ঢাকা মেইল ডেস্ক
১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
সম্প্রতি কৃষকদলের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে তার অঙ্গীকার তুলে ধরেন। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে তিনি কৃষকদলের নেতাকর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে কাজ করার নির্দেশনা দেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং তাদের আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করা যায়। তারেক রহমানের বক্তব্যে এই খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের কল্যাণে তার সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে, যা দেশের জন্য একটি শক্তিশালী কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে কৃষি খাতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে—শস্য বিমা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন, সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদ চালু করা এবং কৃষকদের সেচ সুবিধা ও সার-বীজের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
কৃষকদের কল্যাণে নিবেদিত তার এই ভাবনা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষকদের অবদানকে আরও সুসংহত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার নির্দেশনায় উঠে আসে একটি আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধশালী কৃষি খাত গড়ে তোলার প্রতি তার একাগ্রতা, যা সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
তারেক রহমান দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সেচের পানির সংকট নিরসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে পানির অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা কৃষকদের জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি করছে। এ সমস্যার সমাধানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় চালু হওয়া খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তা তিনি জোর দিয়ে বলেন। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে খাল খননের মাধ্যমে পানির অভাব দূর করে সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছিল, যার ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
তারেক রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী, খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় চালু করা হলে কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত সেচের পানি নিশ্চিত করা যাবে, যা তাদের ফসল উৎপাদনে সহায়ক হবে।
তারেক রহমানের এ পরিকল্পনা কেবল উৎপাদন বৃদ্ধির দিকেই নয় বরং দেশের কৃষি খাতের ভিত্তি শক্তিশালী করতে এবং সেচের পানির দীর্ঘমেয়াদি সংকট দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তিনি মনে করেন, দেশের জলাভূমিগুলো পুনরুদ্ধার করে এবং খাল খননের মাধ্যমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে কৃষকদের খরচ কমবে ও ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি একটি টেকসই ও কার্যকর সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা দেশের কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথ সুগম করবে।
তারেক রহমানের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশের কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সুরক্ষা একটি অগ্রাধিকার। তিনি মনে করেন, কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার অধিকারী, এবং এই মূল্য নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে, কৃষকেরা সরাসরি সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে তাদের ফসল বিক্রি করতে পারবেন, এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে যে অনিয়ম ও আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হন, তা থেকে মুক্তি পাবেন। তার এই পরিকল্পনা কেবল কৃষকদের আয় বাড়াবে না বরং তাদের জীবনের ওপর অর্থনৈতিক স্বস্তি এনে দেবে, যেখানে প্রতিটি কৃষক তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পাবেন। দেশের কৃষিখাতকে একটি নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা দিয়ে তারেক রহমান প্রতিটি কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে চান।
এছাড়া কৃষকদের জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে কৃষি বিমার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের কৃষকেরা ঝড়, বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়ই ফসলের ক্ষতির সম্মুখীন হন, যা তাদের জীবনধারণে সংকট তৈরি করে। কৃষি বিমার মাধ্যমে তারেক রহমান প্রতিটি কৃষকের জন্য একটি সুরক্ষার বলয় গড়ে তুলতে চান, যাতে দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পান। তার এই উদ্যোগ একটি সাহসী প্রতিশ্রুতি, যা দেশের কৃষকদের প্রতি তার গভীর মমতা এবং দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। দেশের প্রতিটি কৃষক যেন আর্থিক সুরক্ষা ও সম্মান নিয়ে দাঁড়াতে পারেন, সে লক্ষ্যে তার এই ভাবনাগুলো একটি নতুন আলোর দিশা দেখায়।
তারেক রহমানের চিন্তায় কৃষিখাতের উন্নয়নে তার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও অঙ্গীকার স্পষ্ট হয়েছে। তিনি মনে করেন, কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক বাজার পাবেন, যা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার এই উদ্যোগে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষিজমির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব, যা বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য উপকার বয়ে আনবে এবং কৃষিখাতকে আরও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে। তারেক রহমানের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের কৃষি উৎপাদন শুধু দেশীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ভূমিকা রাখবে।
তিনি সারের সংকট, বীজের মান উন্নয়ন এবং কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়েছেন। কৃষকদের জন্য মানসম্মত বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং জমির ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। এসব উদ্যোগ দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম, যেখানে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাতের অবদান আরও সুসংহত হবে।
তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তার গভীর রাষ্ট্রনায়কোচিত চিন্তা এবং তৃণমূলের কৃষকদের জন্য আন্তরিক প্রতিশ্রুতি। তারেক রহমান মনে করেন, কৃষক শুধু অর্থনৈতিক উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু নয় বরং জাতির মেরুদণ্ড। তাদের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যেমন কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করবে, তেমনই কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রির সুযোগ পাবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য কিনতে পারবে।
ভবিষ্যতের জন্য তার এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা শুধু কৃষি উৎপাদনের ওপর নয়, বরং কৃষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেয়। যখন বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে এবং তারেক রহমানের এই উন্নয়ন ভাবনা বাস্তবে রূপ পাবে, তখন বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং কৃষি খাতে উদাহরণ হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজেকে তুলে ধরবে। দেশের প্রতিটি কৃষক, প্রতিটি মাঠে কাজ করা শ্রমিক তখন গর্বিতভাবে নিজেদের এই সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখতে পাবে। এই বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ যেখানে কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের ন্যায্যমূল্য এবং দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত হবে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক