ভাবে বলতে পারতাম না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল। ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগণের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগনের দাবি ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে বিশেষ করে এই জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের, ৭১ এর শহিদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে। আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে, যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সকলকিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তারেক রহমান বলেন, আসুন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।
প্রতিনিধি/এমএইচটি