২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
ভারতে মোগল সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর তার স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী ‘তুজুক-ই-বাবরি’ বা ‘বাবরনামা’য় হিন্দুস্থান এবং হিন্দুস্থানিদের সম্পর্কে যে মূল্যায়ন করেছেন, তা থেকে ৫০০ বছর আগে ভারত কত পিছিয়ে ছিল, সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বাবরের কর্ম ও বিচরণস্থল ছিল উত্তর ভারত কেন্দ্রিক। তিনি বঙ্গভূমিতে আসেননি। যদি আসতেন, তাহলে ‘বাবরনামা’য় তার সময়ের বাংলার চালচিত্র সম্পর্কে একটি অধ্যায় যুক্ত হতে পারতো এবং বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য নিয়ে বাঘা বাঘা বাঙালির বাগাড়ম্বরের জারিজুরি কিছুটা হলেও ফাস হতো। বাংলা হিন্দুস্থানেরই অংশ ছিল। সমৃদ্ধ উত্তর ভারত সম্পর্কে তার মূল্যায়ন থেকে সহজে আন্দাজ করা যায় যে বাংলার অবস্থা ওই সময় কি ছিল।
বাবরের মৃত্যুর ৩০০ বছর পর থেকে বাংলা অঞ্চলে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী ব্রিটিশ সাহেবরা বাঙালি চরিত্র ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, তা খুব প্রীতিকর নয়। ভারত সম্পর্কে বাবরের মতামত বর্তমান কালের উচ্চ শ্রেণির অধিকাংশ ইউরোপীয়দের মতামতের প্রায় অনুরূপ। সাহেবদের বাঙালনামায় আসার আগে সার্বিকভাবে হিন্দুস্থান ও হিন্দুস্থানিদের সম্পর্কে বাবরের মূল্যায়ন অনেকের পাঠ্য ও জ্ঞান ভাণ্ডারে নবতর সংযোজন হবে বলে আশা করি।
সম্রাট বাবর লিখেছেন, হিন্দুস্তান এমন একটি দেশ যেখানে আনন্দের খুব সামান্য বিষয়ের কথাই উল্লেখ করা যায়। এখানকার লোকজন সুদর্শন নয়। বন্ধুসুলভ সমাজের চমৎকারিত্ব, পরস্পরের সাথে খোলামেলা মেলামেশা অথবা পরিচিতজনের সাথে ভাববিনিময় সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। তাদের মধ্যে মেধা নেই, মনের উদারতা নেই, আচরণে শোভনীয়তা নেই, বন্ধুসুলভ আন্তরিকতা নেই, তাদের হস্তশিল্পকে উন্নত করার মতো কোনো কারিগরি উদ্ভাবন নেই, শিল্প ও স্থাপত্যকলার কোনো জ্ঞান বা দক্ষতা নেই, তাদের ঘোড়া নেই, ভালো কুকুর নেই, তাদের বাজারে ভালো গোশত ও রুটি এবং রান্না করা খাবার পাওয়া যায় না, কোনো হাম্মাম বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই, মোমবাতি নেই, মশাল নেই, এক কাঠি মোমবাতিও নেই। কৃষক এবং দরিদ্র লোকেরা বেশিরভাগ নগ্ন চলাফেরা করে। পুরুষরা বেশিরভাগ লেংটি ব্যবহার করে এবং নারীরা কেবল একবস্ত্রে তাদের দেহ ঢেকে রাখে। যদিও এটি বৃহৎ একটি দেশ এবং এখানে প্রচুর স্বর্ণ ও রৌপ্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্রাট বাবরের আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’ তার মাতৃভাষা চাঘতাই তুর্কিতে রচিত। সম্রাট আকবরের আমলে আবদুর রহিম খান-ই-খানান এটি ফার্সিতে অনুবাদ করেন। ১৮২৬ সালে জন লেডেন ও উইলিয়াম আর্সকাইন ইংরেজিতে বইটি অনুবাদ করেন। প্রায় সাতশ’ পৃষ্ঠার আত্মজীবনী ইংরেজি থেকে প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ। এরপর আরও অনেকে ‘বাবরনামা’ বাংলায় অনুবাদ করেছেন। কোনোটি সংক্ষিপ্ত, কোনোটি পূর্ণাঙ্গ। অত্যন্ত সুখপাঠ ও তথ্যসমৃদ্ধ আত্মজীবনী। আগ্রহীরা পড়তে পারেন।