images

রাজনীতি

এক ব্যানারে দশ ছবি, ঠাঁই পাননি ভাষা শহীদরা!

বোরহান উদ্দিন

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৮ এএম

প্রতিবছরের মতো এবারও অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে শ্রদ্ধা জানালেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীর ঢল নেমেছে। অন্য রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী এবং সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

তবে তারা যেসব ব্যানার-ফেস্টুন হাতে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে এসেছেন সেসবে দেখা নেই কোনো ভাষা শহীদের ছবি। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলের নেতাদের পাশাপাশি নিজের ছবি বড় করে তুলে ধরছেন ব্যানারে। 

মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা এসব রাজনৈতিক নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। 

সমালোচকরা বলছেন, জাতীয় দিবসগুলোতেও রাজনীতিবিদরা নিজেদের আত্মপ্রচারে বেশি মনোযোগী থাকেন। ফলে দিনের পর দিন এমনটা ঘটছে। 

শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে সাঁটিয়ে দেওয়া ব্যানারেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি আর নিজের ছবি বড় করে দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির আকারও অনেক ছোট করে ফেলেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

6

প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ, জারি হয় ১৪৪ ধারা, ভেঙে ফেলা হয় শোষকের শৃঙ্খল। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। গুলিতে শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস গড়েন তারা। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। প্রতিবছর দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় দেশে এবং বিদেশে।

২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বড় আকৃতির একাধিক ব্যানার লাগানো হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসম্পাদক হাজী মো. জাহাঙ্গীর আলমের সৌজন্য এমন একটি ব্যানারে মোট দশজনের ছবি দেওয়া হয়েছে।

নিজের এবং সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের ছবি সবচেয়ে বড় করে দিলেও একই ব্যানারের কর্ণারে ছোট করে দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। একই আকারের ছবি দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুপুত্র যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছবি।

5

এরপর একে সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, যুবলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিল, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের ছবি দেওয়া হয়েছে ব্যানারটিতে। অথচ যাদের স্মরণে এমন আয়োজন তাদের কারও ছবি দেওয়া হয়নি ব্যানারে।

শহীদ মিনারের পূর্ব পাশে বাঁশ দিয়ে মজবুত করে টানানো আরেকটি ব্যানার টানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ সোহেল। এই ব্যানারেও নিজের এবং সোলায়মান সেলিমের ছবি বড় করে দিয়ে মোট আটটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানেও দেখা নেই ভাষা শহীদদের।

পাশের আরেকটি ব্যানার লাগিয়েছেন কাউন্সিল হাসিবুর রহমান মানিক। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবিও বড় করে দিয়েছেন ব্যানারে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের ছবিও মানিক জুড়ে দিয়েছেন ব্যানারে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের যখন এই অবস্থা তখন পিছিয়ে নেই বিএনপি নেতারাও। শ্রদ্ধা জানাতে ব্যানার হাতে শহীদ মিনারে আসা নেতাকর্মীদের হাতে দেখা গেছে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবির পাশাপাশি নিজেদের ছবি জুড়ে দিয়েছেন ব্যানারে। যে সংগঠনে কাজ করছেন তার কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ছবিও বড় করে ব্যানারে জায়গা পেয়েছে। তবে ঠাঁই পাননি ভাষা শহীদরা।

গণমাধ্যমকর্মী হাবিবুর রহমান এমন একটি ছবি পোস্ট করে আক্ষেপের সুরে লিখেছেন, ‘ভাষা শহীদদের কি খুঁজে পাওয়া যায়?’

ওই ছবি দেখা যায়, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের ব্যানারে এই ইউনিটের সদস্য সচিব আমিনুল হকের ছবি বড় করে দিয়ে ব্যানার নিয়ে এসেছেন নেতাকর্মীরা। আর দক্ষিণের ব্যানারে এখানকার আহ্বায়ক আব্দুস সালামের ছবিও অন্যদের সঙ্গে বড় করে শোভা পাচ্ছে ব্যানারে। 

বিইউ/এএস