কাজী রফিক
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম
ছয়টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ সংসদীয় আসন। জাতীয় সংসদের ১৮৭ নম্বর আসনটির ভোটের দৌড়ে আছেন মোট ১৪ জন প্রার্থী। তবে তাদের মধ্যে অনেক প্রার্থীই মোট ভোটারের দুই থেকে তিন শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভবনা নেই। আসনটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন। যদি ভোটের দিন ৭০ শতাংশ ভোটারও ভোট কেন্দ্রে যায়, তাহলে এমন ফলাফলই আসতে পারে বলে মনে করছেন খোদ ভোটাররাই।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দিনভর ঢাকার পশ্চিম তীরের এই আসনটি ঘুরে এমন সম্ভবনার কথা জানা গেছে।
ঢাকা-১৪ আসনটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
বিশাল আয়তনের এই আসনে এবার মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার আছেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৯ জন, নারী ভোটার আছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৪ জন। আসনটিতে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা চারজন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনটিতে নৌকার প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ভোটের বেশ আগ থেকেই স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার সুবাদে দ্রুত সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তাও জুটেছে তার। নৌকার প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোট আসতে পারে তারই ঝুলিতে।
আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় নৌকা না পাওয়া সাবিনা আক্তার তুহিন ও লুৎফর রহমান।
এর মধ্যে সাবিনা আক্তার তুহিন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এবারের নির্বাচনে তিনি লড়ছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে। ভোটারদের ভাষ্য— তুহিনের অবস্থান তুলনামূলক শক্ত। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে আগে থেকেই তার যোগাযোগ বেশ ভালো।
মিরপুর মাজার রোড এলাকার ভোটার একরামুল হকের কাছে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, তুহিন আপার সঙ্গে এখানকার মানুষের সরাসরি যোগাযোগ। ভায়া বা পিএস লাগে না। তিনিও সবাইকে নামে চেনেন। এটা তার জন্য প্লাস পয়েন্ট। ওনার প্রচুর ভোট আছে।
পিছিয়ে নেই লুৎফর রহমান। গাবতলী গবাদি পশুর হাটের ইজারাদার হিসেবে পরিচিত লুৎফর রহমান গাবতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কোম্পানি’ নামে পরিচিত।
গাবতলী সুইপার কলোনীর বাসিন্দা আবুল কাশেম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এইখানে তো বড় প্রার্থী দুইজন। নৌকা আর ট্রাক। কেটলি নিয়া লুৎফর সাহেব দাঁড়াইছে। উনিও ভালো ভোট পাবেন।’
একই তথ্য জানিয়েছেন কোটবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, কোটবাড়ি বলেন, গাবতলী, বাজার রোড সব লুৎফর রহমানের দখলে। এই এলাকায় তার প্রচুর জনপ্রিয়তা আছে। বিশেষ করে যারা হিন্দু মানুষ। ইয়াং লোকজন, তারা তারে খুব পছন্দ করে।
একই এলাকার বাসিন্দা সজির সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, নৌকার প্রার্থী যুবলীগের। তার একটা ভালো অবস্থান আছে। নৌকার ভোট পাবেন। তুহিন আপাও নৌকার অনেক ভোট পাবেন। তাদের লোকজনের মধ্যে কয়েকবার ঝামেলা হইছে। যেই জিতুক, ঝামেলা থাকবে। তবে লুৎফর রহমান জিতলে ভালো। তার সঙ্গে কারও খারাপ সম্পর্ক নেই। কোনো বাহিনী নেই। ওনারা বংশগতভাবে এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতেছেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন ভোটার ঢাকা মেইলকে বলেন, ভোটার সবাই কেন্দ্রে যাবে না। তবে যারা যাবে, তারা কেউ থাকবে নৌকার, কেউ তুহিন আপার, কেউ লুৎফর রহমানের। এর বাইরে কেউ তেমন ভোট পাবে না।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কাউন্দিয়া ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ৩২টা প্রচার কেন্দ্র। সব নৌকার। অন্য কারও নাই। তবে এখানকার সব ভোট নৌকার না। অনেক চাপা সমর্থক আছে। যারা তুহিন আপা আর লুৎফর রহমানের সাপোর্টার।’
তবে ভোটের বাজারে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়েই ভোটে দাঁড়াতে হয় সমর্থকদের। সেদিক থেকে এই তিন প্রার্থী বাদে, বাকিরা ২ থেকে ৩ শতাংশ করে ভোট পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে না যান, তবে জামানত হারানোর শঙ্কাও আছে অনেক প্রার্থীরা।
পাশাপাশি নৌকা, ট্রাক আর কেটলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন ঢাকা-১৪ আসনের ভোটাররা।
টানা প্রচারণায় নৌকার প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিল জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিনও নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আবার কেটলি প্রতীকের লুৎফর রহমান ভোটে স্বচ্ছতাপ্রত্যাশী। যদি কেউ বাড়তি সুবিধা না পায়, তাহলে পারিবারিক ও স্থানীয়দের ভোটেই নিজের জয় দেখছেন তিনি।
কারই/এইউ