জেলা প্রতিনিধি
২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১২ পিএম
অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা রুলস (আইন) লঙ্ঘনকারী, ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে যে দল তৈরি হয়েছে, সেই দল ভোটের কী বোঝে? তারা গণতন্ত্রের মানে বোঝে? এমন প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে পাবনাসহ পাঁচ জেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। নির্বাচনে আসবে কিভাবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফলাফলটা কি ছিল? বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট মাত্র পেয়েছিল ৩০টা আসন। আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিল ২৩৩ আসন। তারা এখন বড় বড় কথা বলে! ভোটের কথা বলে! তারা ভোটের কী বোঝে? বিএনপির জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা রুলস লঙ্ঘনকারী, ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। এক জেনারেলে পকেট থেকে। ভোট চুরি করার কাজ করেছিল। ক্ষমতায় বসে থেকেই একদিকে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান আবার ইলেকশনও করেছে। তাদের সব কিছুই অবৈধ।
বিএনপি মানুষকে মানুষ মনে করলে পুড়িয়ে মারত না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মানুষকে মানুষ মনে করতে পারে না। নইলে আপনারা দেখছেন রেলে আগুন দিয়ে কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। একটা মা তার সন্তানকে বাঁচাতে বুকে ধরে রাখছে। বাসের ভেতরে হেলপার ঘুমিয়ে আছে আগুন দিচ্ছে, ট্রাকে আগুন দিচ্ছে। একটি ছেলেকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে বাবা পানি আনতে গিয়ে দেখে ছেলে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। ২০১৩ সালে ১৪ সালে ১৮ সালে একইভাবে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ৬টি ভূমি অফিস, ৩২৫২ গাড়ি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।
তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আর একটি কুলাঙ্গার আছে ২০০১ সালে তার হাওয়া ভবন ছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারত না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতো। সে অবৈধ যত কাজ আছে সবই করেছে। মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে অস্ত্র চোরাকারবারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র আনয়ন, দুর্নীতি সবই সে করেছে। বিদেশ থেকে এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এজন্য তার সাজাও হয়েছে। এখন আবার বিদেশে বসে ভোটের কথা বলে গণতন্ত্রের কথা বলে। সে তো রাজনীতি করবে না। আবার বিদেশে বসে থেকে হুকুম দিয়ে উস্কানি দিয়ে নেতাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। নির্বাচন বানচাল কবার পাঁয়তারা করছে।
সরকারের উন্নয়নমূলক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চান। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনকে ঘিরে আপনাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জনগণ ভোট দেবে। ভোটের মালিক জনগণ। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা এটাকে উন্মুক্ত (স্বাধীন) করেছি। প্রত্যেক জনগণের কাছে যাবেন জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবেন। কেউ কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে মারামারি সংঘাত কোনো কিছু আমি দেখতে চাই না। আমার দলের কেউ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা চাই- জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নির্বিগ্নে প্রয়োগ করবে। তারা যাকে খুশি পছন্দ করবে, ভোট দেবে এবং সে বিজয়ী হয়ে আসবে। গণতন্ত্রকে আরও সুদীর্ঘ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। যতটুকু উন্নয়ন করেছি সেটুকু থাকবে না।
এসময় পাবনাবাসী পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল এবং পাবনা-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি। তারা উভয়ে পাবনার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং আবারও বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব করেন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-কাজিরহাট ওয়াই সিস্টেমে সেতু, ঢাকা-পাবনা ট্রেন, পাবনা মানসিক হাসপাতাল সংস্কার ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দরসহ কয়েকটি প্রকল্প চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে পাবনা প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন পাবনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী এবং জাতীয় সংসদের ডেপুুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী গালিবুর রহমান শরিফ, পাবনা-৩ আসনের প্রার্থী মকবুল আহমেদ এমপি, পাবনা-২ আসনের প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি এবং পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পাকনসহ জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
প্রতিনিধি/এমএইচএম