নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৩০ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর–৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও কৃষ্ণপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি নিক্সন চৌধুরীর কাছে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।
ঈগল প্রতীক নিয়ে নিক্সন চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দ্বাদশ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটে বিজয়ী হয়েছে নিক্সন চৌধুরী।
এদিকে, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে হেরে গেলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাসানুল হক ইনু। ১৪ দলীয় জোটের অংশ হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি ভোটে অংশ নিয়েছিলেন।
নির্বাচনে ইনু পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৭৩১ ভোট। আর ৪১ হাজার ২৮২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন।
টানা তিনবার মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একবার সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
ইনু এবার হেরে যেতে পারেন এমন আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ করেছিলেন গত ২৩ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে। নির্বাচন উপলক্ষে ছয় জেলার জনসভায় ভার্চুয়াল বক্তব্যে ইনুর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ইনু ভাইও নৌকায় চড়েছেন। নৌকা যেন দোল খেয়ে পড়ে না যায়।’ প্রধানমন্ত্রীর সেই আশঙ্কাই যেন বাস্তবে রূপ নিল। এবার সংসদে যাওয়া হচ্ছে না জাসদ নেতার।
অপরদিকে টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আসনে পরাজয় বরণ করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। ওই আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়।
অনুপম শাহজাহান জয় পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোটে। গামছা প্রতীক নিয়ে ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট পেয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।
আর যশোর-৬ আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আজিজুল ইসলামের কাছে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী শাহীন চাকলাদার।
এছাড়া ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের কেটলি মার্কার প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সিআইপির কাছে হেরেছেন।
২১৭টি কেন্দ্রের ফলাফলের মধ্যে কেটলি প্রতীকে মো. খসরু চৌধুরী পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৮৫ ভোট। ঢাকার এই আসনটিতে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
খসরুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকে এস এম তোফাজ্জল হোসেন পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯০৯ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাঙ্গল প্রতীকের শেরীফা কাদের পেয়েছেন ৬ হাজার ৪২৯ ভোট।
এবারের নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনায় ছিল তৃণমূল বিএনপি। নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার গড়া এই দলে মাত্র কয়েক মাস আগে নেতৃত্বে আসেন শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার। তারা দুজনই বিএনপির সাবেক নেতা। তবে নির্বাচনে এসে সুবিধা করতে পারলেন না দলটির শীর্ষ দুই নেতার কেউই। দুজনেরই ভরাডুবি হয়েছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেননি তাদের কেউ।
সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ১৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন নাহিদ।
নাহিদ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৮৭ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনেও তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ভরাডুবি হচ্ছে।
এই আসনে ১২৮টি কেন্দ্রের বেশির ভাগের ফল পাওয়া গেছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বিজয়ী হওয়ার পথে। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাহান ভূইয়া। আর তৈমুর আলম খন্দকার হয়েছেন তৃতীয়। তার ভোটের পরিমাণও খুবই কম।
এবারের নির্বাচনে নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলটি শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বাইরে কেউই তেমন আলোচনায় ছিলেন না। বরং নির্বাচনে এসে দলটি ভাঙনের মুখে পড়ে।
গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে তৃণমূল বিএনপির ৬০ জন প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বেইমান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বেইমানি করে তাদের নির্বাচনী মাঠে নামিয়ে এখন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দেন এবং সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ পুরুষ, আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ নারী। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।
/এএস