images

রাজনীতি

নেতাদের ক্ষমা করে বিড়ম্বনায় আওয়ামী লীগ!

কাজী রফিক

২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৫ এএম

• ক্ষমা পেয়ে বেপরোয়া হেভিওয়েট থেকে তৃণমূল 
• কেন্দ্রের কড়া বার্তাও গায়ে মাখছেন না উপজেলার প্রার্থীরা
• ৩০ এপ্রিলের বৈঠকে আসতে পারে কঠোর সিদ্ধান্তের বার্তা
• বিপদে পড়তে পারেন প্রার্থী বসাতে ব্যর্থ মন্ত্রী-এমপিরা

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সবশেষ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ বেছে নিয়েছিল প্রবীণ নেতা আজমত উল্লাহকে। সে বার বাদ পড়েন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে দলের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি জাহাঙ্গীর। হয়ে যান বিদ্রোহী প্রার্থী। যার শাস্তি হিসেবে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
 
এর আগেও একবার আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে তিনি ক্ষমা পান। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার পরেও দ্বিতীয় দফাও ক্ষমা পেয়েছেন গাজীপুরের এই প্রভাবশালী নেতা। এবার অনেক ঘাম ঝরলেও মাকে প্রার্থী করে তাকে বিজয়ীও করেছেন আলোচিত এই রাজনীতিক।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বারবার ক্ষমা করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত মানাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিকল্প নেই। না হলে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। 

টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে শুধু জাহাঙ্গীর নয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের পর বহিষ্কার হওয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানও আওয়ামী লীগ থেকে ক্ষমা পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমা পাওয়া নেতাদের তালিকায় শুধু হেভিওয়েটরা নয়, রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। এই সুযোগে ৬ষ্ঠ দফায় শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে একাধিক জায়গায় মন্ত্রী, এমপিদের পরিবার-আত্মীয় স্বজনরাও প্রার্থী হয়েছেন।
 
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার আশঙ্কা থাকায় এসব মন্ত্রী-এমপিদের কড়া বার্তা দিলেও তারা ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনকে। 
 
অবশ্য কেউ কেউ ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন। নাটোরের সংসদ সদস্য ও তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী  জুনায়েদ আহমেদ পলক তার শ্যালককে ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পেরেছেন।
 
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বারবার ক্ষমা করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত মানাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিকল্প নেই। না হলে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। 
 
যারা দলের পক্ষ থেকে বারণ করার পরও ভোটের মাঠে আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে এবার দলীয় প্রতীক তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে কেউ প্রতীক পাচ্ছেন না। প্রতীক বরাদ্দ না থাকায় যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। মাঠ উন্মুক্ত থাকলে বিপত্তি বেধেছে অন্য জায়গায়। তৃণমূলের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দমতো প্রার্থী, এমনকি আত্মীয়দেরও নির্বাচনের মাঠে নামাচ্ছেন। ফলে সংসদ সদস্যদের ছায়া থাকছে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর প্রতি। 

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট করে পরে ক্ষমা পাওয়া নেতাদের মধ্যে তৃণমূলের একটি জেলার দৃশ্যই বলে দেয় কিভাবে শৃঙ্খলা ভাঙতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তৃলমূলের নেতারা। ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও পরে আওয়ামী লীগের ক্ষমা পান- টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মারুফ, কালিহাতী উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বিকম, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম। 
 
তারা সবাই ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। 
 
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যশোরে ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়ে বহিষ্কার হওয়া ৪ ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকে ক্ষমা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ভোটের মাঠে থাকা নেতারা মনে করছেন বহিষ্কার করলেও দল আবার তাদের ফিরিয়ে নেবে।
 
স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে এবার দলীয় প্রতীক তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে কেউ প্রতীক পাচ্ছেন না। প্রতীক বরাদ্দ না থাকায় যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। মাঠ উন্মুক্ত থাকলে বিপত্তি বেধেছে অন্য জায়গায়। 

তৃণমূলের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দমতো প্রার্থী, এমনকি আত্মীয়দেরও নির্বাচনের মাঠে নামাচ্ছেন। ফলে সংসদ সদস্যদের ছায়া থাকছে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর প্রতি। 
 
স্থানীয় পর্যায় থেকে আসা এসব অভিযোগ আমলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীদের আত্মীয়রা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

দলীয় কঠোর নির্দেশের পর সরে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। তবে ভোটের মাঠে থেকে অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে রাজি নন। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাওয়ার চিন্তা আছে আওয়ামী লীগের।
 
স্থানীয় সংবাদদাতাদের তথ্যমতে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩ জন প্রার্থী আছেন, যারা সংসদ সদস্যদের আত্মীয়।
 
তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা, আওয়ামী লীগের অতীতে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনেও ক্ষমা পাওয়ায় তৃণমূলে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার সাহস জোগাচ্ছে। তাই দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরে।
 
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ক এক প্রশ্নের মুখোমুখি হন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 
 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এই বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে দলে। সময় মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অনেক সংসদ সদস্য তাদের নিকট আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কারও কারও মতে, আত্মীয় কারা সে সংজ্ঞা দল থেকে দেওয়া হয়নি। আবার সংসদ সদস্য নিজে বলেও আপন ভাইয়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতে পারছেন না এমন ঘটনাও আছে।

তিনি বলেন, আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেওয়া হবে।
 
চূড়ান্ত পর্যায়েও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল -সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।
 
তৃণমূলের তথ্য বলছে, অনেক সংসদ সদস্য তাদের নিকট আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কারও কারও মতে, আত্মীয় কারা সে সংজ্ঞা দল থেকে দেওয়া হয়নি। আবার সংসদ সদস্য নিজে বলেও আপন ভাইয়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতে পারছেন না এমন ঘটনাও আছে।
 
এ অবস্থায় আগামী ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় গণভবনে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। 
 
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের মিটিং আছে। সে মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। সেই সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সাংগঠনিকভাবে কোনো প্রস্তাব করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু প্রস্তাব থাকবে। তবে সেটা এখনি বলা যাচ্ছে না। আমরা সেটা মিটিংয়ে উপস্থাপন করব।
 
কারই/এএস