images

মতামত

সত্যান্বেষী হয়ে আওয়ামী লীগের যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজছি

ঢাকা মেইল ডেস্ক

০৮ আগস্ট ২০২২, ১০:১৬ পিএম

রাজনৈতিক ইতিহাস হলো- শাসকশ্রেণির কাছেই বন্দি থাকা, তাদেরই প্রয়োজনে জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া উন্মোচিত পাণ্ডুলিপি। এমন মতবাদ দার্শনিক ঈশ্বরমিত্রের। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও ইতিহাসের নিয়ন্ত্রণ, সংকলন প্রশ্নে নিরপেক্ষ মতামতের ওপর দাঁড়িয়ে দেশের  রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারেরা উদার থাকতে পারেননি। বরং দুইটি বলয় ঘিরে বিদগ্ধশ্রেণির আওতায় থাকা ব্যক্তিবিশেষবর্গ যেন রাজনৈতিক হয়ে বিচরণ করেছেন। এতে করে দেশের চারটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের।

আওয়ামী লীগকে সামরিক জান্তার খপ্পরে পড়ে ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়। যা রাজনৈতিক ইতিহাসের চূড়ান্ত ট্র্যাজেডি। যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করল, সেই দলটিকে দেশের সেবায় আসতে দেওয়া হয়নি। অথচ, দুই সামরিক শাসকের কথিত গণতন্ত্রের সংস্কৃতিকে বাহবা দিয়ে ইতিহাস রচনায় সিক্ত থাকতে ওই সেই কথিত বিদগ্ধশ্রেণিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস রচনা হয় কীভাবে, একটু সাধারণ আলোচনায় যাওয়া যাক। যেমন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কাছেই ছিল। তাই ইতিহাস তাঁকে ‘শহীদ’ হিসাবে দেখাতে চাইল। কিন্তু, পরেরদিন সকালে যদি নতুন কোনো গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতায় চলে আসত, তাহলে ইতিহাসের লিখিত কিংবা মৌখিক ধারাভাষ্য কি জানান দিত? হয়তো বলা হতো- এক খুনি জিয়ার পতন হলো। এটা তো সত্য নিজের চেয়ারকে আঁকড়ে রাখার জন্য তিনি ৭০০ সামরিক অফিসারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিলেন। অর্থাৎ শহীদ এবং খুনি হওয়া- দুইটি পৃথক প্রেক্ষিত দাঁড়িয়ে গেলেও ঘটনা এক, তবে বিধৃত দুইভাবে। কাজেই ইতিহাস সম্বলিত পুস্তক পড়লেই হবে না। অনুসন্ধানী মন নিয়ে সত্যান্বেষী হতে হবে।

সত্যান্বেষী হয়ে আজকের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য সেরা দশজন শীর্ষ নেতা কারা- তেমন প্রশ্ন করে অনুসন্ধানী মনের খোরাকে গেলে কি উত্তর আসবে? সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলয়ে প্রভাব রেখে যারা ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, আসলেই তেমন দশজন রাজনৈতিক বর্গের নামের তালিকা প্রকাশে আগ্রহ দেখানোর মধ্যেও দেশপ্রেম। কারণ, নাগরিক হিসাবে একটি রাষ্ট্রের স্বার্থ উদ্ধারে কৃতি লোকগুলোকে তুলে ধরার মধ্য দিয়েও জনসেবা করা হলো।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলবার নেই। তাঁকে বাদ দিয়ে নয়জনের তালিকা করাটা বেশ দুরূহই। হয়তো মন্ত্রণালয় চালিয়ে তথা মন্ত্রী হয়ে অনেকেই ভালো করছেন। ভালো ম্যানেজার হতে পেরেছেন অনেকেই। আবার দায়িত্বশীল পদ নিয়ে অনেকেই ভালো করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক হয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার রাজনৈতিক তিনজনও মিলবে কি না সন্দেহ থেকে যায়।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে মিস করছে আওয়ামী লীগ। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে জটিল ব্যাখ্যাগুলোকে সরলতার সঙ্গে উপস্থাপনের ভিন্নতা তাঁকে আলাদা করে চেনাত। মোহাম্মদ নাসিমও গর্জনের সুরে বক্তব্য রাখতে জানতেন। আবদুল জলিলের নেতৃত্বের গুণাবলীকে ছাপিয়ে এখনো গণমুখী নেতা আওয়ামী লীগে আসতে পারে নাই। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো ব্যক্তিত্বকে শুধু পরখ করে দিন কাটানো যায়। উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা কিংবা ব্রায়ান লারার ধ্রুপদী টেস্ট ইনিংস দেখার চাইতেও সৈয়দ আশরাফের কার্যকর নেতৃত্ব উপভোগে নস্টালজিক হওয়া যায়।

এখনো বর্ষীয়ান তোফায়েল আহমেদ বেঁচে আছেন। মাঝেমাঝে ফ্লোর নিয়ে উচিত কথা শুনিয়েও দেন। অন্যদিকে মতিয়া চৌধুরী সুযোগ পেলেই বুঝিয়ে দেন, তিনি বুড়িয়ে যাননি- এখনো সেই আগের মতো করেই অগ্নিকন্যা!

আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসাবে হোক কিংবা ক্ষুরধার রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে হোক, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মধ্যে উপরিউক্ত নেতৃবৃন্দের গুণাবলী ধরা পড়ছে। সত্যান্বেষী হয়ে তা বলা যায়। কোথাও যেন তিনি আব্দুল জলিলের মতো করে প্রতিটি মানুষের জন্য নিবেদিত সত্তা। আবার অল্প কথায় অর্থবহ বক্তব্য তুলে ধরার মানসে যেয়ে তিনি যেন সেই সৈয়দ আশরাফের মতো মুখপাত্র হওয়ার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও।

আওয়ামী লীগ বহু বছর পরে এক পরিণত রাজনৈতিক খায়রুজ্জামান লিটনকে পেয়ে গেছে বলে মনে করার সুযোগ আছে। আরও অর্ধযুগ পরে মির্জা আজম, বাহাউদ্দীন নাসিম, আ হ ম মোস্তফা কামাল ও হাছান মাহমুদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ভালো হবে বলে মনে করার দিকও আছে। যদি তাঁরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, তাহলে তাঁরা শেখ হাসিনার উত্তরসূরি হওয়ার পর্যায়ে চলে যাওয়ার সামর্থ্য না রাখলেও মন্দের ভালো পছন্দ হিসাবে জননন্দিত একটা সময় হতেই পারেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন তাঁর নিজের দলের জন্য ত্যাগী ওবায়দুল কাদেরকে সম্মান জানিয়ে বলতে পারেন, সত্যান্বেষী হয়ে বলো- আমার ও আমাদের দলে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হলে ভালো হবে? নামটা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন হবেন, তেমন উত্তর সহজ হয়ে আসছে।

লেখক: সাংবাদিক।

বিইউ/আইএইচ