মো. ইলিয়াস
২৫ মে ২০২২, ০১:২৩ পিএম
বহু প্রতীক্ষার পর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা বহুমুখী সেতু। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধন করবেন। এর পরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুটি। তবে রেলপথ প্রস্তুত না হওয়ায় আপাতত ট্রেন চলবে না।
এই পদ্মা সেতু নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য কম হয়নি।
পদ্মা সেতুতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ খালেদা জিয়া বলেছিলেন পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধের চেষ্টা করার অভিযোগ তুলে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে পদ্মা নদীতে দুটি চুবানি দিয়ে সেতুর ওপর তুলে দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু নিয়ে ‘অপপ্রচারকারীদের’ জাতির সামনে ক্ষমা চেয়ে সেতুতে উঠতে বললেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল, বেগম খালেদা জিয়া, সিপিডি, টিআইবিসহ তাদের নানামুখী অপতৎপরতা ও বিরূপ মন্তব্য এবং আরও অনেক ব্যক্তিবর্গ আছেন, যারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে এমনকি বিশ্ব ব্যাংককে ই-মেইল করে চিঠি দিয়েছিলেন। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। এই সেতু বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য। তবে যারা এই অপপ্রচারগুলো করেছিল, তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমি বলব, ক্ষমা চেয়ে তারা পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যেতে পারে।
পদ্মা সেতু নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পদ্মা সেতু কি আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি? এটা কি পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে বানিয়েছেন? নাকি আমাদের জনগণের টাকা দিয়ে বানিয়েছেন? পুরোটাই তো আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকাতে নিয়ে ওখান থেকে চুরি করেছে। সুতরাং এসব কথা তাদের মুখে শোভা পায় না।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে দেশি-বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আমন্ত্রণের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় বিএনপি নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই বক্তব্য আপনারা কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মেইলকে বলেন, এ সমস্ত বক্তব্যে আমরা গুরুত্ব দেই না। তাহলে আমন্ত্রণ পেলে যাবেন কি-না জবাবে তিনি বলেন, বললাম তো ভাই আপনাকে খুব পরিষ্কার করে আমরা এগুলো কোনো গুরুত্বই দেই না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা আমাদের দলের বিষয়। আমন্ত্রণ দিলে দলের সিদ্ধান্ত হবে, তারপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যা হওয়ার হবে। আমার তো এখানে কোনো বিষয় না, আর আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করতেও চাই না। দল সময়মতো প্রতিক্রিয়া দেবে।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা আমি বলতে পারব না, এটাতো পার্টির সিদ্ধান্ত। যে সেতুতে চারগুণ দাম দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট মেরেছে। দেশের মানুষের টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। সেতুর টোল যা হওয়ার কথা তার কয়েক গুণ বেশি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে যে দুর্নীতি শুরু হয়েছে, সে প্রজেক্ট করে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। পদ্মা সেতুর যে খরচ হয়েছে তা দিয়ে আরও চারটি ব্রিজ করা যেত। এ টাকা দিয়ে বাংলাদেশে আরও অনেক কিছু করা যেত, কিন্তু তাদের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের ডাকাতি হয়েছে। তারা বলছে তাদের টাকা দিয়ে ব্রিজ হয়েছে তাহলে পরিশোধ করছেন কেন নিয়মিত? যমুনা ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া সেদিন তারা হরতাল দিয়েছেন। যমুনা সেতুর টোল আর পদ্মা সেতুর টোল অনেক বেশ-কম। দৈর্ঘ্য হিসেবেও। এগুলো নিয়ে তো আজ অনেক প্রশ্ন উঠেছে জনগণের কাছে এর উত্তর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন আপনি এক টাকার প্রোজেক্ট ১০ টাকা দিয়ে করবেন বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবেন। এগুলোর উত্তর তো দিতে হবে, শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করলে তো আর হবে না। উন্নয়নের ফাঁকা আওয়াজ শুনে তো লাভ নেই, এগুলো তো জনগণকে শোধ করতে হবে। এগুলো তো মানুষের টাকা, জনগণের টাকা, নিজের টাকা বলতে কি তাদের (আওয়ামী লীগ) পকেটের টাকা দিয়ে করছেন? পদ্মা সেতু নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন বিশ্বব্যাংক সরে গেল কেন- এগুলো আলোচনা করতে হবে না? সে তদন্ত কেউ করে নাই, তাদের বিচার হয় নাই। কথাগুলো তো উঠে আসছে আস্তে আস্তে। তারপরে তিন থেকে চার গুণ খরচ বেশি করা হয়েছে। এই যে, তিনগুণ খরচ বেশি করা হয়েছে এর হিসাব কোথায়? বাকি টাকা গেল কোথায়? এগুলোতো হিসাব-নিকাশের ব্যাপার আছে।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের মানুষের টাকা নিয়ে এক একটা প্রজেক্ট এর তিন-চার গুণ বেশি খরচ দেখানো হচ্ছে। সে টাকা পাচার করা হচ্ছে আর জনগণকে উন্নয়নের কথা বলছে। এজন্য আজকে বাংলাদেশের রিজার্ভ এর উপর প্রেসার আসছে। সব প্রজেক্টে অতিরিক্ত খরচ করা হচ্ছে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে এ জন্য আজকে জনগণের উপর চাপ পড়ছে।
এমই/এএস