images

মতামত

শেখ হাসিনা: দূরদর্শী বিচক্ষণ এক বিশ্ব নেতা

ঢাকা মেইল ডেস্ক

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:১৮ এএম

প্রবৃদ্ধি থেকে মাথাপিছু আয়, পদ্মা সেতু থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর; এসব কিছুই যার কারিশমেটিক নেতৃত্ব অর্জন তিনি দূরদর্শী বিচক্ষণ এক বিশ্ব নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এখন আর শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নন, সারা বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সমীহ পান পুরো বিশ্বের। মাত্র এক যুগে তিনি বাংলাদেশকে যেভাবে বদলে দিয়েছেন তাকে বলা হচ্ছে ‘দ্য বাংলাদেশ মডেল’।

একান্নতে বাংলাদেশ। এ এক ভিন্নরকম বাংলাদেশ। সূচনা লগ্নের বাংলাদেশের সঙ্গে যে দৃশ্য একেবারেই উল্টো। সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন এগিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশে। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা লগ্ন সহজ ছিলোনা। বহু চড়াই উৎরাই পাড়ি দিতে হয়েছে নিজেদের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ায় পর থেকে প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন এবং শোষণে ভারতবর্ষ ছিলো জর্জরিত। এরপর ১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলেও স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি বাঙালি জাতি। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে ভাগ হওয়া অসম একটি রাষ্ট্র পাকিস্তানের অংশ হয় পূর্ব বাংলা। নতুনভাবে বাঙালির জীবনে নেমে আসে কালো মেঘের ঘনঘটা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন এবং বৈষম্য ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। তবে ভাগ্যবান বাঙালি জাতির ছিলেন একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ইস্পাত কঠিন মনোবল এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এরপর ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা অর্জনের প্রস্তুতি এবং ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে  প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হয় বাঙালি জাতি। অতঃপর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয় স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। দেশ যখন সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যা ক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ বির্নিমার্ণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। 

১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায়। সেদিনের ১২৯ ডলারের মাথাপিছু আয়ের দেশে আজ মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ ডলার। বিগত দুই যুগে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সিঙ্গাপুর ও হংকংকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। 

স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছি। শুধু তাই নয়, যে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আমরা স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মাত্র পঞ্চাশ বছরে সেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি প্রায় সবদিক থেকে। 

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবীদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, 'সামাজিক-অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে।' আমাদের রফতানি রিজার্ভ, রেমিটেন্স, বিদ্যুৎ উৎপাদন আজ পাকিস্তান থেকে বেশি। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। যার সুফল এখন ১০০ শতাংশ জনগণ ভোগ করতে পারছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স আয়ে আজ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গড়আয়ু এবং নারীর ক্ষমতায়নেও আমরাই এগিয়ে। বর্তমান বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। মাতৃ মৃত্যুহার, শিশুমৃত্যু হার, জন্মহার পাকিস্তানের চেয়ে কম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, তৎকালীন পশ্চিম-পাকিস্তানের উন্নয়ন পুরোপুরি ভাবেই ছিলো পূর্ব-পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ নির্ভর। আন্তর্জাতিক মহলে তাই আজ পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক অনেক বেশি। এমনকি স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। 

সরকার এসডিজি এবং জাতীয় অঙ্গীকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। যার মধ্যে সাক্ষরতা বিস্তার, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়ায় শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিলো ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট, দেশের ৯৪ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। আইসিটি খাতে রফতানি বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও ২০১৯ সালে আইসিটি খাতে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীতে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা ১৬টি স্টেশন ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রাখবে। বাঙালির স্বপ্নের সেতু ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’র উদ্বোধন, যা নিজস্ব বাজেটেই সম্পন্ন হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ। যেকোনো সময় জরুরি ভিত্তিতে সেবা পেতে আধুনিক বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চালু হয়েছে ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ কল সেবা। এছাড়া জনগণের সেবাদানে অন্যান্য কল সেবাগুলো চালু হয়েছে; দুদক, নারী নির্যাতন বা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সরকারি তথ্যসেবা, স্বাস্থ্য বাতায়ন, দুর্যোগের আগাম বার্তা, জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ও মানবাধিকার সহায়ক কল সেন্টার। দারিদ্র্য হ্রাস, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গৃহহীন ৯৯ লাখ মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে বর্তমান বাংলাদেশ। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে সাধিত হয়েছে অপরিমেয় অগ্রগতি। স্বপ্নের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প তার জলন্ত উদাহরণ।

সকল অর্জনকে ম্লান করতে ধেয়ে এসেছিল মহামারী করোনা। দেশদ্রোহী অপশক্তি একপ্রকার খুশি মনে বসেই ছিল প্রাকৃতিক বাহানায় জনগণকে বিভ্রান্ত করতে। অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করবে, অজস্র লোকের লাশের গন্ধে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে গোটা দেশ এটা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার ভাবনা ছিল৷ কমপক্ষে ৩ কোটি লোক আক্রান্ত হবে প্রথম ধাক্কায় এবং ৫০ লাখ লোক মারা যাবে এমনটা বলা হচ্ছিল। অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যসংকট তো হয় ই নি বরং সে সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কেননা সরকার সিস্টেমেটিক ওয়েতে চালু রেখেছে কলকারখানাসহ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান। এমনকি করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আমদানি ও ব্যবহারে দুর্দান্ত দূরদর্শিতা দেখিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। যার ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে৷ এমনকি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেছেন- ‘শেখ হাসিনার সাথে দেখা করা আমার জন্য সবসময়ই আনন্দের এবং অনুপ্রেরণার বিষয়। আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের  শিক্ষা, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য তার প্রতি আমার প্রশংসা প্রকাশ করছি, বিশেষ করে মহামারী চলাকালীন এবং মহামারী পরবর্তী সময়ে যা ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তার নেতৃত্বে মহামারী চলাকালীন এবং মহামারী পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির কিছু সাফল্যের গল্প, বিশেষ করে শিশুদের জন্য,  আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে, যারা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’                                       

স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বারবার বাংলাদেশকে পেছনে টেনে ধরতে চেয়েছে। তাদের কালো হাত এবং অপরাজনীতি সর্বদা স্বাধীন বাংলাদেশকে অন্ধকার মেঘে ঢেকে দেওয়ার জন্য তৎপর। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিঃশেষ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর এপর্যন্ত ২১ বার হামলা চালানো হয়েছে। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পরের বছরই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দল ফ্রিডম পার্টি হত্যা চেষ্টা চালায়। তবে প্রাণের ভয় দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে থামিয়ে রাখা যায় না। সেই আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপে দেশ পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাই আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা ও অপশক্তি দমনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সফল কূটনীতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন সাম্প্রতিক সময়ের ভারত সফর। শুভ জন্মদিন বাংলার মানুষের আশার আলো, হৃদয়ের স্পন্দন ও ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনা। 

লেখক: উপ তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ