images

রাজনীতি

বঙ্গবন্ধু ভবন এখন ধ্বংসস্তূপ, ইতিহাসের দলিল যাচ্ছে ভাগাড়ে

কাজী রফিক

১৩ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম

স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক স্মৃতি বুকে ধারণ করে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িটি। জাদুঘর হিসেবে রূপ দেওয়া বাড়িটিতে সংরক্ষিত ছিল ইতিহাসের নানা দলিল। তবে বাড়িটি এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনরোষের ধাক্কা লাগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটিতেও।

ওইদিন গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিতেও একদল বিক্ষুব্ধ মানুষ হামলা চালায়। দীর্ঘ সময় নিয়ে চালানো হয় ভাঙচুর, চলে লুটপাটও। শেষমেশ দেওয়া হয় আগুন। এতে বাড়িটির আর কোনো কিছুই অক্ষুণ্ন থাকেনি। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই ভবনটিতেই থাকতেন শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন এই ভবন থেকেই। বাড়িটির সঙ্গে শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরই নয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরও ব্যাপক আবেগ জড়িয়ে আছে। বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন।

Dhanmondi2

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাও করা হয় ধানমন্ডির এই বাড়িতে। সে সময় আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরে ভবনটিতে সংস্কার করেন তারা। রূপ দেন জাদুঘরে৷ প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ইতিহাসের খোঁজে আসতেন এই ভবনটিতে৷ বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শন করেছেন হাজার হাজার বিদেশিরাও। ভবনটিতে আগুন দেওয়ার ফলে এখানে সংরক্ষিত প্রায় সব দলিল পুড়ে গেছে৷

আরও পড়ুন

আ.লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে যে বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা

৩২ নম্বরের এই বাড়িটিতে পুড়িয়ে দেওয়ার পরদিন ৬ আগস্ট ভবনটির সামনে অবস্থান নেয় একদল শিক্ষার্থী। তারা শুরু করে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। চলে টানা পাঁচ দিন। তারা পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র ভবন থেকে বের করে এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটি এখন দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ আকারে। শিক্ষার্থীরাও কাউকে ভবনের ভেতরের দিকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। ভেতরে প্রবেশ করা না গেলেও বাইরে থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ভেতরে অক্ষত নেই কোনো কিছুই।

Dhanmondi3

বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকায় দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীদের একজন মো. রাইয়ান। বিসিআই ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউটের এই শিক্ষার্থী ঢাকা মেইলকে জানান, তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভবনটির সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং এর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

সোমবার থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও। ভবন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র ময়লা টানার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন, যার শেষ ঠিকানা ময়লা ফেলার ভাগাড়।

আরও পড়ুন

১৫ আগস্ট প্রকাশ্যে আসতে চায় আওয়ামী লীগ?

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটির পাশাপাশে জনসাধারণের চলাচল সংরক্ষিত করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা৷ তবে এখনো পুড়ে যাওয়া ভবনটি দেখতে আসছেন অনেক দর্শনার্থী। হাফিজুর রহমান নামে একজন দর্শনার্থীর সঙ্গে আলাপ হয়৷ ঢাকা মেইলকে হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। পুরো ভবনটা পুড়িয়ে ফেলেছে৷ আমাদের ইতিহাস পুড়ে গেছে। ইতিহাসের নানা দলিল চলে যাচ্ছে এখন ময়লার ভাগাড়ে৷ এটা আমাদের জন্য লজ্জার।'

Dhanmondi4

জানা গেছে, আগুন দেওয়ার আগে ভবনটিতে লুটপাটের ঘটনাও ঘটে৷ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে দায়িত্বরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, লুট হওয়া মালামালের অনেক কিছুই এখন ফেরত আসছে।

আরও পড়ুন

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে অনুমতি চায় আওয়ামী লীগ

মঙ্গলবার সকালেও এক নারী কিছু কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত শিক্ষার্থীরা। যা গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ধ্বংসস্তূপের মাঝেই রঙ তুলি ধরেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশপাশের দেয়াল ছেয়ে গেছে নানা রঙে৷ শিক্ষার্থীরা রঙ-তুলির আচড়ে তুলে ধরেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চিত্র, এই আন্দোলনে শহীদদেরও স্মরণ করছেন তারা৷

কারই/জেবি