বোরহান উদ্দিন
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪৩ এএম
• নয়াপল্টনে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি
• যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও মাঠে থাকবে
• পূজার সময় সাময়িক বিরতি
• দাবি মানাতে যা লাগবে তাই করবে বিএনপি: মঈন খান
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার সংসদ নির্বাচনের আগে ভিন্নধারার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে কঠোর কর্মসূচি বলতে যা বোঝানো হয় সে পথে এখনো হাঁটেনি দলটি। যদিও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করে আসা বিএনপি দাবি মানতে সরকারকে ‘শেষ সুযোগ’ দিতে চায়। যে কারণে এখনই হরতাল-অবরোধ কিংবা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে না দলটি। আসছে দুর্গাপূজার ছুটির পর সমাবেশ করে সেখান থেকে হার্ডলাইনে যেতে চায় বিএনপি। তবে তার আগে বুধবার (১৮ অক্টোবর) নয়াপল্টনে পূর্বষোঘিত গণসমাবেশে বড় শোডাউন করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে এক দফা আন্দোলনের চলমান কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করতে আরও কয়েকটা দিন সময় নিতে চান দায়িত্বশীল নেতারা।
এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মধ্য সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুর্গাপূজার পর শুরু হবে বিরোধী জোটের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন। সেই ধাপের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। যাতে যুক্ত থাকছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আমরা এক দফা আন্দোলনে রয়েছি। পূজার সময়টা সাময়িক বিরতি চলবে। এরপর একই ধরণের কর্মসূচি আসবে। সমাবেশের মতই কর্মসূচি থাকবে। এখনও দিন তারিখ ঠিক করা হয়নি। আলোচনা হয়েছে।'
আবদুল মঈন বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ নেই, তাদের ওপর জনগণের আস্থা উঠে গেছে। আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। সেজন্য যে ধরণের কর্মসূচি দরকার তাই দেওয়া হবে। '
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঘণ্টা বেঁধে আল্টিমেটাম দেওয়ার পথে হাঁটতে চায় না বিএনপি। তবে আজকের সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের জন্য চূড়ান্ত একটি বার্তা দিতে চায় দলটি। একইসঙ্গে রাজধানীতে আরও একটি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হবে। সেই মহাসমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ হতে পারে ২৭ বা ২৮শে অক্টোবর। সারা দেশে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনে মহাসমাবেশে বড় জমায়েত করা হবে। সেই মহাসমাবেশ থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বিএনপি মহাসচিব।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, প্রথমে সচিবালয়মুখী পদযাত্রা কিংবা ঘেরাও দিয়ে শুরু হতে পারে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি। এরপর ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি, আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী রোডমার্চ, সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে।
জানা গেছে, তফসিলের আগেই রাজপথে সরকারকে কাবু করতে চায় বিএনপি। নভেম্বরের শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তাই এই সময়ের মধ্যে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায় তারা। তবে পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচির ধরন পাল্টানো হবে। সরকারকে বাধ্য করতে আসতে পারে আরও কঠোর কর্মসূচি।
জানা গেছে, রাজনৈতিক সমাধান না হলে তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই হরতাল বা ঢাকা অবরোধের মতো হার্ডলাইনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ঢাকা মেইলকে জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে বিএনপির কোনো কর্মসূচি থাকবে না। চূড়ান্ত কর্মসূচি শুরু হবে পূজার ছুটির পর। সবগুলো কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক।
তবে বুধবারের (১৮ অক্টোবর) সমাবেশে কী ঘোষণা দেওয়া হবে সেটা চূড়ান্ত হয়নি। এই বিষয়টি বুধবার সকালে হয়তো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহাসচিবকে জানাবেন। মহাসচিব হয়তো সমাবেশ শেষে সেটা ঘোষণা করবেন। সেক্ষেত্রে সরকারকে কোনো আল্টিমেটাম দেওয়া হতে পারে এমন গুঞ্জন আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এদিকে বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক সংগঠনগুলোও আজ রাজধানীতে সমাবেশ করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ, সমমনা ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, এলডিপি ও লেবার পার্টি নিজ নিজ দল এবং সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করবে। বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, বেলা ৩টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে ১২ দলীয় জোট, বিকাল ৫টায় আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, বেলা ১১টায় ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে লেবার পার্টি, বেলা তিনটায় এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি সমাবেশ করবে।
এসব সমাবেশ থেকে কী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা। তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বুধবার সকালে হয়তো বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম থেকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করে পাঠাবে।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ধাপের লাগাতার রোডমার্চ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। গত ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের সর্বশেষ রোডমার্চে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। যা আজকের নয়াপল্টনের সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
জানাতে চাইলে এনডিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে আমরা মাঠে থাকব।
বিইউ/এমআর