ঢাকা মেইল ডেস্ক
৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম
সাংবাদিকতা আজ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ও কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ১৯৯২ সালে বৈশ্বিক প্রেস–স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর এমন সংকট আর দেখা যায়নি। গণতন্ত্রের চাকা যখন ধীরে ধীরে পেছাতে শুরু করেছে, স্বৈরাচারের ছায়া তখন আরও গাঢ় হচ্ছে। আর এই অন্ধকারের প্রথম আঘাতই এসে পড়ছে সংবাদকর্মীদের ওপর। গুম, খুন, কারাবরণ, নজরদারি, হুমকি, নির্বাসন—ঝুঁকির তালিকা প্রতিদিনই লম্বা হচ্ছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো সাংবাদিকরাই টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। গাজায় ২৪০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হওয়া এই নিষ্ঠুর বাস্তবতার সবচেয়ে ভয়ংকর উদাহরণ—সত্যের জন্য এমন মূল্য আসলে অপরিমেয়।
তবু গণমাধ্যমকে থামানো যায়নি, ভয় দেখিয়ে নীরব করানো যায়নি। জনগণের ভালোবাসা ও আস্থাকে পুঁজি করে সাংবাদিকরা আজও মাঠে নামেন, আজও জীবন বাজি রেখে সত্যের সন্ধানে ছুটে যান। তারা শুধু খবর লেখেন না—তারা ইতিহাসের প্রথম খসড়াটিও রচনা করেন। দুর্নীতি উন্মোচন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ, যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের আর্তনাদ তুলে ধরা—সবই উঠে আসে সাংবাদিকদের ক্যামেরা, কলম ও অদম্য সাহসের ভেতর দিয়ে। পৃথিবীর যে কোনো রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেও এটাই সাংবাদিকতার প্রকৃত শক্তি।
বাংলাদেশও এই বৈশ্বিক সংকটের বাইরে নয়। এখানে স্বাধীন সাংবাদিকতা দীর্ঘদিন ধরেই চাপে আছে। গুজব, অভিযোগ, দলীয় আক্রমণ—সব মিলিয়ে মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকদের কাজ করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। অনেকেই হুমকি পান, অনেকেই মামলার ভয়ে আত্মগোপন করেন। দীর্ঘদিন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগে সাংবাদিকরা নিপীড়নের মুখে পড়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতাসীন পক্ষের চাপ—এসবের মাঝেও সংবাদকর্মীদের প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে মানবাধিকার, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিষয় কাভার করা রিপোর্টাররা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। দেশের মফস্বলের সাংবাদিকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কেউ হামলার শিকার হন, কেউ বছরজুড়ে আদালত প্রাঙ্গণে মামলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
তবু এই চাপের মধ্যেও বাংলাদেশের সাংবাদিকরা দমে যাননি। দুর্নীতি উন্মোচন, মানবিক গল্প বলা, প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরা—সব ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নানা বাধা সত্ত্বেও তাদের কাজই প্রমাণ করে, সত্য কখনো পুরোপুরি চাপা পড়ে না। মানুষের আস্থা, ন্যায়বিচারের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস—এগুলোই সাংবাদিকদের এগিয়ে যেতে শক্তি দেয়।
ঝড় যতই আসুক, সত্য বলার দায়িত্ব থেকে তারা সরে দাঁড়াননি। আর এ কারণেই জনগণ এখনো সাংবাদিকতার ওপর ভরসা রাখে—এই পেশাই মানুষের কাছে শেষ আশ্রয়, শেষ আস্থা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
এআর