images

রাজনীতি / সারাদেশ

‘ভাই’ নিয়ে বিপাকে এমপি, নেপথ্যে ছাত্রলীগ!

কাজী রফিক

২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১১ পিএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন করছে না। দলীয় প্রতীক না থাকায় দেওয়া হয়নি কোনো মনোনয়নও। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছে দলটি। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের আত্মীয়রা।

তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে নিজেদের প্রভাবকে আরও শক্ত করতেই সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ উপজেলায় আত্মীয়দের জনপ্রতিনিধি বানাতে চান। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে সে চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকেই৷

তবে এর ব্যতিক্রমও ঘটছে। জামালপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। তার আপন ভাই নজরুল ইসলাম সাত্তার, যিনি এবার উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান প্রার্থী। সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ না চাইলেও জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা থেকে লড়তে চান নজরুল ইসলাম সাত্তার।

কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীদের স্বজনরা ভোটের মাঠে লড়তে পারবেন না— কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই নির্দেশনায় কর্ণপাত নেই নজরুল ইসলাম সাত্তারের।

তার দাবি, তিনি বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই। যদিও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নজরুল ইসলাম সাত্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কেন নির্বাচন করতে পারব না? আমি দলের কোনো পদে নাই। আমার সংসার (সংসদ সদস্যের সঙ্গে তিনি থাকেন না) আলাদা। আমি ফোনে কথা বলতে পারব না। আপনার কিছু জানতে হলে সরাসরি আসেন।’

এরপর ফোনের সংযোগ কেটে দেন এই চেয়ারম্যান প্রার্থী।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম সাত্তারের ভাই জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনেকটা অসহায় ভাব প্রকাশ করেন।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘সে (নজরুল ইসলাম সাত্তার) আমার কথা শোনে না। আমি এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত দিয়ে বলে দিয়েছি।’

জানা গেছে, দলীয় বিধিনিষেধের কারণে আপন ভাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সমর্থনে মাঠে আছেন নজরুল ইসলাম সাত্তার।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজন মিয়ার নেতৃত্বে চলছে এই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছেন উপজেলার ছাত্রত্বহীন ছাত্রলীগ নেতারা, রয়েছেন বিবাহিত ছাত্রলীগ নেতা ও বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিতরা। ছাত্রলীগের কিছু সাধারণ কর্মীও বাধ্য হয়ে রাজন মিয়াকে অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের একটিতে এরইমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ৭টি ইউনিয়নে যারা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী তাদেরকে পদের লোভ দেখিয়ে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচারণায় কাজে লাগানো হচ্ছে৷

ছাত্রলীগের একজন স্থানীয় কর্মী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে সাত্তার সাহেবের পক্ষে প্রচারণা করতে৷ নইলে আমাদের পদ দেবে না। তারা আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বসে আছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে৷ আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ থাকে তিনি মাস। আবার সেই কমিটির ১২ জন বিবাহিত। একেকজনের নামে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। তারপরও সেন্ট্রাল তাদেরকে কিছু বলে না। আমরা বলতে গেলে তো বিপদে পড়বো। তাই বাধ্য হয়েই তাদের নির্দেশ মানতেছি।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদধারী রাজন মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি, বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে৷ ছাত্রলীগের পদধারী হলেও বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই এই উপজেলা নেতার। তবুও সংগঠনের নাম ব্যবহার করে নিজের বিশাল এক বলয় তৈরি করে রেখেছেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজন মিয়াকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ঘটনার বর্ননা দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনও জানি না। আমি খোঁজ নেব।’

কারই