images

রাজনীতি

মনোনয়ন দিতে কিভাবে জরিপ চালায় আওয়ামী লীগ?

কাজী রফিক

২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আগামী মাসেই। এমনকি নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখও ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে।

দলের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার টেবিল থেকে তৃণমূলে আলোচনার মূল বিষয়— কারা পাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকিট। কারণ ৩শ আসনে নৌকা-প্রত্যাশীর সংখ্যা চার হাজারের মতো। তবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছে— মনোনয়ন দেওয়া হবে জরিপের ফলাফল দেখে। যদিও কোন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ চালায় আওয়ামী লীগ তা অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। তবে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এই জরিপ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার কারা থাকেন তাও জানা গেছে নেতাদের সঙ্গে আলোচনায়।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, কয়েকটি ধাপে করা হয় প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ। আওয়ামী লীগ ‘সিঙ্গেল সোর্স’ থেকে তথ্য নেয় না। একাধিক সূত্রের উপর নির্ভর করেই জরিপ চালানো হয়। প্রতি ছয় মাস পরপর চলে এই জরিপ।

এর আগে একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিতর্কিত নেতা ও সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, সবার এসিআর (মূল্যায়ন প্রতিবেদন) প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। সেই প্রতিবেদন দেখে দলীয় প্রধান মনোনয়ন দেবেন বলে নেতাদের সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের এই সাধারণ সম্পাদক।

সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রোববার (২২অক্টোবর) দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে জরিপ দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মনোনয়ন যাকে দেওয়া হবে তার পক্ষে বাকিদের কাজ করারও বার্তা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

 

>> আরও পড়ুন:

‘জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে’

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ রোববার (২২ অক্টোবর) সংসদ ভবনে ক্ষমতাসীন দলের সভাকক্ষে সংসদীয় দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এবার বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা আছে তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

দলীয় সূ্ত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায় থেকে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনও বিশেষভাবে দেখা হয় এই জরিপের স্বার্থে। এছাড়া সংসদীয় আসনের অন্তর্গত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, নির্দলীয় সমাজকর্মীদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, আওয়ামী লীগের জরিপটা হয় একেবারেই তৃণমূল পর্যায় থেকে। প্রাইমারি স্কুলের টিচার, হাইস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে জরিপ চালানো হয়। যারা সামাজিক কাজ করেন, তাদের দিয়ে জরিপ চালানো হয়। একেকবার একেকজনের মাধ্যমে।

ছয় মাস অন্তর অন্তর যে জরিপ হয়, তার উপর ভিত্তি করেই এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে শতাধিক সংসদ সদস্য মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক শীর্ষ নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে প্রায় পঞ্চাশজন রানিং এমপি মনোনয়ন পাননি। এবার সেই সংখ্যাটা দ্বিগুণ হতে পারে। সবার আমলনামাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। আমি নিজেকে যত বড় নেতাই প্রমাণ করার চেষ্টা করি না কেন, কোনো লাভ নাই। তার কাছে সঠিক আমলনামাটা আছে।

জানা গেছে, কার জনপ্রিয়তা কতটুকু, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কতটা জনসম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে— এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয় জরিপে।

পাশাপাশি একেকটি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে থাকা একাধিক নেতার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কেউ জড়াচ্ছে কিনা— এসব দিকও দেখা হচ্ছে৷

এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন নেতাকর্মীদের একাংশ। রাজধানীসহ সারাদেশেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। একেকটি সংসদীয় আসনে ১০ থেকে ৪০ জন পর্যন্ত মনোনয়ন-প্রত্যাশী নিজেদের জানান দিচ্ছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশা করে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের একাংশ আবার সরকারের উন্নয়ন চিত্রকে পুঁজি করে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করছেন।

রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতাদের পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এক্ষেত্রে ছবির পাশাপাশি অনেক নেতাই ভিডিও প্রচারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

অনেকেই দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। চালাচ্ছেন নানামুখী দেন দরবার।

এদিকে মনোনয়ন দৌড়ে পুরনোদের পাশাপাশি এবার উঠে এসেছে বেশকিছু নতুন মুখ। তাদের মধ্যে উপ-কমিটির নেতা, সাবেক আমলা, ব্যবসায়ীও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে সংসদ নির্বাচন করতে চায়। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার।

কারই/জেএম