images

রাজনীতি

‘টেনশন ছাড়া একটা সমাবেশে যাইতেছি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম

প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে রাজধানীতে বড় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রায়ই প্রশাসনিক জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে। সমাবেশ করার কয়েক ঘণ্টা আগে নানা শর্তে সম্মত হয়ে কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে দলটিকে। কখনো কখনো সমাবেশের অনুমতিও মেলেনি। কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলন মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সব বদলে গেছে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের দুই দিনের মাথায় রাজধানীতে সমাবেশ শুরু করছে বিএনপি। যেখানে লাগেনি কারও অনুমতি। রাজধানীর পথে পথে পুলিশের তল্লাশি কিংবা আতঙ্কও নেই নেতাকর্মীদের মধ্যে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই নেতাকর্মীর ঢল নেমেছে নয়াপল্টনে।

বুধবার (৭ আগস্ট) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টা থেকে আনুষ্ঠানিভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াললি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর সভাপতিত্ব করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাবেশ ঘিরে স্বস্তির কথা তুলে ধরে বিএনপি নেত্রী অ্যাডভোকেট আরিফা সুলতানা রুমা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। ১৮ বছর পর আজ কোনো দলীয় প্রোগ্রামে যাচ্ছি, পুলিশের গুলি খেয়ে জীবিত বাসায় ফিরবো কি না এই চিন্তা না করে।’

BNP1

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৫টি বছর ধরে যে চাপা কষ্ট আর আতঙ্ক নিয়ে চলতেন এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কবে নির্বাচন হবে, কারা ক্ষমতায় আসবে সেসব নিয়ে যতটা না তারা ভাবছেন তার চেয়ে বেশি স্বস্তি আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায়।

নয়াপল্টনের সমাবেশের উদ্দেশে মালঞ্চ পরিবহনের বাসে করে কাঠেরপুল থেকে ওঠা শহিদুল ইসলাম নামের একজন বিএনপি কর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘টেনশন ছাড়া একটা সমাবেশে যাইতেছি। সমাবেশের আগে এক সপ্তাহ ঘরে থাকতে পারতাম না আগে। যারা ধরে নিত, ভয় দেখাত সেই পুলিশই এখন নাই।’

পল্টন মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায় কেরানীগঞ্জ, চকবাজার, লালবাগ এলাকা থেকে একের পর এক খণ্ড খণ্ড মিছিল নয়াপল্টনের দিকে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের দেখা যায় বেশ উৎফুল্ল।

এসময় আওয়ামী লীগের কড়া সমালোচনা করে নানা স্লোগান দিয়ে সড়ক মুখরিত করে তোলেন তারা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে নয়াপল্টন দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ মঞ্চ তৈরি কাজ শুরু করে বিএনপি। বুধবার সকালের মধ্যে পুরো প্রস্তুতি সেরে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে সমাবেশ স্থলের বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত বেনার-পেস্টুন দেখা গেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে মাইকও লাগানো হয়েছে রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংকি পর্যন্ত।

আগে কতদূর পর্যন্ত মাইক টানানো যাবে, কখন থেকে মাইক ব্যবহার করা যাবে, কোন পর্যন্ত সমাবেশ করা যাবে, সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে সেসব শর্ত দেওয়া হতো ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে বুধবারের সমাবেশকে ঘিরে এমন কোনো ধরনের শর্তের মধ্যেই পড়তে হয়নি বিএনপিকে।

BNP2

বুধবার সরেজমিনে বিএনপির সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই বদলে গেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ। মধ্য জুলাইয়ে পুলিশি অভিযানের পর কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকলেও রোববার থেকে খুলে গেছে তালা। এখন বেশ সরগরম নয়াপল্টন কার্যালয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময়ে দলটির কার্যালয়ে ঘিরে চারপাশে থাকত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশ ঘিরে থাকত কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। কিন্তু সরকারের পদত্যাগের পর প্রথম সমাবেশ ঘিরে এমন কোনো দৃশ্য নেই নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায়।

এদিকে সমাবেশ মঞ্চের মাইক থেকে বলা হয়েছে- আগে আমরা যখন সমাবেশ করতাম, তখন অনেক বাধার মধ্যে পড়তাম। অনুমতির জন্য বারবার প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিতে হতো। এরপর অনুমতি পেলেও মঞ্চ তৈরি করতো ১-২ ঘণ্টা আগে। আজ আমরা মুক্ত। বিজয় অর্জন করেছি। এখন অনেক সুযোগ সন্ধানী দলে ভিড়তে চাইবে। নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না

মঞ্চ থেকে নেতাকর্মীদের বিচারপতির বাসভবন, পল্টন থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারা দিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

বিইউ/জেবি