জেলা প্রতিনিধি
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১৩ পিএম
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনটি দীর্ঘদিন ধরে উদ্ধারের চেষ্টা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে আসনটি। দলের কেন্দ্রীয় নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা এই আসনের এমপি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খোকা আবারও এমপি হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগও এই আসনে সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সারকে মনোনয়ন দিয়েছে।
এই আসনে নৌকার প্রার্থী দিতে দীর্ঘধরে দাবি জানিয়ে আসছিল জেলা ও থানা আওয়ামী লীগ। এবার শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা না হলে লিয়াকত হোসেন খোকার কপাল পুড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আপাতত নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ১১ জন প্রার্থী। তারা হলেন, কায়সার হাসনাত (আওয়ামী লীগ), লিয়াকত হোসেন খোকা (জাতীয় পার্টি), মজিবুর রহমান মানিক (বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন), মোহাম্মদ আসলাম হোসেন (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান (বিএনএম), নারায়ণ দাস (বিকল্প ধারার বাংলাদেশ), এরফান হোসেন (স্বতন্ত্র), মারুফ ইসলাম ঝলক (স্বতন্ত্র), মো. আরিফ (মুক্তিজোট), রুবিয়া সুলতানা (স্বতন্ত্র), এ.এইচ.এম মাসুদ (স্বতন্ত্র)।
আরও পড়ুন
এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কায়সার হাসনাত ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। যদিও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মারুফ ইসলাম ঝলক ও এরফান হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, কিন্তু তাদের নিয়ে ভোটের মাঠে তেমন আলোচনা নেই।
সূত্র মতে, মহাজোটের প্রার্থী হয়ে গত ১০ বছর ধরে এই আসনের এমপি জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা। মহাজোটের প্রার্থী হওয়ায় নৌকার ভোটও তার বাক্সে গিয়েছে। কিন্তু সেখানকার আওয়ামী লীগ বারবার দাবি জানিয়ে আসছে, সোনারগাঁয়ে এবার যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়। নেতারা দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের বক্তব্যে জাতীয় পার্টির এমপির সমালোচনা করে বলেছেন, জাতীয় পার্টির এমপি থাকার কারণে সোনারগাঁয়ে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। তাই তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন সোনারগাঁয়ে নৌকার প্রার্থী দেওয়ার।
গত ১৩ অক্টোবর সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সোনারগাঁয়ের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ইঙ্গিত করে বলেন, এখানে জাতীয় পার্টির এক এমপি আছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছেন। এটি জাতীয় পার্টির সিট নয়। এই এলাকাকে ও এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে এখানকার মানুষ নৌকা চায়।
নানক আরও বলেন, জাতীয় পার্টির ভাইয়েরা বড় বড় কথা বলেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করে দেখেন কয়টি সিট পান।
ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে আনন্দে মেতে উঠেন সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ১০ বছর পর আসনটি আবার আওয়ামী লীগের দখলে আসবে। ইতোমধ্যে সোনারগাঁয়ের সর্বত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে নৌকার পক্ষে।
এদিকে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে জাতীয় পার্টি তথা লিয়াকত হোসেন খোকার শিবিরে। বিগত দিনে মহাজোটের কারণে পরপর দুইবার এমপি হয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। সেখানে জাতীয় পার্টির কোনো ভোট ব্যাংক নেই। ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও তাকে ভোট দিয়েছেন। এবার চিত্র ভিন্ন। কারণ মহাজোট ঠিক থাকলেও এবার সোনারগাঁয়ের আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় না দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী বহাল রাখলে লাঙ্গলের প্রার্থী কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বেন। নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লাঙ্গলের জয়ী হওয়া কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন সোনারগাঁয়ের মানুষ।
জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাদের ভরসা এখন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নয়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনার দয়া হলেই খোকার তরী আবার ভাসবে, না হয় ডুববে। কারণ মহাজোটকে এবারও আসনটি ছাড় দিলে লিয়াকত হোসেন খোকা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হবেন। আর ছাড় না দিলে দ্বিতীয়বারের মতো আব্দুল্লাহ আল কায়সার সংসদ সদস্য হবেন।
তবে শেষ পর্যন্ত সমাধান কী হবে তা জানতে সোনারগাঁবাসীকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওইদিন মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তাছাড়া ওইদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের আসন চূড়ান্ত ভাগাভাগি হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিনিধি/জেবি