কাজী রফিক
১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১০ এএম
দেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আজই। কিন্তু নির্বাচনের যে আমেজ সেটার দেখা নেই এখনো। কারণ নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির মধ্যে সংঘাত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতি ঘোষণা করা দেশটি বাংলাদেশের প্রধান তিনটি দলের কাছে রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসার বার্তা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে এই চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের ব্যাপারে সব দলকে সতর্কও করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তৎপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠিকে চাপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে দেশটি মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করতে চাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারাই বাধা হবে তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বে। এছাড়া নিতে পারে আরও নানা ব্যবস্থা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে না বললেও শর্তহীন সংলাপের এই আহ্বানকে বাড়তি চাপ হিসেবে দেখছে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জোর সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচনী দৌড়ঝাঁপ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় সংলাপ আয়োজনের সুযোগ কতটুকু আছে তাও চিন্তা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলা হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে কী প্রতিক্রিয়া আসে সেটাও দেখতে চায় ক্ষমতাসীন দল।
সংলাপ সম্পর্কে মনোভাব জানতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংলাপে তাদের আপত্তি নেই। তবে বিএনপির কার সঙ্গে সংলাপে বসবে তা নিয়ে তাদের প্রশ্ন আছে। কারণ দলের প্রধান তিন নেতার কেউই এখন সংলাপের পর্যায়ে নেই। এছাড়া বিএনপির চলমান অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হচ্ছে তাও বন্ধের কথা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে সংলাপের চিঠি এখনো পাননি বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের কূটনৈতিক কোরের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলার পর তারা জানিয়েছেন, সংলাপের আহ্বান জানানো কোনো চিঠি এখনো পাননি। চিঠি হাতে পেলে দলটি নেতারা সিদ্ধান্ত জানাবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৫ নভেম্বর) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জোর সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচনী দৌড়ঝাঁপ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় সংলাপ আয়োজনের সুযোগ কতটুকু আছে তাও চিন্তা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলা হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে কী প্রতিক্রিয়া আসে সেটাও দেখতে চায় ক্ষমতাসীন দল।
সংলাপ ইস্যুতে কী বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে কোনো সংলাপ হতে হলে সে সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ। এখানে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ অযাচিত।
ঢাকা মেইলকে শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কথা হলো একটাই এবং পরিষ্কার। বাংলাদেশের যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, আমি মনে করি, এখানে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ অযাচিত। সংলাপ আমরা করব কার সাথে বা কাদের সাথে? তাদের নেতা কে?’
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। আর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে কারাগারে আছেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এমন অবস্থায় সংলাপ হলেও তাতে বিএনপির নেতৃত্ব কে দেবেন।
অবশ্য বিএনপি এরইমধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। সোমবার জিএম কাদেরের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে জাপা নেতাদের হাতেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, পরবর্তী সময়ে অবরোধকে কেন্দ্র করে সহিংসতার বিষয়টিও মাথায় রাখছে আওয়ামী লীগ।
এই প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘কাদের সাথে সংলাপ করার কথা তারা বলছে? বিএনপি ২৮ তারিখে সভা-সমাবেশ করার সময় যে ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলো দেখলাম, সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার, হাসপাতালে আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দেওয়া; এগুলোর জন্য কি একবারও তারা ক্ষমা চেয়েছে? সেই দলের সাথে কীভাবে সংলাপে বসার কথা বলে?’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক এই সম্পাদক বলেন, ‘আমার দেশে সংলাপ হবে নাকি হবে না, আমার দেশের জনগণকেই এটা ঠিক করতে দেন। এটা নির্ধারণ করবে এদেশের জনগণ। এটা কোনো বিদেশি, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র, আমাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আছে সে রকম কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা আশা করতে পারি না। বাংলাদেশে যেকোনো সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এ রকম পরামর্শ বহুত আসে। আসুক, আমরা দেখি পরামর্শ যেগুলো আসে সেগুলো প্রয়োগ করা যায় কি না, বাস্তবতা দেখতে হবে।’
মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের সংলাপে আপত্তি নেই। আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না। গণতন্ত্র সমুন্নত করতে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। সেখানে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয়, আমরা সেটা করব। কিন্তু কার সঙ্গে করব, সেটা বিবেচনার বিষয় আছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিএনপি কিছুই বলছে না। তাদের বিষয়ে কথা বলছে বিদেশিরা। যাকে তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বিদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন। তার মতে, বিএনপি সংলাপ করতে হলে তাদের আগে ‘ভায়োলেন্স’ থামাতে হবে।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো চিঠি পাইনি। পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।’
আরাফাত বলেন, ‘সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে সংলাপের কথা বলার আগে বিএনপিকে বলতে হবে- ভায়োলেন্স থামাও। তারা ভায়োলেন্স করলে গ্রেফতার হবে। তাহলে ডায়ালগটা কার সাথে হবে?’
কারই/এএস