জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৬ পিএম
আগামীতে দেশ পরিচালনায় যারা আসবেন তারা যেন জালিমের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হন সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ-যে মানুষের সাথে জুলুমের আচরণ করলে পরিণতি কী ভোগ করতে হয়, এখান থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। এই শিক্ষা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, এই শিক্ষা জামায়াতকেও নিতে হবে, বিএনপিকেও নিতে হবে। যারাই মানুষের জন্য কাজ করতে আসবে তাদের সবাইকে নিতে হবে এই শিক্ষা-যাতে একই গর্তে জাতির পা বার বার না পড়ে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে আহতদের খোঁজ-খবর নিতে এবং আর্থিক সহায়তা দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল)-নিটোরে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের শারীরিক খোঁজ খবর নেন। পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেন।

জামায়াতের আমির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আমরা তাদের দেখতে এসেছি। আমরা সকল আহতদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। সবার সাথে কথা বলতে গেলে-এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। এই চিন্তা করে অল্পসংখ্যক আহত ভাইকে দেখেছি।
উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে একজন আহতকে দেখিয়ে তিনি বলেন, গুলিতে তার দুটি হাত ভেঙে গেছে। মাংসগুলো থেতলে গেছে। তার সুস্থ হতে কতদিন লাগবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। আমরা আশা করছি তার হাত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজকে দেখে আসলাম, কতগুলো পা চলে গেছে, কাটা হয়ে গেছে, তারা আর সেগুলো ফিরে পাবেন না। কিন্তু যারা বুলেটের আঘাতে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তারা আর ফিরে আসবে না। আমি এই মুহূর্তে তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
তিনি নিহতদের শহীদের মর্যাদা এবং তাদের পরিবারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি ও ধৈর্য্যধারণের তৌফিক কামনা করেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনাও করেন জামায়াতের আমির।
ডা. শফিকুর রহমান আহতদের অনুভূতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- আপনার হাত-পা চলে গেছে, ভেঙে গেছে, অবস হয়ে গেছে, আপনার অনুভূতি কী, জবাবে আহতরা বলেছেন, আমি সুখী, আনন্দ ভোগ করছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। জাতির নাজাতের জন্য, মুক্তির জন্য আল্লাহ লড়াই করার শক্তি দিয়েছিলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমি একজনকে আরও জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমার এক পা চলে গেছে, আবার যদি জাতির জন্য এরকম কোনো প্রয়োজন হয়? সে বলেছিল আরেক পা দেব, তিনি আবারো জানতে চান- যদি তোমার আরেক পা চলে যায়? তখন তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে দেব।
ডা. শফিকুর রহমান আহতদের এমন অনুভূতি শুনে বলেন, ‘মানুষ যখন নিজের জাতির জন্য দাঁড়িয়ে যায়, সেই জাতিকে কেউ আর দমিয়ে রাখতে পারে না, কেউ পারবে না ইনশা আল্লাহ।’
তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিবর্তনটা এসেছে, এটি যেন প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবনে স্বস্তি এনে দেয়। সম্মান এনে দেয় ও মর্যাদা এনে দেয়। আমরা যেন দেশে এবং দেশের বাইরে নিজের পরিচয়টা স্বস্তি ও গৌরবের সাথে দিতে পারি- আমি একজন বাংলাদেশি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা এবং সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নিটোর পরিচালক ডা. অধ্যাপক কাজী শামিমুর রহমান, মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক এবং প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার, জামায়াত নেতা জিয়াউল হাসান, ডা. আসাদুজ্জামান কাবুল, ডা. শাহিদুর রহমান আকন্দ, ডা. রতন, ডা. মালেক প্রমুখ।
বিইউ/এএস