জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৯ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে তাকে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। একইসঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ সামগ্রিক ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিসহ ছয় দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
সোমবার (২৯ জুলাই) তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায্য আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না যেয়ে সরকার ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে এর সমুদয় দায়-দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। আমরা সরকারকে জনগণের জানমালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায়-দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগ করার আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন, মিথ্যা প্রচারের যে পথে হাঁটছে, এই পথে এই সংকটের সমাধান নেই। সংকট উত্তরণে সরকারকে রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে। তা না হলে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষায় সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া দেশের মানুষের নিজেদের রক্ষার আর কোনো উপায় থাকবে না।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ সামগ্রিক ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে দাবিসহ ছয় দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানায় গণতন্ত্র মঞ্চ।
অন্যান্য দাবিসমূহ হলো, দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার, সশ্বস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারি, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়কারিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, গ্রেফতারকৃত বিরোধী নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি, গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক তুলে নেওয়া আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু, ঢাকাসহ সারাদেশে ব্লক রেইড বন্ধ করাসহ শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ।
সাইফুল হক বলেন, সরকার ও সরকারি দলের যাবতীয় উসকানি ও নাশকতা সৃষ্টির পায়তারা এড়িয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ছয় দফার জনদাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে গণআন্দোলন এগিয়ে নেবে। আমরা দেশের সকল গণতন্ত্রকামী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও শ্রেণীপেশার সংগঠন এবং মুক্তিকামী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই আন্দোলন এগিয়ে নিতে উদাত্ত আহ্বান জানাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নজিরবিহীন নৃসংশতায় দমন করতে যেয়ে তারা (সরকার) বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। তাকে আড়াল করতে কথিত ইন্ধন ও নাশকতার অজুহাতে এখন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিরোধী দলকে দমনের অভিযান চলছে। সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথে না যেয়ে কারফিউ এর ছত্রছায়ায় বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানের নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয় ও গভীর অনিশ্চয়তায় নিক্ষেপ করেছে।
তিনি বলেন, সরকার যেভাবে কেবলমাত্র বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই গণআন্দোলন দমন করতে চেয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণের ভেতরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বলতে আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সরকার ও সরকারি দল কার্যত জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা জানি ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে জাগ্রত জনতার সামনে রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ চিরকালই পরাজিত হয়েছে, শেষ পর্যন্ত জনগণের বিজয় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার, তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টারে গুলিবর্ষণ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার-নিপীড়ন, রিমান্ডে নিয়ে গণঅধিকার পরিষেদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে নির্মমভাবে নির্যাতন, কোটা আন্দোলনেরর পাঁচ সমন্বয়কারীকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন ও জোর করে আন্দোলন সমাপ্তি টানার ঘোষণা দেওয়াসহ সরকারের নির্মমতার নিন্দাও জানান সাইফুল হক।
তিনি জানান, গতকাল পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার বিরোধী নেতাকর্মী-শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিলে পুলিশি হামলার ঘটনায় মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ নেতৃবৃন্দ গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন সাইফুল হক।
কর্মসূচি: যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল ও জোটসহ গণতন্ত্র মঞ্চ সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি করবে। কোটা আন্দোলন দমনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আগামী ৩১ জুলাই বেলা ১১টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।
সংবাদ সম্মেলনের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, একেএম জামির, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী অনুসারি পরিষদের আবু ইউসুফ সেলিম, বাবুল বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
বিইউ/এমএইচএম