মাহফুজ উল্লাহ হিমু
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:২৮ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের চেষ্টায় রয়েছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। তাদের পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে শমিল হয়েছেন সাবেক আমলা, পুলিশের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, ক্রীড়া ও বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। সেই দৌড়ে পিছিয়ে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। নিজ কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখার পাশাপাশি এসব চিকিৎসকরা অবদান রাখতে চান রাষ্ট্র পরিচালনায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত ১৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চারদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৩০০ আসনের জন্য ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। এতে দেখা যায়, প্রতিটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত দুই ডজন চিকিৎসক রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নানাবিধ প্রচারণা কর্যক্রমও পরিচালনা করছেন। অনেকেই গত কয়েক দফায় সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছিলেন মন্ত্রীও।
চিকিৎসকদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া কী ইতিবাচক?
চিকিৎসকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন পেশা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে শ্রেষ্ঠ মেধাবীরা দেশ পরিচালনায় অংশ নিলে তা দেশ ও জাতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি মনে করি এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তারা চিকিৎসা পেশার মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিয়েছেন। এখন দেশ সেবায় মানুষের জন্য আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে চান। এটি ইতিবাচক, তাদের মতো মেধাবিরা দেশ পরিচালনায় আসলে জাতি উপকৃত হবে। আর তাদের সবাই তো মনোনয়ন পাবেন না। কেউ কেউ পাবেন। রোগী দেখার মাধ্যমে তারা অল্প কিছু সংখ্যক মানুষকে সেবা দিতে পারেন। এর মাধ্যমে তারা আরও অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। তারা দেশের জন্য ভালো অবদান রাখতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
বর্তমান চিকিৎসক সংসদ সদস্যরা ধারা অব্যহত রাখতে চান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চিকিৎসকদের অনেকেই বর্তমানে সংসদ সদস্য। এর মধ্যে অনেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন বা অতীতে ছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম চাঁদপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এই আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ঢাকা-১৯ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। সাতক্ষীরা-৩ আসনের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দফায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথিতযশা এই চিকিৎসক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যও মননোয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মনোনয়ন দৌড়ে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পুনরায় তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। অপর চিকিৎসক সাংসদ ডা. সৈয়দা নূর লিপি আবারও কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা তিনি। তার ভাই, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার আসনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর- ৪, ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, ডা. মো. আবদুল আজিজ সিরাজগঞ্জ-৩, ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নাটোর-৪, ডা. মো. নাসির উদ্দিন যশোর-২ ও ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সকলেই পুনরায় মনোনয়ন লাভের আশায় রয়েছেন।
মনোনয়ন দৌড়ে চিকিৎসক নেতারা
রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), আওয়ামী লীগের চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ (স্বাচিপ) বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলে।
ঢাকা-৭ আসনে মনোনয়ন চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ আসন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), সাবেক সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান রাজবাড়ী-২, স্বাচিপের সাবেক মহাসচিব ডা. এমএ আজিজ ময়মনসিংহ-৪, বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী সিলেট-৩, স্বাচিপের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. রউফ সরদার নরসিংদী-৪, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. শহীদ উল্লাহ খুলনা-৬, ডা. নজরুল ইসলাম পিরোজপুর-৩, বিএমএ খুলনা বিভাগীয় সভাপতি ডা. বাহারুল আলম খুলনা-২ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এমএইচ/এমএইচএম