images

মতামত

বি. চৌধুরীর জন্য এলিজি এবং রহস্যের পর্দা উন্মোচন

ঢাকা মেইল ডেস্ক

০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৭ এএম

দীর্ঘকাল চমৎকার সম্পর্ক ছিল ডাক্তার অধ্যাপক এ. কিউ. এম. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে আমার। আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে আমি দেখেছি যে, আমার মধ্যে খানিকটা আত্মগরিমা আছে। যার কারণে আমার সরাসরি শিক্ষক ছাড়া খুব কম লোককেই আমি 'স্যার' সম্বোধন করি। এক্ষেত্রে হাতেগোনা অল্প যে ক'জন ব্যতিক্রম তার মধ্যে তিনিও ছিলেন। আমি তাঁকে অকপটে স্যার ডাকতাম। এমনকি অসাক্ষাতেও তাঁর কথা উল্লেখ করতাম ‘বি. চৌধুরী স্যার’ বলে। এর মানে হচ্ছে, আমি তাঁকে খুব সম্মান করতাম এবং এই সম্ভ্রমবোধটা ছিল অন্তর্গত, ভেতর থেকে উৎসারিত।

তিনিও একটা সময় পর্যন্ত আমাকে অপরিসীম স্নেহ করতেন। অনেক বিষয়েই আমার সঙ্গে খুব খোলামেলা আলাপ করতেন। আমি অনুরোধ করলে খুব ছোটখাটো উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানেও তিনি হাজির হয়ে যেতেন। অসুখ বিসুখে তাঁর মতো যশস্বী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে কখনো পয়সা নেননি এবং আমার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া বা সিরিয়ালেরও কোনো বালাই ছিল না। কেবল তাই নয়, আমি কোনো রোগীকে তাঁর কাছে নিয়ে গেলে কিংবা পাঠালেও তিনি তাকে ফ্রি দেখে দিতেন, ফি নিতেন না।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গঠন পর্বেই জিয়াউর রহমান তাঁকে রাজনীতিতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। তিনি সম্মত হলে তাঁকে নবগঠিত বিএনপির প্রথম মহাসচিব করেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন জহুরির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ। তিনি সহজেই খাঁটি মণি-মাণিক্য চিনে নিতে পারতেন। বি. চৌধুরী সাহেব বিটিভিতে 'আপনার ডাক্তার' নামে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। বিষয়বস্তুর বৈচিত্রের পাশাপাশি তাঁর সুষমামণ্ডিত ব্যক্তিত্বপূর্ণ চেহারা, চমৎকার বাচনভঙ্গী এবং উপস্থাপনার নৈপুণ্যগুণে সে অনুষ্ঠান খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছায়।

জিয়াউর রহমান তখনো নিজে ভালো বক্তৃতা করতে পারতেন না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর নতুন দল ও রাজনীতিকে জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপনার জন্য এমন একজন মর্ডার্ন পাবলিক স্পিকারই চাই। স্বাস্থ্য বিষয়ক উপস্থাপনার নৈপুণ্যকে যে বি. চৌধুরী রাজনৈতিক মঞ্চের বক্তব্য হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারবেন, সেটা জিয়াউর রহমান কল্পনার চোখে দেখে নিয়েছিলেন। তাঁর সে দেখা যে নিখুঁত ও নির্ভুল ছিল তা পরবর্তীতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রাজনীতিতে নবাগত বি. চৌধুরী অচিরেই নিজেকে বাংলাদেশে রাজনীতির শ্রেষ্ঠ ফেরিওয়ালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তাঁর সে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি।

চৌধুরী সাহেবের ওই ঈর্ষণীয় সাফল্য তাঁর নিজের দলেও ট্রাডিশনাল রাজনীতিবিদরা মেনে নিতে পারেননি। বিএনপি গঠনে প্রধান উপাদান ছিল ন্যাপ-ভাসানী। এই দল প্রায় পুরোটাই বিএনপিতে যোগ দেয় মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে। বিএনপিতে ছিল তাদের আধিপত্য। তাদের কাছে রাজনীতির পোশাক, পরিভাষা এবং বক্তৃতার মুদ্রা ও ভঙ্গির যে ব্যাকরণ, বি. চৌধুরী ছিলেন সে-সব থেকে আলাদা। এই ট্রাডিশনাল পলিটিশিয়ানরা বি. চৌধুরীর হাফ হাতা প্রিন্টের শার্ট পরা থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাক্যে ক্লাসের লেকচারের মতো মঞ্চের বক্তৃতাকে সার্কাস ও ক্লাউন বলে বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সমর্থন ও উৎসাহে ডাক্তার চৌধুরী দেশ মাতিয়ে বনেদী রাজনীতিকদের বিরোধিতাকেই বিদ্রুপে পরিণত করে ফেলেন।

১৯৮১ সালে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে বিপথগামী একদল সেনা অফিসারের হাতে জিয়াউর রহমান শহীদ হবার পর ভদ্রলোক রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরী ভয় পেয়ে যান। মাথার ওপর তখন জিয়াউর রহমানের ছায়া নেই। দলের ভেতরে তাঁর বিরোধীরা প্রশ্ন তুলল, সার্কিট হাউসে পাশের কক্ষে থেকেও দলের মহাসচিব অক্ষত ছিলেন কেমন করে? এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দল ও রাজনীতি থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নেন তিনি। এরমধ্যে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে বিএনপি ভাঙেন। জাস্টিস আব্দুস সাত্তারের জায়গায় বিএনপির নেতৃত্বে আসেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮৫ সালে তিনি আ. স. ম. মোস্তাফিজুর রহমানকে দলের মহাসচিব করেন।

দল ও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থেকেও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি বি চৌধুরী। তাঁর নিজের এলাকায় শাহ্‌ মোয়াজ্জেম হোসেন তখন এরশাদের উপপ্রধানমন্ত্রী। তিনি বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা তৎপরতা শুরু করেন। তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টাও চলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সুসম্পর্কের সুবাদে তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাওয়ার্ড বি শেফার্ড-এর হস্তক্ষেপে তিনি গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন। তাঁর গ্রামের বাড়িতে একটি ফ্রি সানডে ক্লিনিকে তিনি সপ্তাহে একদিন বিনা পয়সায় গরিব রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। সেখানেও জাতীয় পার্টির গুণ্ডারা হামলা চালায়। এসব ঘটনায় ডাক্তার চৌধুরী প্রচণ্ড উত্ত্যক্ত বোধ করেন এবং বিএনপির রাজনীতিতে ও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন। ১৯৯৬ সালে বি. চৌধুরী 'জনতার মঞ্চ'-এ যোগদানকারী আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১১৬ আসন পেয়ে বিরোধীদলে গেলে দলের ভেতরে তাঁর বিরোধীরা প্রচার শুরু করে যে, চৌধুরী সাহেবের কঠোর অবস্থানের কারণে আমলাতন্ত্র একজোট হয়ে বিএনপিকে হারিয়েছে। এই প্রচারণায় তিনি কিছুটা কোণঠাসা হলেও অচিরেই বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে সংসদে গতিশীল ভূমিকা রেখে আবার সামনে চলে আসেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে বি. চৌধুরী স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল 'এটিএন-বাংলা'য় 'সাবাশ বাংলাদেশ' নামে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক এক প্রচারণামূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন। তাঁর এই একক প্রচারণা আওয়ামী শিবিরের প্রচারণাকে ধরাশায়ী করে ফেলে। নির্বাচনে বিএনপির ভূমিধস বিজয়ের পর বি. চৌধুরীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়াদ শেষে চৌধুরী সাহেব রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে গোঁ ধরেন। তিনি হুমকি দেন রাষ্ট্রপতি না করলে তিনি মন্ত্রিত্ব ও দল থেকে ইস্তফা দেবেন এবং রাজনীতি ছেড়ে অবসর জীবনযাপন করবেন।

আমি মনে করি সক্রিয় রাজনীতিক বি. চৌধুরীর নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় এবং আলঙ্কারিক 'গোর জেয়ারতের রাষ্ট্রপতি' হতে যাওয়াটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। এই পদই দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়াতে থাকে।

আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োজিত হয়ে কাজ করি। ২০০২ সালের এক সন্ধ্যায় অফিসের কাজ সেরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়েছি আড্ডা দিতে। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসা থেকে তাঁর ভাগ্নে ও একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম ডিউক ফোন করে বললেন, জরুরি ভিত্তিতে মিডিয়া টিম নিয়ে যেতে হবে।

জিজ্ঞাসা করলাম, কেন?

ডিউক সাহেব জানালেন, প্রেসিডেন্ট আসছেন ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে। আমি বললাম, এই কথা আর কাউকে বলবেন না। আমি আসছি।

আমি ম্যাডামের বাসায় পৌঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি সেখানে পৌঁছালেন। আমাকে দেখেই প্রশ্ন করলেন, মিডিয়া আসেনি এখনো? আমি বললাম, আসতে বলিনি স্যার। আপনি এখন রাষ্ট্রপতি। দলের কোনো পদেও নেই। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর বাসায় এভাবে আসাটা আপনার পদমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি। আর তাই এটা প্রচার না করাই উচিত।

আমার কথায় প্রধানমন্ত্রী কনভিন্সড হলেও রাষ্ট্রপতি খুশি হলেন না। মুখ কালো করে বললেন, বুঝেছি। আমার কাভারেজ দিতে চান না তো, তাই একটা যুক্তি বের করেছেন।

আমি বললাম, আপনি ভুল বুঝেছেন স্যার। তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি ভুল, আপনিই শুদ্ধ। এখন আমি একটু ম্যাডামের সঙ্গে আলাদা কথা বলতে চাই।

যে-কোনো উছিলায় প্রচার বা কাভারেজের প্রতি স্যারের দুর্বলতার কথা জানতাম। প্রচার না পেয়ে তাঁর ক্ষুব্ধ হওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমরা সবাই বাইরে গেলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিনিট দশেক কথা বলেই প্রেসিডেন্ট হাসিমুখে বেরিয়ে আমাদের দিকে হাত নেড়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। এরপর আমরা জানতে পারলাম, চৌধুরী সাহেব তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনের উপনির্বাচনে তাঁর পুত্র মাহি বি. চৌধুরীর জন্য বিএনপির মনোনয়ন কনফার্ম করতে এসেছিলেন। কয়েকদিন পর আরেকটি চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেল যে, ওই আসনে মাহির বিপরীতে আওয়ামী লীগ যাতে কাউকে প্রার্থী না করে সে অনুরোধ জানাতে তিনি আব্দুস সামাদ আজাদের বাসায়ও গিয়েছিলেন।

মাহি এমপি হওয়ার পর তার নির্বাচনী এলাকা দিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার অতিক্রম করার এক কর্মসূচি পড়ে। হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে অনেকগুলো সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করান মাহি। তিনি এটাকে সৌজন্যের রাজনীতির নিদর্শনও হিসেবে ব্যাখ্যা দেন। তবে বিএনপির অন্য এমপিরা বলতে থাকেন, আমার সবাই যদি নিজ নিজ এলাকায় হাসিনার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করতে থাকি তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে?

এরপর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেসিডেন্ট এক চিঠি পাঠিয়ে জানান যে, রাষ্ট্রপতির পদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য তিনি আগামী আগস্ট মাসে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যেতে চান। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি না পেলে তাঁর পক্ষে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মাজারে যাওয়াও সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রী এ চিঠির কোনো জবাব দেননি এবং এ সময় তিনি চিকিৎসার জন্য লম্বা সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। এ সময়ে ক্ষমতার পিচ্ছিল করিডোরে নানামুখী চক্রান্ত ও পাল্টা চক্রান্ত শুরু হয়।

এর আগের কিছু ঘটনার কথা সংক্ষেপে বলি। প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানাদি স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে বলে রাষ্ট্রপতির কাভারেজের জন্য বিটিভির একটি টিম এবং প্রধানমন্ত্রীর কাভারেজের জন্য দুটি ইউনিট সংযুক্ত ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে বি. চৌধুরী সাহেব এতো প্রোগ্রাম করতে থাকেন যে, একটি ইউনিট তা কাভার করতে হিমশিম খেতে থাকে। তখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বঙ্গভবন থেকে দুটি ইউনিট চাওয়া হয়। বাস্তবতাবোধসম্পন্ন তথ্যমন্ত্রী প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলাম সেটা সম্ভব না হওয়ায় রাষ্ট্রপতির প্রোগ্রাম সীমিত রাখার পরামর্শ দেন। এরপর প্রতি সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি তাঁর গ্রামের বাড়ি সফরে যেতে থাকলে ঢাকা-চাঁটগা সড়কে সেদিন তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে থাকে। এ ব্যাপারে বঙ্গভবনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাষ্ট্রপতি মুন্সিগঞ্জ সফর কমিয়ে রাজধানীতেই নতুন এক ক্যাম্পেইন শুরু করেন।

তিনি তাঁর পত্নী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরীকে সঙ্গে করে একটি রিকশায় চড়ে বসতেন। তাঁদের হাতে থাকতো 'অপরিচিত জনকে আপনি বলুন' লেখা প্ল্যাকার্ড। সেই রিকশায় তাঁরা নগরীর বিভিন্ন সড়ক পরিভ্রমণ করতেন। পেছনে থাকতো রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ও প্রটোকলের বহর। এই ক্যাম্পেইন নগরীতে যানজটের ভয়াবহতা সৃষ্টি করতে থাকে।

আসলে বি. চৌধুরী সাহেব মনের দিক থেকে তখনো ছিলেন একজন প্রাণবন্ত সক্রিয় রাজনীতিক। প্রেসিডেন্টের আধা প্রাইভেট লাইফে সীমাবদ্ধ থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি উত্তুঙ্গ প্রচার-প্রচারণার কেন্দ্রে থাকতে চাইতেন। তিনি চাইতেন প্রচুর গণসংযোগ এবং অনর্গল কথা বলতে। রাষ্ট্রপতির পদ তাঁর সে সুযোগকে সীমিত করে দেওয়ায় তিনি সরকারের প্রতিই বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন। তার এই বিরক্তিতে বঙ্গভবনে সে-সময় কর্মরত আমলাদের একটা অংশ সায় দিয়ে আরও উস্কে দিয়েছিল। আর তাঁর বিরোধীরা এটাকে সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির দূরত্ব সৃষ্টির সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়।

প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির সময়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধান এম হারুনুর রশীদ সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতকে ঘণ্টাব্যাপী ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক বলে প্রচার করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকীতে তাঁর মাজারে রাষ্ট্রপতির না যাওয়া এবং অতি সংক্ষিপ্ত একটি বাণী দেওয়া নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ৩০ মে তারিখের কয়েকটি পত্রিকায় এ-নিয়ে সংবাদও প্রচারিত হয়।

শহীদ জিয়ার মাজারে রাষ্ট্রপতির না যাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সংক্ষিপ্ত বাণীটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ৩০ মে। তার আগের রাতেই বিএনপিতে এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টির খবরটি পত্রিকায় ছাপার জন্য তৈরি হয়। বুঝাই যায় কেউ নেপথ্যে থেকে পরিকল্পিতভাবে কলকাঠি নেড়ে আগুন জ্বালাবার চেষ্টা করছিল।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন। তিনি যেদিন অফিসে আসেন সেদিন সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর কক্ষ টগবগ করে ফুটছিল। বিএনপির তরুণ এমপিদের অনেকেই জড়ো হয়েছিলেন। তারা সবাই বেগম খালেদা জিয়ার কাছে বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে এসেছিলেন। ম্যাডাম খুব ধীরস্থিরভাবে তাদের কথা শুনলেন। বললেন, আচ্ছা, আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব। উনার সঙ্গেও কথা বলব।

তখন কয়েকজন বলল কেবল শহীদ জিয়াকে উপেক্ষা নয়, তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার সভায় বসে চক্রান্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করলেন, রাষ্ট্রপতি তো সর্বোচ্চ পদ। উনি আর কিসের জন্য ষড়যন্ত্র করবেন?

তারপর হেসে বললেন, দেখো উনার যদি সেই সাহসই থাকতো তাহলে আমাকে তো রাজনীতিতে আসতে হতো না। আমার জায়গায় উনিই থাকতেন।

ম্যাডাম আমাকে ডেকে বি. চৌধুরী সংক্রান্ত পুরো ঘটনার বিবরণ সংবাদপত্রের কাটিং ও মন্তব্যসহ একদিনের ভেতর দিতে বললেন। আমি পরদিন সেটা তাঁকে দিলাম। এর আগে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম বাণীটি রাষ্ট্রপতি নিজে দেখে দিয়েছিলেন কিনা। পরে জেনেছিলাম আমার এ প্রচেষ্টাকে ভুলভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করে আমার বিরুদ্ধে তাঁকে বিষিয়ে তোলা হয়েছিল। তিনি শফিক রেহমান ও এ.জেড.এম এনায়েতুল্লাহ্‌ খান -এই  দুই সম্পাদকের কাছে আমার বিরুদ্ধে অনুযোগও করেছিলেন।

যাই হোক, এর কয়েকদিন আগে জাতীয় জাদুঘরে জিয়া কর্নার উদ্বোধন করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী অসাধারণ বক্তব্য রেখেছিলেন শহীদ জিয়া সম্পর্কে। আমি সেটাও প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া রিপোর্টে যুক্ত করে দিলাম। শফিক রেহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এ তখন আমি নিয়মিত লিখি। সেখানে বি. চৌধুরী সাহেবের ব্যাপারে আমার একটা খুব ইতিবাচক লেখাও বেরুলো। সে লেখার ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া খুব নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেন। বললেন, এসব লেখতে গেছেন কেন? ভেতরের সব কথা তো জানেন না আপনি। উনি অতো ভালো লোক নন কিন্তু।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে মান্নান ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল। ম্যাডামের পর তিনি বিএনপিতে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হতে চাইতেন তা জানতাম। সে কারণে অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের তিনি সুযোগ পেলেই একটু হেয় করতে চাইতেন। বি. চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মান্নান ভাই সাইফুর রহমান, অলি আহমেদ এদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন। এদের কেউ সংসদ উপনেতা হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় তিনি নানা বাগড়া দেওয়ায় পদটিই খালি থেকে গিয়েছিল। কিন্তু তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধে চলে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন বি. চৌধুরীকে সহ্য করতে পারছিলেন না, তা আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। তবে হারিস চৌধুরীকে দিয়ে যে তিনি দলের তরুণ এমপিদের সংগঠিত করছিলেন তা বুঝতে পারছিলাম।

যাই হোক, উত্তেজনা ক্রমে ঊর্ধগামী হচ্ছিল এবং এক পর্যায়ে এ ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির সংসদীয় দলের সভা ডাকা হলো। সে সময় মাহি বি চৌধুরীর সঙ্গে তারেক রহমানের খুব নিবিড় সম্পর্ক ছিল এবং বনানীতে হাওয়া ভবন নামে পরিচিতি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসে বসে তারা একত্রে কাজ করতেন। এসব কারণে আমি ধারণা করেছিলাম উত্তেজনা থিতিয়ে আসবে এবং একটা শান্তিপূর্ণ সুরাহা হয়ে যাবে।

বি. চৌধুরী সাহেবের শ্যালক ওসমান চৌধুরীর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা ছিল। তাকে ডেকে ঘটনা আমি যতটা জানি তা আনুপূর্বিকভাবে বিবৃত করে বললাম, পরদিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে যাচ্ছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান উপলক্ষে। আমি তাকে বললাম বি. চৌধুরী স্যার যেন ম্যাডামের সঙ্গে একান্তে কথা বলার সুযোগ নেন। তাঁদের দু'জনের মধ্যে কথা হয়ে গেলে কেউ আর কোনো চক্রান্ত করে সুবিধা করতে পারবে না।

ভদ্রলোক মারা গেছেন। কিন্তু তিনি সেদিন আন্তরিকভাবে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্গভবনে গিয়ে তার দুলাভাইকে এ ব্যাপারে বুঝাবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার পক্ষে এক দুর্দমনীয় ইগো থেকে রাষ্ট্রপতিকে বের করে আনা সম্ভব হয়নি। আমরা আশায় ছিলাম। শপথ অনুষ্ঠানের পর চা-পর্বে আমরা তাকিয়েছিলাম রাষ্ট্রপতি হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইবেন। কিন্তু আমাদেরকে হতাশ করে পুরো সময়টা তিনি নিশ্চল হয়ে বসে রইলেন।

সম্ভবতঃ এর দু'দিন পরেই বিএনপির পার্লামেন্টারি পার্টির সভা বসল। তরুণ সদস্যরা জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন। বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক কোনো বিশেষণই আর বাদ থাকল না। এক পর্যায়ে সভা মূলতবি হলো। দ্বিতীয় দিনে সিনিয়র নেতাদের ভাষণ পর্ব। ভেবেছিলাম তাঁরা দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য দেবেন। কিন্তু পরম বিষ্ময়ে দেখলাম বি. চৌধুরীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা বিদ্বেষভরা কণ্ঠে তাঁর বিরোধিতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। প্রবীণ নেতাদের বক্তব্যে ম্যাডামের মনোভাবের পরিবর্তনও টের পাচ্ছিলাম। এই পর্যায়ে সভা থেকে বেরিয়ে এসে মাহি তাঁর বাবাকে ফোন করে বললেন, এখানে তোমার পক্ষে কেউ নেই!

আমরা সভাকক্ষের বাইরে বসা ছিলাম। এসময় হারিস চৌধুরীর সেলফোনে এলো রাষ্ট্রপতির ফোন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। হারিস ভাই সভাকক্ষের দরজা ঠেলে ইশারা করলেন। মান্নান ভাই উঠে দরজার কাছে এলে হারিস ভাই বললেন, বি. চৌধুরী স্যার ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলতে চান। কী করব?

মান্নান ভাই বললেন, এখন কী করে সম্ভব? মিটিংটা শেষ হোক।

রাষ্ট্রপতির নির্বাচকমণ্ডলী বিএনপির সংসদীয় পার্টি রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার আহ্বান সম্বলিত রেজলিউশন নিয়ে সভা শেষ করে এবং পদত্যাগ না করলে তাঁকে ইমপিচ করার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়।

এরপরের ইতিবৃত্ত ঘটনাবহুল হলেও এর ফলাফল ছিল বিএনপি ও বি. চৌধুরী উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক। বি. চৌধুরী পদত্যাগ করেন, মুন্সিগঞ্জেরই আরেক সোজাসাপটা শিক্ষক ইয়াজউদ্দীন আহমদকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরপর বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এই হুমকিকে 'পেয়ে হারানোর বেদনা' বলে অভিহিত করেন।

চৌধুরী সাহেব এরপর বিকল্পধারা নামে নতুন দল করেন, সেই দল বিলুপ্ত করে কিছুদিন অলি আহমদের সঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি গড়ার চেষ্টা করেন। বনিবনা না হওয়ায় বেরিয়ে এসে ফের বিকল্পধারা পুনরুজ্জীবিত করেন। এইসব রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে তিনি কয়েক দফায় ক্ষমতাসীন বিএনপির হামলারও শিকার হন। এসব কীর্তি একদিকে বিএনপির ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করে, অপরদিকে বি. চৌধুরী সাহেবের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দক্ষতা ও সামর্থের সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট করে তোলে।

২০০৭ সালের এক-এগারোর ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে কিছুটা মনোজাগতিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হওয়ার পর তাঁর সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মীদের আবারও একত্রিত করার উদ্যোগ নেন। তাঁর এই উদ্যোগে অন্যান্যের সঙ্গে বি. চৌধুরীও খানিকটা এগিয়ে আসেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

কিন্তু হাসিনার সর্বব্যাপী দুঃশাসন ছিল আলাদা ধাতুতে গড়া। ডা. চৌধুরীর পুত্র মাহি এবং দলের ব্যবসায়ী মহাসচিব এম. এ. মান্নানের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতার তথ্য-প্রমাণ ছিল হাসিনার নখদর্পণে। সেই সব দিয়ে অশীতিপর বৃদ্ধ এক পেশাজীবী-রাজনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বারবার ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে ফ্যাসিস্ট রেজিম। আত্মমর্যাদা খুইয়ে সেই ব্ল্যাকমেইলের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় ছিল না। সেই নিরুপায় অসহায়ত্বই তাঁর মৃত্যুকে পর্বতের চেয়ে গুরুভার না করে পাখির পালকের চেয়ে হালকা করে ফেলেছে। সারা দেশকে কাঁদিয়ে জাতীয় বীরের মতো যাঁর অন্তিমযাত্রা হওয়ার কথা ছিল, সেই তিনি কতোটা অনাড়ম্বরে সাদামাটাভাবে বিদায় নিলেন। তাঁর এ নিয়তি শিক্ষা হয়ে থাকবে ভবিষ্যতের জন্য।

রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বি. চৌধুরীর পদত্যাগের কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সভা হয়। সেই সভায় আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া প্রস্তাব করেন তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে অধিষ্ঠিত করার। সকলেই তা সমর্থন করেন। ম্যাডাম সভা চলাকালেই আমাকে ডেকে এ প্রস্তাবে পিনোর (তারেক রহমান) সম্মতি আছে কিনা তা জেনে আসতে বলেন।

আমি ফোন করে জেনে নেই তারেক রহমান হাওয়া ভবনে আছেন। দ্রুত গিয়ে আমি তার সঙ্গে দেখা করে এ প্রস্তাবের ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাই। তারেক সাহেব টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন। আমার কথা শুনে বললেন, নিশ্চয়ই আপনার নেতা মান্নান ভুঁইয়া সাহেব এ প্রস্তাব করেছেন এবং আপনাকে পাঠিয়েছেন। এমন সূক্ষ্মবুদ্ধি সাবেক বামপন্থী ছাড়া আর কারও থাকার কথা নয়। উনারা এতো আয়োজন করে বি. চৌধুরী সাহেবকে তাড়ালেন। এখন তার দায়ভার আমার, এটা প্রমাণ করতে আমাকে এই পদে বসাবার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর মাধ্যমে আমার ওপর তার নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

আমি বললাম, মান্নান ভুঁইয়া এ প্রস্তাব করলেও সবাই একবাক্যে তা সমর্থন করেছেন। আর আমাকে আপনার সম্মতি নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন ম্যাডাম, মান্নান ভাই নন।

একথা শুনে তারেক সাহেব চুপ হয়ে টিভি স্ক্রিনের দিকে চেয়ে রইলেন। আমি বললাম, এই মৌনতাকে কি আমি সম্মতি বলে ধরে নিতে পারি? তিনি বললেন, আমার কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়?

আমি বললাম, আমার মনে হয় আপনার রাজি হওয়া উচিত। তবে কেন, সেটা বলার সময় এখন নেই, পরে বলব।

তিনি বললেন, আচ্ছা।

আমি ফিরে এসে স্থায়ী কমিটির সভাকে তারেক রহমানের সম্মতির কথা জানিয়ে দিলাম।

আজ আরও অনেক কথা, অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে। তবে সব কথা তো সব সময় বলার সময় আসেনা। অনেক কাহিনী আবার সারা জনমের জন্য অকথিত, অবর্ণিতই রয়ে যায়। আজ এই বেদনার ক্ষণে একটি রাজনৈতিক রহস্যের পর্দা আমি সামান্য একটু উন্মোচনের চেষ্টা করলাম।

গ্রিক ট্রাজেডির চরিত্রের মতো বদরুদ্দোজা চৌধুরীর চিরবিদায় লগ্নে হৃদয়ক্ষরিত এই এলিজির মাধ্যমে আমি তাঁকে অন্তিম অভিবাদন জানালাম।

লেখক: সাংবাদিক, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব।