নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৯ এএম
ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোতে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সব দলেই চলছে নির্বাচন কেন্দ্রিক দল পুনর্গঠন। এর মধ্যে সরকারবিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়কসহ বিভিন্ন দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করলেও অভ্যন্তরে দল ও প্রার্থী প্রস্তুত করছে নির্বাচনের জন্য।
আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বিএনপি। দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনদের প্রধান এই প্রতিপক্ষ দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ‘যেকোনো প্রক্রিয়ায়’ রাজনৈতিক অঙ্গনে সমঝোতা হলে সঙ্গে সঙ্গেই যেন নির্বাচনের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়া যায় সেজন্য পূর্বপ্রস্তুতি চলছে দলের ভেতরে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান নিজেই এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে— ইতিমধ্যে ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের। তাদেরই প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিটি এলাকায় প্রার্থীর অবস্থান, রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন কি না ও এলাকায় বর্তমান প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে চলছে এসব কার্যক্রম।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন প্রতি সপ্তাহে সাংগঠনিক, ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। কখনো সবাইকে নিয়ে আবার কখনো নির্দিষ্ট বিভাগ বা জেলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সব সময় নির্দেশনা দিচ্ছেন, যাতে সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সমস্যা না হয়।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। দলটির সিনিয়র এই নেতা অবশ্য বলছেন— বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। সে হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে সরকারের দাবি আদায় মাত্রই নির্বাচনের মাঠে নেমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন সর্বোচ্চ সংখ্যক সভা করেছেন। বিষয়টি দলকে আরও চাঙ্গা করে তুলছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন-সম্পৃক্ততা বাড়াতেও সহায়তা করছে।
আসাদুল হাবিব দুলু। বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, দলের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় করা তা যাচাই-বাছাই চলছে। প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ মাত্রই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
দল পুনর্গঠন তৎপরতা
কথা হয় বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন একাধিক নেতার সঙ্গে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে— এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৬টি জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে। জেলাগুলোতে নতুন কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন তারেক রহমান। সম্মেলনগুলোতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন তিনি। এছাড়া কমিটি গঠনের জন্য সম্ভাব্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি নিজেই।
নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট জেলা ও মহানগর, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও চাঁদপুরসহ ৩৬টি জেলায় সক্রিয় ও নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেন— এমন নেতাদের কমিটিতে আনা হয়েছে। এছাড়া নতুন সম্মেলনের জন্য নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জসহ আরও কিছু জেলায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।
দলের নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক বিভাগীয় সমাবেশগুলো শেষ হওয়ার পর দল থেকে অনেক নেতাকে কর্মসূচি সফল করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রশংসা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, অনেকের প্রশংসামূলক চিঠিতে নির্বাচনী আসনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন চিঠি পাওয়া নেতাদের নির্বাচনী প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, বয়সের ভারে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না বা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন- এমন নেতাদের বাদ দিয়ে ২০১৮ সালে মনোনয়নপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অতীতে নির্বাচন করেছেন এবং যাদের ইমেজ ভালো ও জন-সম্পৃক্ততা আছে তারাও বিবেচনাতে থাকছেন। দল তাদের খুঁজে বের করছে।
সমমনা দল ও জোট সঙ্গীদের নিয়ে বিএনপির ভাবনা
তারেক রহমানের ঘোষণা অনুযায়ী ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে আন্দোলন সঙ্গীদের নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করবে তার দল। ধারণা করা হচ্ছে— বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আন্দোলন সহযাত্রীদেরও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
দলীয় নেতাদের ধারণা- আন্তর্জাতিক চাপে ‘শেষ পর্যন্ত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হবে’ এবং তাতে প্রধান দুই দলের সায় থাকবে।
যদিও বিএনপি অটল সরকারের পদত্যাগের দাবিতে। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার প্রধানকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনের বিষয়ে অনড় আওয়ামী লীগও।
তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হলে বা সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে পারলে যে নির্বাচন হবে তাতে জোট ও সমমনাদের জন্য অন্তত ১০০ আসন ছেড়ে দিতে হবে- এমন আলোচনাও আছে বিএনপিতে।
এসব বিষয় নিয়ে সমমনা ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকার দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে— এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমমনা দলগুলো থেকে ‘কোয়ালিটি প্রার্থী’ কারা হতে পারেন সে সম্পর্কেও ধারণা নিচ্ছে দলটি।
আবার নেতাদের এক অংশ মনে করছেন, আন্দোলন আর আন্তর্জাতিক চাপে’ সরকারি দলকে রাজনৈতিকভাবে বিপদে ফেলতে এখনকার সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বিএনপিতে ঝুঁকতে পারে। পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপির নির্বাচনী মাঠে আলোচনায় আসবে জাতীয় পার্টিও। তবে এসব কিছুই নির্ভর করবে আগামী দু’মাসে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার ওপর।
এইউ