images

মতামত

এসআই মুরাদ, আপনার কি মনে আছে সেদিনের দুর্ব্যবহারের কথা?

বোরহান উদ্দিন

০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর। মাঝে কেটে গেছে অনেক বছর। কিন্তু ওইদিন পেশাগত জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা হয়ত কোনোদিনও ভুলতে পারব না। কারণ এমন অন্যায় আচরণের মুখে রিপোর্টিং ক্যারিয়ারে কখনো পড়তে হয়নি আমাকে। এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। ২০১৫ সালের ওইদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ছিল। বহুল বিতর্কিত সেই নির্বাচনে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছিলেন সাঈদ খোকন। নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্র পরিদর্শনের বৈধ কার্ড নিয়ে, সিএনজিতে নির্বাচন কমিশনের স্টিকার লাগিয়ে ঢাকার বেশ কিছু কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে ভোটের চিত্র দেখছিলাম। তখনকার কর্মস্থল ঢাকা টাইমসে কিছু সময় পরপর নিউজ পাঠাচ্ছি। সঙ্গে সহকর্মী মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম। ঘুরতে ঘুরতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেলাম বকশিবাজারের আলিয়া মাদরাসা কেন্দ্রের বাইরে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজনকে মেরে, টেবিল চেয়ার ভেঙে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। খবর শুনে আজিমপুর স্কুল কেন্দ্র থেকে বকশিবাজারের মূল সড়কে সিএনজি থেকে নামার পরই ঘটনাটি ঘটে।

আমাদের সিএনজিটা ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মুরাদ নামে পুলিশের একজন এসআইয়ের কাছাকাছি রেখে বের হতেই তার ধমক শুরু। পুরো এলাকায় তখন আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ঘোরাঘুরি করছেন। বাকি সব পুলিশ। সিএনজি থামিয়ে নামার পরই মুরাদের প্রথম প্রশ্ন- এখানে কেন এসেছেন? বললাম- নির্বাচনের ডিউটি করছি। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন- নির্বাচন দেখার জন্য বকশিবাজার কেন আসতে হবে? আর জায়গা নেই? আমি কোথায় যাবো, কি যাবো না সেটা আমার আর অফিসের বিষয়। বকশিবাজার আসা যাবে না এমন তো নির্বাচন কমিশন বলেনি।

একথা শেষ না হতেই আমার হাত ধরে সিএনজির দিকে নিয়ে এলেন পুলিশের মুরাদ। তার এমন আচরণে বিস্মিত হলেও মনে মনে ভাবলাম হয়ত সাঈদ খোকনকে মেয়র বানানোর প্রধান এজেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত। পরে নেমপ্লেট দেখে বললাম- মুরাদ ভাই! আপনার আচরণটা ঠিক হচ্ছে না। আমি ঘুরতে আসিনি। পেশাগত কাজ করতে এসেছি। আপনার সহযোগিতা করা উচিত। আপনি এমনটা করতে পারেন না। আমার কোনো অপরাধ থাকলে অফিসে কথা বলেন। প্রয়োজনে চলুন আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকলে তার সাথে কথা বলি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মুরাদ সাহেব তো থামার লোক নন। সিএনজি চালককে কড়া ধমক দিয়ে বললেন, এই শালা গাড়ি ঘোরাও। আর এক মিনিট এখানে থাকলে সিএনজি সোজা চকবাজার থানায় যাবে। দেখি তোর কোন বাপ আটকায়!

সত্যি মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে ঝামেলা এড়াতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সিএনজিওয়ালা বললেন- স্যার! আমার গাড়ি তো নিয়ে যাবে। চলেন সামনে যাই। এক পর্যায়ে বাড়াবাড়ি না করে চলে এলাম বকশিবাজার থেকে। কিন্তু সেদিনকার ঘটনাটি মনে দাগ কেটে আছে আজও। অথচ চলার পথে মুরাদ সাহেবদের চেয়েও বড় পদের অনেক কর্মকর্তা, তার সমপদের, নিচের পদের বহু পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে পেশাদার আচরণ পেয়ে আসছি।

হঠাৎ কেন মুরাদের কথা এতদিন পর সামনে আনলাম। সেই প্রশ্ন হয়ত কারও মনে জাগতে পারে। ৫ অক্টোবর (শনিবার) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ কাভার করতে গিয়ে সেই মুরাদ সাহেবের সঙ্গে দেখা। প্রেসিডেন্ট রেজিমেন্ট গার্ডের (পিজিআর) পাশাপাশি ‍পুলিশের অনেক সদস্যও মোতায়েন করা হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে। সেখানে অন্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মুরাদকে দেখে বিস্মিত হলাম। কোনো কথা বলিনি তার সঙ্গে। কিন্তু চেহারাটা দেখার পর থেকে ভাবছি- এরাও পুলিশ! প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তার ডিউটি দেখেও অবাক হয়েছি। জানি না উনি এখন কোন থানায় আছেন। খুঁজতেও চাই না। তবে এটা খুবই সত্য, এদেরই কেউ কেউ শেখ হাসিনার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার সেজে পুরো বাহিনীর অমর্যাদা করেছে। মানুষের কাছে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়েছে। কেউ কেউ আখের গুছিয়ে চম্পট দিয়েছে।

সাধারণ নাগরিক ও ভুক্তভোগী হিসেবে প্রশ্ন- এই মুরাদদের মতো পুলিশ সদস্যরা যারা এখনো বহাল তবিয়তে তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আসা অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবেন? কতটা নিরাপদ রাখবেন সাধারণ মানুষকে? প্রশ্নটা রইল সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী