কাজী রফিক
১১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৬ এএম
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকলেও এখনো সংসদে বসা হয়নি এমন নেতার সংখ্যা কম নয়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের অনেকের কপাল খুলতে পারে। আবার কপাল খুলতে পারে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার, যারা এর আগে সংসদে থাকলেও বর্তমান সংসদে নেই।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ৮১ সদস্যের। এরমধ্যে সংসদ সদস্য হওয়ার আলোচনায় বেশিরভাগই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
জানা গেছে, সংসদের হাতছানি পাচ্ছেন সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা। এরমধ্যে অনেকেরই রয়েছে গত সংসদে মনোনয়ন না পাওয়ার আক্ষেপ। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পাওয়ার প্রতিক্রিয়া বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, খুব খারাপ লেগেছিল। কয়েক ঘণ্টা কথা বলিনি। চোখে পানি চলে এসেছিল। তবে দলের সিদ্ধান্ত। দল যা করেছে বুঝেই করেছে। আশা করি, এবার সেটা ঘুচবে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ১৭ জন। তাদের মধ্যে ১৬টি পদই পূর্ণ রয়েছে। খালি আছে একটি। এই ১৬ জনের মধ্যে ৮ জন বর্তমান সংসদের সদস্য। অপর ৮ জনের মধ্যে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। বাকি ৭ জনের মধ্যে ৪ জন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। তাদের সবাই সাবেক এমপি।
এরমধ্যে কাজী জাফরুল্লাহ আলোচনায় রয়েছেন। তবে ঠিক কোন আসন থেকে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন সে বিষয়ে স্পষ্ট জানা যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর থেকে উঠে আসা এই বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ঢাকার যেকোনো আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে পারেন।
ঢাকা-৭ আসন থেকে নৌকার মাঝি হতে চান ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন। এই আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি দল করি। আমি আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে আজকে এত বড় হইছি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা অবশ্যই করি। আজকে যিনি (হাজী মো. সেলিম) আছেন, তার কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তার অবস্থান, কি করছেন, কত বছর সাজাপ্রাপ্ত, পার্লামেন্টে যায়, মানুষ হাসে না?
জানা গেছে, হাজী সেলিম এবার আর নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তার জায়গায় নৌকার মনোনয়ন চাইবেন সেলিমপুত্র ইরফান সেলিম।

ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত নানক এবার দলের প্রার্থী হতে পারেন বলে দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে৷
যদিও আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ মনে করেন, এবারও দলের মনোনয়ন জুটবে না নানকের।
ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান৷ আলোচনা রয়েছে, ফরিদপুর কিংবা ঢাকা থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি।
নিজের মনোনয়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি এই নেতা। ঢাকা মেইলের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহ জানেন, আর জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চারজন। তাদের মধ্যে তিনজনই সংসদ সদস্য। এরমধ্যে ডা. দীপু মনি ও ড. হাছান মাহমুদ বর্তমান সরকারের মন্ত্রী। মাহবুবউল আলম হানিফ মন্ত্রী না হলেও সংসদ সদস্য।
তবে আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম সাবেক সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটেনি মনোনয়ন। তবে এবার মনোনয়ন পেতে পারেন বলে রয়েছে জোর আলোচনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। তিনিই যাকে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে রাখবেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ রয়েছে আটটি। এবার যারা সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের মধ্যে মির্জা আজম ছাড়া কেউ সংসদের সদস্য নন। তবে সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন।
সাবেক এমপিদের মধ্যে বিএম মোজাম্মেল হকের মতো নেতাও আছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, শরিয়তপুর-১ আসন থেকে পুনরায় মনোনয়ন জুটতে পারে বিএম মোজাম্মেলের।
একই ধারণা করা হচ্ছে এসএম কামাল হোসেনের বিষয়ে।

মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা পঞ্চাশ জনের বেশি রানিং এমপি মনোনয়ন পাইনি। এবার সে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হতে পারে। এখানে হতাশার কিছু নেই। দলের প্রয়োজনে সবাইকে কাজ করতে হবে। এখানে দল গুরুত্বপূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেখানে রাখবেন, আমরা সেখানেই দায়িত্ব পালন করব।
অন্যদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বরিশাল থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফজাল হোসেন বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে কে কেন্দ্রীয় নেতা, কে তৃণমূল নেতা সেটা দেখা হয় না। জনপ্রিয়তা, জনগণের সাথে যোগাযোগ কার বেশি সেটাই বড় বিষয়। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা ভালো জানেন, কে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য।
জানা গেছে, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া সুজিত রায় নন্দিও পাচ্ছেন সংসদে বসার হাতছানি। তবে সেটি কোন আসন থেকে হতে পারে তা নিশ্চিত নয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের দিকে বাড়তি নজর ক্ষমতাসীনদের। ফলে সেখানেই কোনো আসনে জায়গা পেতে পারেন নন্দি।
কারই/জেএম