নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:১৩ পিএম
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আছি, আমি আপনাকে (ওবায়দুল কাদের) আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
বুধবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকালে নানা সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। পদত্যাগ না করলে সরকার পালানোর পথ পাবে না বলে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব। এর জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন আমরা পালাব না। প্রয়োজনে মির্জা ফখরুলের বাসায় উঠব।
রাজশাহী মাদরাসা মাঠে এক জনসভায় ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ফখরুল সাহেব পালিয়ে তো আছেন আপনারা। তারেক রহমান আর রাজনীতি করবে না, মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে আছে। দণ্ডিত পলাতক আসামি আপনাদের নেতা। তারেক রহমান পালিয়ে বেড়ায়। আমরা পালাতে জানি না। এই দেশে জন্ম নিয়েছি, এই দেশেই মরব। পালাব না। কোথায় পালাব? প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব। কি জায়গা দেবেন? না হলে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি আছে না, ওই বাড়িতে গিয়ে উঠব।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে আছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আবার কেউ কেউ দেশেই আত্মগোপন করেছেন। আবার কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ওবায়দুল কাদেরও আছেন।
মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের কথায় কথায় বলতেন আমরা পালাব না। আবার আমার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। এখন তিনি কোথায় পালিয়ে আছে। নাকি আবার আমার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে এসে লুকিয়ে আছে। এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আছি, আমি আপনাকে (ওবায়দুল কাদের) আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালে জনগণের মুখ চেপে ধরেছিল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সকলেরই গণতান্ত্রিকভাবে কথা বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালে জনগণের মুখ চেপে ধরেছিল। দেশটাকে তারা লুটপাট করেছে। কেউ কথা বললে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। ইতিমধ্যে আমাদের দলের প্রায় ৭শ’ নেতাকর্মীকে গুম করেছে আওয়ামী লীগ। গোলাম আযমের ছেলেকে গুম করে আয়না ঘরে আট ধরে আটক করে রেখেছিল। আটটি বছর এক ঘরে বহু কষ্টে জীবনযাপন করেছে সে। তার অপরাধ সে গোলাম আযমের ছেলে। শেখ মুজিবরের কন্যা এত নিষ্ঠুর নির্মম হয় কীভাবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বরে রুহিয়ায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী আমাদের এটা কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। আবার তারাই বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলা করেছে। এই হলো আওয়ামী লীগ সরকার।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এক রাতেই ১৪টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। আওয়ামী লীগ নিজেরাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে। মন্দির ভাঙচুর করে। তাদের সম্পদ লুট করে সেটা বিএনপির ওপর চালিয়ে দেয়। জনগণ এখন সবই বুঝে। কারা হামলা চালিয়েছে মন্দিরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে হিন্দু ভাইদের ঢাল বানিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যখনই তারা হারতে থাকবে, জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, আন্দোলনে হেরে যাবে। তখনই তারা বলবে যে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে। অথচ শত শত বছর ধরে এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মিলে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। আমরা একে অপরের বাড়িতে বিয়ে, পৌষ পার্বনেসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই। তারা যত ষড়যন্ত্রই করুক, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা যুবদল সভাপতি চৌধুরী মহেবুল্লাহ আবু নুর প্রমুখ।
এমআর