images

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা কে কোথায়?

কাজী রফিক

১৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৭ এএম

# কেউ দেশ ছেড়েছেন আগেই
# অনেকেরই বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে
# দেশে থাকলেও আত্মগোপনে অনেক নেত্রী
# দেশ ছাড়তে নারাজ কেউ কেউ

গণআন্দোলনের মুখের দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার মতোই অনেকে গোপনে দেশত্যাগ করেছেন। কেউ আবার রয়ে গেছেন দেশেই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নারী নেত্রীরা। 

গত ৫ আগস্ট দুপুরের আগেই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলটির এই শীর্ষ নেত্রীর সঙ্গে যান তার বোন শেখ রেহানা। তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ইংল্যান্ড বা ফিনল্যান্ড যাওয়ার কথা থাকলেও পরে শেখ হাসিনাপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ভারতেই থাকছেন। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশ ছাড়ার পর দলের তেমন কোনো নেতা দেশ ত্যাগ করতে পারেননি। অনেকেই আবার আটক হয়েছেন বিমানবন্দরে। তবে সেই আটক তালিকায় নেই নারী নেত্রীরা।

আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে দুটি পদ ফাঁকা আছে। ফলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন ৭৯ জন।

এই কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা একজন নারী। দলের সভাপতিমণ্ডলীর ১৬ সদস্যের মধ্যে নারী আছে তিনজন। তারা হলেন- বেগম মতিয়া চৌধুরী, জেবুন্নেসা হক এবং সিমিন হোসেন রিমি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ চারটি। এরমধ্যে একজন নারী। তিনি হলেন- ড. দীপু মনি। চাঁদপুরের এই নেত্রী সদ্য সাবেক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও সবশেষ সমবায়মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার পতনের পর চাঁদপুরে দীপু মনির ডান হাত হিসেবে পরিচিত সেলিম খানকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর দীপু মনি চাঁদপুরে যাননি। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি।

শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর এই তিন নেত্রীর কাউকেই দেখা যায়নি। তবে তাদের মধ্যে সিমিন হোসেন রিমি জাতীয় চার নেতার একজন তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা ও সোহেল তাজের বোন। মঙ্গলবার বিকেলে সোহেল তাজকে দেখা যায় ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে। তিনি বর্তমানে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সোহেল তাজকে দেখা গেলেও তার বোনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ চারটি। এরমধ্যে একজন নারী। তিনি হলেন- ড. দীপু মনি। চাঁদপুরের এই নেত্রী সদ্য সাবেক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও সবশেষ সমবায়মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার পতনের পর চাঁদপুরে দীপু মনির ডান হাত হিসেবে পরিচিত সেলিম খানকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর দীপু মনি চাঁদপুরে যাননি। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। 

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী মধ্যে নারী আছেন ছয়জন। তারা হলেন- অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। 

সরকার পতনের পর এই নেত্রীদের কাউকেই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। 

আওয়ামী লীগের ২৭টি সদস্য পদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৯ জন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোতে এরমধ্যে অনেককেই নিয়োমিত দেখা গেছে। তবে তারানা হালিম, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, হোসনে আরা লুৎফা  ডালিয়া, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণার মতো পরিচিত নেত্রীরা গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি বছর জুড়েই আলোচনায় থাকেন দলটির সহযোগী সংগঠনের নেত্রীরা। বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেত্রীরা এখন আত্মগোপনে। তবে কয়েকজনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছে ঢাকা মেইল। 

এরমধ্যে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি বর্তমানে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ৩ আগস্ট সরকার পতনের দুইদিন আগে দেশ ছাড়েন তিনি।

হোয়াটসঅ্যাপে আলেয়া সারোয়ার ডেইজির সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। ডেইজি জানান, তিনি ৩ আগস্ট রাতে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

দেশ ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে ডেইজি বলেন, আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। মা হিসেবে আমার এই মুহূর্তে তার পাশে থাকা উচিত। তাই আমি এসেছিলাম। তবে এরমধ্যে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে, এমনটা আমি কেন, কেউই কখনো ভাবেনি।

ডেইজি দেশ ছাড়লেও ঢাকাতেই অবস্থান করছেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক দেশে এবং ঢাকাতেই আছেন। আগামী ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আসবেন তিনি।

যুব মহিলা লীগের মতোই আওয়ামী লীগের আরেক নারী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ৷ সংগঠনটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এবং সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা। 

৫ আগস্ট থেকে এই দুই নেত্রীরও কোনো খোঁজ মেলেনি। তাদের দুইজনের মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, মেহের আফরোজ চুমকির গাজীপুর ও ঢাকার দুই বাসাতেই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মুঠোফোনে তাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার আত্মগোপনে আছেন শবনম জাহান শিলা।

সংগঠনের দুই শীর্ষ নেত্রীকে না পাওয়া গেলেও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোজিনা নাসরিন ঢাকা মেইলকে জানান, তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। 

দেশ ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মরি বাঁচি এই দেশেই আছি। এটা আমার দেশ। আমি দেশ ছাড়বো না।

জানা গেছে, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢল নামতে পারে এই সংগঠনের নেত্রীদেরও।

এদিকে আওয়ামী লীগের যে সকল নেতা-নেত্রীরা আত্মগোপনে আছেন, তাদের বিষয়ে কিঞ্চিৎ ধারণা মিলেছে সেনাবাহিনীর প্রধানের বক্তব্যে।

জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ অনেককে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান। 

তবে এসকল মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বা মামলা হলে তারা শাস্তির আওতায় আসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহী সেনানিবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন৷ 

সেনাপ্রধান বলেছেন, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে তাদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয় তাহলে তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে, বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ বা হামলা হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা (নিরাপত্তা) আমরা দেখব।

কারই/এএস