images

মতামত

বাবা গেল, ছোট ভাই গেল, এখন গেল মা-ও ...

৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম

বয়স যখন ছয়, তখন তিনি মায়ের সঙ্গে ঢাকায় গৃহবন্দি ছিলেন। প্রথমে মৃত্যু থেকে পালাতে ছুটোছুটি, এরপর তাদের কব্জায় পড়লে যেকোনো সময় মেরে ফেলা হতে পারে—এই ভয়ে কেটেছে মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস।

বয়স যখন এগারো, আবারও হলেন গৃহবন্দি। সিপাহি-জনতার বিদ্রোহের তিন দিন—এবার বাবা-মায়ের সঙ্গে। তিন দিনের সেই ভয়াল সময়ে দিন গুনছিলেন, কখন পুরো পরিবারসহ তাদের জীবনাবসান ঘটবে। বয়স যখন পনেরো, হারালেন তার বাবাকে। হয়ে গেলেন এতিম। মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ল।

বয়স যখন কুড়ি পেরোচ্ছে, বারবার নিজের চোখের সামনে দেখছিলেন—দুই ভাইকে রেখে কীভাবে তার মা রাজপথে ও জেলখানায় কাটিয়ে দিচ্ছেন লড়াই করতে করতে। 

606319151_1395153948660981_154125009810378379_n
সন্তানসহ বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

 

বয়স চল্লিশ পেরোল। এবার দেখলেন আরও কঠিন অবস্থা। নিজের ভাই, মা-সহ পুরো পরিবার কারারুদ্ধ। নিজের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দেওয়া হলো। ভাইকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছিল। অন্যদিকে মাকেও জেলে বন্দি করে রাখা হলো।

জেল থেকে বের হয়ে নিজে গেলেন লন্ডনে, ভাই গেল মালয়েশিয়ায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেন, কিন্তু ভাই হলেন না। বাবা না থাকলে পরিবারে ছোট ভাইবোনদের বাবার ভূমিকা পালন করেন ‘বড় ভাই’। কিন্তু সেই ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হলো। জানাজা হলো, দাফন হলো—শুধু দূর থেকে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারলেন না।

বয়স যখন পঞ্চাশ, তখন দেখলেন বৃদ্ধ ও অসুস্থ মাকে পরিত্যক্ত এক ভুতুড়ে কারাগারে যেতে। সেখানে একমাত্র বন্দি ছিলেন তার মা। দিনের পর দিন কাটিয়েছেন, মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছেন।

এরপর মা বের হলেন। কিন্তু তাকে নিতে দেওয়া হলো না বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তানের কাছে। তার বয়স তখন ষাটোর্ধ্ব। ঠিক তখনই এলো আল্লাহর রহমত—জুলাই এলো। সময়ের পরিক্রমায় তাকে নিয়ে গেলেন বড় ছেলে। একসঙ্গে কিছুদিন কাটালেন, এরপর দেশে পাঠালেন।

এখন নিজেও এলেন। কিন্তু আসার এক সপ্তাহ না হতেই বিদায় নিলেন তার মমতাময়ী মা। বাবা গেল, ছোট ভাই গেল, এখন গেল মা-ও…
এই দুনিয়ায় তার আপন বলতে আর কেউ রইল না। জীবন তারেক রহমানকে কী দিয়েছে?
যা দিয়েছে, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি নিয়েছে—হাজার-সহস্র গুণ বেশি।

লেখক: আহ্বায়ক, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি