images

রাজনীতি

সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন বিতর্ক

কাজী রফিক

১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২০ এএম

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আলোচিত-সমালোচিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। জাতীয় দলে ১৭ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন যেমন তার রয়েছে, একই সঙ্গে রয়েছে বিতর্ক। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে এবার রাজনীতিতে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় আছেন এই খেলোয়াড়।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। প্রথম দিনেই হাজারের বেশি ফরম বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীনরা। তার মধ্যে রয়েছেন সাকিব আল হাসানও।
 
নিজে সশরীরে উপস্থিত না হলেও তার পক্ষে তার স্বজনরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে একটি-দুটি নয়। মোট তিনটি আসন থেকে এক যোগে ফরম নিয়েছেন সাকিব। মাগুরা-১, মাগুরা-২ ও ঢাকা-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চান তিনি।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার পরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রচার হয়। গণমাধ্যমের পর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কোনো প্রকার অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির উপর মোবাইল নম্বর ও বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ ৩টি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

 


আলোচনায় আসে সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন ফরম তুলতে পারার যোগ্যতা নিয়ে। কারণ এবার মনোনয়ন বিক্রির ক্ষেত্রে শর্ত বেঁধে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত ১৬ নভেম্বর বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কোনো প্রকার অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির উপর মোবাইল নম্বর ও বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ ৩টি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

পুরোদস্তুর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের যে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তা নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগেরই বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান পদধারী নেতা।

সামনে এসেছে সাকিব আল হাসানের ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের একটি পোস্ট। যেখানে সাকিব বলেছিলেন, আমি রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছি না এবং আমার জীবনে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর সাকিবের এই পোস্ট ফেসবুকে ভাইরালে পরিণত হয়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেত্রী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, প্রার্থীর নাম: সাকিব আল হাসান। আসন: ঢাকা-১০, মাগুরা-০১ ও ০২। শুনলাম নমিনেশন ফরম তুলতে সাবেক/রানিং মিলিয়ে ৩টি সাংগঠনিক পরিচয় থাকতে হবে! তা সাকিব ভাইয়ের পরিচয়গুলো কেউ জানেন?

জানা গেছে, সাকিব আল হাসানের প্রতিনিধির কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করার আগে দায়িত্বপ্রাপ্তরা আলোচনা করেছেন।

সেখানে টিম লিডার ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শাহাবুদ্দিন ফরাজী। এই টিমের সদস্য ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকী নাজমুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের যিনি টিম লিডার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কার্যনির্বাহী সদস্য। তার সঙ্গে তাৎক্ষণিক পরামর্শ করেই মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মনোনয়ন নিতে তিনটা পদ থাকতে হয়, এ বিষয়ে আমার ধারণা হলো, অনুপ্রবেশকারী ঠেকানোর জন্য এটা করা হয়েছে। সাকিব আল হাসান একজন সেলিব্রিটি মানুষ, সারা বিশ্বের নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডার।

নাজমুল জানান, সাকিব আল হাসানকে রাজনৈতিকভাবে না দেখে, তার ব্যক্তি পরিচয় ও জনপ্রিয়তাকে দেখা হয়েছে।

সাবেক এই ছাত্রনেতা মনে করেন, সংসদ গঠনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, আমলা ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ঠাঁই হলে সংসদ সৃষ্টিনন্দন ও গ্রহণযোগ্য হয়।

সম্প্রতি একই কথা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। গত ২১ জুলাই নেত্রকোণা-৪ আসনে সাবেক আমলা সাজ্জাদুল হাসানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘কে আমলা, কে ব্যবসায়ী, এত কিছু দেখতে গেলে তো... এদেশে অনেক আমলাই আছেন, অনেক ব্যবসায়ী আছেন, এরা কি রাজনীতি করতে পারবে না?’

কারই/এএস