images

রাজনীতি

একই আসনে নৌকা চান হাজী সেলিম পরিবারের তিনজন

কাজী রফিক

১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৬ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে ক্ষণে ক্ষণে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন হাজী মো. সেলিম। ঢাকা-৭ আসনের এই সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিলগ্নেও আলোচনায়। এবার নিজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পাশাপাশি দুই ছেলেও একই আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের অন্দরে নানা আলোচনা হচ্ছে।

রোববার (১৯ নভেম্বর) প্রতিনিধি পাঠিয়ে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনটি ফরম সংগ্রহ করে সেলিম পরিবার।

এর মধ্যে একটি নেওয়া হয়েছে হাজী মো. সেলিমের নামে। একটি তার বড় ছেলে সোলায়মান সেলিম এবং অপরটি ছোট ছেলে ইরফান সেলিমের নামে। তিনটি ফরমই তোলা হয়েছে ঢাকা-৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে।

সোলায়মান সেলিমের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওসার হাবিব ঢাকা মেইলকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

একই পরিবার থেকে তিনজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তোলার বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, হাজী সেলিমের বয়স হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি দুদকের মামলার আসামি। ঢাকা নদীবন্দর এলাকার বিপুলসংখ্যক জায়গা দখলের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। সব মিলে 'ক্লিন ইমেজ' না হওয়ায় এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন এই সংসদ সদস্য৷

ফলে নিজের জায়গায় নিয়ে আসতে চান বড় ছেলে সোলায়মান সেলিমকে। ছেলেকে সংসদ সদস্য বানাতে চান হাজী সেলিম, বিষয়টি অনেক আগেই সামনে এসেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো উপলক্ষ পেলেই নিজের সঙ্গে ছেলে সোলায়মান সেলিমের ছবি দিয়ে বিপুলসংখ্যক পোস্টার, ব্যানার করে প্রচার চালিয়ে আসছেন হাজী সেলিম। যা ঢাকা-৭ আসনের সীমানা পেরিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে৷

তবে সোলায়মান সেলিম ব্যবসায়ী। তার মনোনয়ন আটকে যাওয়ার মতো বেশ কিছু দিক আছে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

বাড়তি 'ব্যাকআপ' হিসেবে সেলিম পরিবার মনোনয়ন ফরম নিয়েছে ছোট ছেলে ইরফান সেলিমের নামেও।

SS1
দুদকের মামলায় কিছুদিন কারাভোগ করেন হাজী সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে হলে তাকে আগে কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, 'এই কাজটা (একই আসনে একই পরিবারের তিনজন মনোনয়ন ফরম নেওয়া) সংগঠনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত। এগুলো উচিত না।'

হাজী সেলিম পরিবার নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা

ঢাকা জেলায় সংসদীয় আসন মোট ২০টি। এরমধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগ ও দুটি আসনে আছে মহাজোটের সংসদ সদস্য। ঢাকার এই এমপিরা আলোচিত-সমালোচিত নিজ নিজ আসনে। তবে জাতীয়ভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে সেলিম পরিবার।

২০২০ সালের অক্টোবরে এক নৌ কর্মকর্তাকে মারধর করেন হাজী সেলিমপুত্র ইরফান সেলিম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই কাউন্সিলর সে সময় র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। হত্যাচেষ্টা ও অস্ত্র আইনে দুই মামলায় হয়েছিল তার নামে।

২০২৩ সালে আবার জাতীয়ভাবে আলোচনায় আসে সেলিম পরিবার৷ এবার হাজী সেলিমের পুরনো মামলা। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে লালবাগ থানায় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালে বিচারিক আদালত তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিম হাইকোর্টে আপিল করেন।

হাইকোর্ট ২০১১ সালে তাকে খালাস দেন। পরে সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।

২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে রায় দেন। ওই রায়ে হাজী সেলিমের আপিল আবেদনটি হাইকোর্টকে নতুন করে শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর মামলাটির আর শুনানি হয়নি।

২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের সাজা থেকে খালাস পান হাজী সেলিম। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

২০২২ সালের ৯ মার্চ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। এতে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

বেঁধে দেওয়া সময়ে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

SS2
র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন সেলিমপুত্র ইরফান। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন হাজী সেলিম। আদালতের দণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি দেশ ছাড়ায় শুরু হয় বিতর্ক। এ সময় গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি বড় আকারে উঠে আসে৷ পরে ৫ মে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন হাজী সেলিম।

২২ মে হাইকোর্টের রায় অনুসারে আত্মসমর্পণের পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে ডিভিশন ও সুচিকিৎসার আবেদন জানান। বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

২৪ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই দণ্ডের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়। একইসঙ্গে জামিনের আবেদন করেন হাজী মো. সেলিম।

এ সময় তার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে সমালোচনা তৈরি হয়। অনেকেই সে সময় মত দেন, কারাগার এড়াতে অসুস্থতার আশ্রয় নিয়েছেন এই সংসদ সদস্য।

এছাড়া ২০১৯ সালে ঢাকা নদীবন্দরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ অভিযানে ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্গত এলাকাসহ অন্যান্য আসনেও হাজী সেলিমের অবৈধ স্থাপনা ও দখল পাওয়া যায়।

নদীর জায়গা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়েছিলেন হাজী মো. সেলিম। পরে সংস্থাটি সেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে।

কারই/জেবি