images

রাজনীতি

ইশতেহার তৈরিতে কেন জনমত চায় আওয়ামী লীগ?

কাজী রফিক

০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য তারিখও ঘোষণা করেছে। সেটি বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এবার ইশতেহার তৈরির আগে জনমত যাচাই করবে দলটি। যদিও সর্বশেষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের আগে কোনো জনমত চায়নি দলটি।

নির্বাচনি ইশতেহারের জন্য জনমত চেয়ে ইতিমধ্যে গণবিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ স্বাক্ষরিত এই গণবিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

 

ইশতেহারে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং আবারও সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ কী কী নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে— জনমতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও কমিউনিটি লিডারদের কাছে এ বিষয়ে মতামত চেয়েছে দলটি।

 

কেন জনমত চাওয়া হয়েছে? এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণমানুষের দল আওয়ামী লীগের ইশতেহার কেবলমাত্র একটি দলীয় ইশতেহার নয়, এটি প্রকৃত অর্থে গোটা জাতির ইশতেহার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে সেটি গুরুত্বপূর্ণ।’

 

ইশতেহারে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং আবারও সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ কী কী নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে— জনমতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও কমিউনিটি লিডারদের কাছে এ বিষয়ে মতামত চেয়েছে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ইশতেহার উপ-কমিটির সদস্য ও দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত ঢাকা মেইলকে বলেন, কমিটির প্রথম বৈঠকে ইশতেহার কেমন হতে পারে, এতে কী কী থাকবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিই— আমরা সাধারণ মানুষের মতামত নেব। সবাই এতে সম্মত হয়।

মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, দিন যত যাবে তত নতুনত্ব আসবে। যাদের জন্য ইশতেহার, আমাদের মনে হয়েছে, সেই ইশতেহারে তাদের মতামত থাকা দরকার। তাই আমরা জনগণের মতামত চাই।

জনমতের মাধ্যমে নতুন কিছু বিষয় উঠে আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগ জনবান্ধব ইশতেহার প্রণয়ন করে এবং সেই ইশতেহার পূরণও করে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় গণমানুষের দল, গণমানুষের মুক্তির মাধ্যম। গত নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার ছিল তা পূরণ হয়েছে, বাস্তবায়িত হয়েছে, বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং বাকিটা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও আছে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহার নিয়ে জনমত চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জনগণকে নিয়েই যে রাজনীতি, এটি তার একটি উদাহরণ।

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ইশতেহারে জনগণের মতামতের একটি প্রতিফলন থাকা দরকার।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার একটি অনন্য দলিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইশতেহারের প্রত্যেকটি লাইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। অতীতে করেছে, বর্তমানে করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

আফজাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি জনসম্পৃক্ত সংগঠন। আগামী যে নির্বাচন, সে নির্বাচনের ইশতেহারে জনগণের মতামতের একটি প্রতিফলন থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ সেটিকে গুরুত্ব দেয় বিধায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এ কাজটি করা হচ্ছে৷

গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির প্রথম সভা হয়৷ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতের দান। আমরা গত বছরের নির্বাচনি ইশতেহার করেছি। ইশতেহার পড়ে কয়জন? বুলেট পয়েন্টে করুন ইশতেহার। কোনো দরকার নেই বিশাল একটা পুস্তক রচনা করার। এ ধরনের ইশতেহার কেউ পড়বে না। মানুষের সময়ও নেই।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্টনেস কীভাবে আসবে, কীভাবে এর বিকাশ ঘটবে— এই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে হবে।

ইশতেহার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, এখানে জুঁই ফুলের গান গেয়ে লাভ নেই। আমার সামনে এই ২৩ নম্বরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ, তার সামনে দাঁড়িয়ে আমি জুঁই ফুলের গান গাইব? আমাকেও অ্যাকশনে যেতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর— ওই রকম ইশতেহার তৈরি করুন। ২০৪০ সাল মাথায় রাখতে হবে।

 

ইশতেহারে কয়েকটি লক্ষ্য থাকবে বলেও জানা গেছে৷ এর মধ্যে ২০৪১ সালের লক্ষ্য স্থান পাবে এবারের ইশতেহারে। এছাড়া আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনাও থাকবে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে। পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরিকল্পনাও থাকবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

 

 

যা থাকছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে—

২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ইশতেহারের সঙ্গে ২০২৩-২৪ সালের ইশতেহারে ভিন্নতা যেমন থাকবে, তেমনি ধারাবাহিকতাও থাকবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে৷ জনমতের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দিক সংযোজন ও বিয়োজন হতে পারে।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ইশতেহার দিয়েছিল। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহার ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

আর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীনদের ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের রূপরেখা থাকছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এবারের ইশতেহারে ‘বড় ধরনের কিছু মৌলিক পরিবর্তন আসছে’ বলেও জানা গেছে। তা পরিবর্তনগুলো কি সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

ইশতেহারে কী কী থাকবে তা উপ-কমিটির পরবর্তী বৈঠকগুলোতে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সংশ্লিষ্টরা।

ইশতেহারে কয়েকটি লক্ষ্য থাকবে বলেও জানা গেছে৷ এর মধ্যে ২০৪১ সালের লক্ষ্য স্থান পাবে এবারের ইশতেহারে। এছাড়া আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনাও থাকবে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে। পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরিকল্পনাও থাকবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

কারই