ঢাকা মেইল ডেস্ক
২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
বাংলাদেশের বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বর্জ্যপদার্থের একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য খুবই ক্ষতিকর। সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় প্লাস্টিক পণ্যের জনপ্রিয়তাও বেশি। শুধু খাবারের প্যাকেট নয় বর্তমানে আধুনিক জীবনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়ানটাইম বা একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পণ্য সামগ্রীও। বর্তমানে পলিথিনের ব্যবহার এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে জলাভূমি, কৃষি ভূমিসহ সাগরের মৎস্য ও জলজ উদ্ভিদসহ অন্যান্য সম্পদও হুমকিতে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ায় চিন্তার কিছু ছিলো না, যদি এটা রিসাইকেল করা যেত। কিন্ত সবটুকুই জমা হচ্ছে পরিবেশে। তথ্য বলছে, গত ৫০ বছরে পুরো বিশ্বে মাথা পিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। এসব ক্ষতিকর অপচনশীল বর্জ্য পরিবেশে ৫০০ বছরের বেশি থাকতে পারে, যা নানা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে। এসব প্লাস্টিক দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে থেকে যাওয়ায় মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে।
মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি: ফেলে দেয়া পলিথিন মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে।
অন্য প্রাণীদের জন্য হুমকি: মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্রকে বিনষ্ট করে। ফলে অপুষ্টি, অনাহারে ভুগে তারা। সমুদ্রে থাকা কচ্ছপগুলো ভাসমান প্লাাস্টিকের ব্যাগগুলোকে জেলিফিশ ভেবে ভুল করে খেয়ে ফেলে। গরু ও হাতির মতো প্রাণীদের পাকস্থলীও প্লাস্টিকের কারণে কার্যকারিতা হারায়।
দূষিত হচ্ছে সাগর: বেশিরভাগ প্লাাস্টিক গিয়ে পড়ে সাগরে। দীর্ঘদিন ধরে এসব পলিথিন বা প্লাস্টিক ভাসমান অবস্থায় থাকে। একসময় পানির ওপরে আবর্জনাযুক্ত বিশাল এলাকা সৃষ্টি করে। এই আবর্জনা স্রোতের সঙ্গে সাগরের খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। এসব গ্রহণে ছোট প্রাণীদের থেকে শুরু করে বৃহাদাকার তিমিরও মৃত্যু হয়। এসব বর্জ্য সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রবাল প্রাচীরগুলোকে ঢেকে দেয়। ফলে সেগুলোতে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব: পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করা যায় না বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহারের পর পলিব্যাগগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখন ধোঁয়ার মাধ্যমে নির্গত হয় ক্ষতিকারক গ্যাস। এভাবে সামগ্রিকভাবে পুরো বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে ফেলে প্লাস্টিক।
বহুবছর ধরে বাংলাদেশে এই পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে চাইলেও তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই জানে পলিথিনের এই দূষণের কথা। কিন্তু প্রতিদিনই এর ব্যবহার বাড়ছে। দু-একজন একটু সচেতন হলেও সাধারণ মানুষের এর বর্জনের বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ফলে সামাজিক ভাবে এই পলিথিন বা প্লাস্টিক পণ্য বয়কটের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই মুখে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্যের বর্জনের ঝড় না তুলে নিজেই পলিথিন বর্জন করা দরকার সবার আগে। আমাদেও পরিবেশ আমরা বাঁচাতে না পারলে নির্মম আগামী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
লেখক: সাংবাদিক