জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৯ জুন ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
ক্ষমতায় থাকতে সরকার দেশকে ‘পরনির্ভরশীল’ করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেখুন কীভাবে নিজের স্বার্থে, ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে, পরনির্ভরশীল করে ফেলেছে। তাদের (সরকার) কথাবার্তায় সব আসছে। তারা আজকে অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে কার স্বার্থে? অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে বিদেশিদের স্বার্থে। পরনির্ভরশীল একটা জাতিতে পরিণত করেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা (সরকার) খুব বড় বড় কথা বলে, বিএনপির সময় বাজেটের পরিমাণ ছিল এতো, এখন হয়েছে এতো। আরে বিএনপি দেশটাকে ভালোবাসতো… দেশটাকে ভালোবাসতো বলে তারা চট করে জনগণের ওপর করের বোঝা, ঋণের বোঝা চাপাতো না। আজকে ঋণের বোঝা জনগণের ওপর চাপানো হয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তির ওপরে এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ঋণ…চিন্তা করতে পারেন। মাথাপিছু ঋণ এটা।'
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের সমস্যা সমাধানে কোনো দিক নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো ব্যবস্থা বাজেটে নেই। যে সমস্ত জিনিসপত্র-মেশিনারিজ আমদানি করলে উৎপাদন বাড়তে পারে সেগুলোর ওপরে ট্যাক্স আরোপ করেছে। তাহলে কর্মসংস্থান হবে কীভাবে?'
জিয়াউর রহমানের ওপর দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক কামরুল আহসান ও অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম।
‘আওয়ামী লীগের রসায়নই হচ্ছে দুর্নীতি-সন্ত্রাস’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রি হচ্ছে চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস। এখন তো দেখছেন চুরি, দুর্নীতি কীভাবে হচ্ছে। এতো চুরি যে, ওই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলছেন যে, অন্য নেতারা দেশে পায় সোনার খনি আর আমি পাই চোরের খনি। এটা তার আক্ষেপের কথা। এরা সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিয়েছে। দেশটাকে ওরা জাহান্নামে নিয়ে গেছে। এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে। সমস্ত সুন্দর তারা ধবংস করে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে যে একটা সৌহার্দ ছিল, ভ্রাতৃত্ব ছিল সেগুলো তারা ধবংস করে দিয়েছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয়করণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
‘নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থাকে বন্ধ করে রেখেছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কারা আসছে আজকে আমাদের নেতৃত্বে? দেখেন আপনি… তাদের কোয়ালিটি দেখেন…. কী অবস্থা। আমাদের সব জায়গায় নেতৃত্বের সংকট। কেনো? পরিকল্পিতভাবে সমস্ত জায়গায় যেন নেতৃত্ব সৃষ্টি না হয় সেই ব্যবস্থা তারা করেছে। নেতৃত্ব তৈরি হবে কীভাবে? ছাত্র সংসদের নির্বাচন নাই, ডাকসুর নির্বাচন নাই, কোথাও নির্বাচন নাই। নির্বাচন সেখানে তারা (সরকার) করে সেখানে জবরদস্তি করে জিততে পারে।’
জিয়াউর রহমান জীবনাদর্শ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করতে চাই। সেই ওয়ার্কশপে আপনার শিক্ষকরা জিয়াউর রহমানের বিষয়গুলো, দেশ-জাতি সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দেবেন। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের সর্বক্ষেত্রে সরকার বন্ধাত্ব সৃষ্টি করেছে… একটা ব্যানক্রাফট সৃষ্টি করেছে। লাভটা তাদের। কারণ তারা টাকা কামাচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার করছে… কোথাও কোনো কাজে তাদের সমস্যা হচ্ছে না। এজন্য দেখবেন তাদের চেহারা চকচক করে। আমাদের বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের চেহারা খারাপ হয়ে গেছে…. এটা বাস্তবতা।’
ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইউট্যাবের অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক আবদুর রশীদ, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক আলীমুর রহমান, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
বিইউ/এমআর