images

মতামত

পিএসসি, প্রশ্নফাঁস এবং তাহসানের মা: ব্যক্তিগত স্মৃতি

১১ জুলাই ২০২৪, ০২:১৬ পিএম

জানি না আমাকে দালাল বলা হবে কি-না। তবে, বলা হলেও সমস্যা নেই। কেননা, কখনোই কোনো লেখা সবাইকে, শতভাগ লোককে সন্তুষ্ট করতে পারে না। প্রত্যেক লেখায় একটা না এক পক্ষ ক্ষুব্ধ হবেই। বিশেষ করে নিউজ-রিপোর্ট, এডিটরিয়াল এবং পোস্ট এর ক্ষেত্রে এমন ঘটবেই। তাই যে লেখা যার বা যাদের পছন্দমতো হবে না, তারা নানান নেতিবাচক বিশ্লেষণ করবেন। অনেক বিশেষণ দেবেন। আরও কত কী!

কথায় আছে, এত ভালো ভালো না। বিগত দেড়যুগ যাবত অনেকটাই বিতর্কমুক্ত দিন কাটিয়ে আসছিল পিএসসি। সংস্থাটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হটিয়ে আমলারা প্রধানের পদ দখল করে নিয়েছেন। মেম্বারদের বেশিরভাগ পদও তাদের দখলে। অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা ব্যর্থ। তারা প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারছেন না। পিএসসির মতো জনপ্রশাসনের কর্তা পদের নিয়োগে বাছাইয়ের কাজ আমলারাই সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারবেন। ওটা তাদের জন্য উপযুক্ত। তাইতো, ২০০৭ সালে আর্মি-ব্যাকড সরকারের সময়ে প্রথম চেয়ারম্যানের পদটি দখলে নেন আমলারা, যা তখনকার সাবেক সচিব প্রয়াত সা’দত হুসাইনকে পদায়নের মাধ্যমে শুরু হয়। সেই যে শুরু হলো, এখনও চলছে একের পর এক আমলা পুনর্বাসন এবং সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, অবসরপ্রাপ্তরাই পুরস্কার (!) হিসেবে ওই পদটি দখল (!) করে আসছেন।  

কথায় আছে, আপনি যত বড় ম্যানেজার আর কোচই হোন না কেন, বল যখন মাঠে গড়ায় তখন খেলা খেলার নিয়মে আবর্তিত হয়। আপনার কন্ট্রোলে শতভাগ থাকবে না। তাই, যে বা যারাই এখন আবেদ আলীদের সামনে এনেছেন, খেলা পরিচালকদের সেই উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু এই ঘটনা ফাঁসের মাধ্যমে ২০০৯ সালের পর অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিসিএস এবং পিএসসির মাধ্যমে নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষার সুপারিশ অনেকটাই যে প্রশ্নবিদ্ধ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

এই ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্নের সমাধান সামনে নিয়ে এসেছে। এই ধরুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন বা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যারা মিছিল-স্লোগান দিয়ে বেড়িয়েছে তারা যখন পররাষ্ট্র, পুলিশ আর প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছে, তখন তাদের সঙ্গে ক্লাসরুমে একই বেঞ্চে বসা সহপাঠীদের চোখ ছানাবড়া হয়েছিল।  

অনেকে হয়তো জানেন যে, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-নেতা হওয়ায় তারা পরীক্ষার হলে ওহী পেয়েছিল। কিংবা পিকনিক মুডে বন্ধুরা পাশাপাশি বসে রিটেন পরীক্ষার উত্তর লিখতে পেরেছিল। প্রিলিতে ওহী কিংবা পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা আগে ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার পর রিটেন পর্ব পার হতে বিসিএস-গাইড হয়তো পরীক্ষার হলে তাদের নিত্যসঙ্গী ছিল। আর ইনভেজিলেটর হাতপাখা নিয়ে কষ্ট করে পরীক্ষায় বসা ঘর্মাক্তদের বাতাস করেছে।

কিন্তু, এখন যেটা সামনে এসেছে তা উপর্যুক্ত তথ্যের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এমনিতেই কোটায় খেয়ে ফেলছিল মেধা। সেটার কব্জা থেকে নিজেদের অধিকার রক্ষায় না হয় আন্দোলন করা গেলো। অন্যদিকে, প্রশাসনে এতদিনে অনেক মিছিল-সমাবেশকারী বসে পড়েছে। হয়তো পরীক্ষার হলে পিকনিক-মুড বা ওহী পাঠানোর প্রয়োজনও কমে আসতে পারে এখন। কিন্তু পিএসসি (!) যদি এভাবে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসা করে, তাহলে মেধাবীরা যাবে কোথায়?

আমার লেখার উদ্দেশ্য মেধাবীদের পথের দিশা দেওয়া নয়। উদ্দেশ্য হলো, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (কন্সপিরেসি থিওরি) হাতিয়ে দেখা। আসলে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়- এই আর কি!

কথা এসেছে শিল্পী তাহসানকে নিয়ে। তাহসানের বিষয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে এখানে আমি ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতি আলোচনা করতে চাচ্ছি। 

শিল্পী তাহসানের মা প্রফেসর তাহমিদা এবং তখনকার প্রভাবশালী দুই পিএসসি সদস্য প্রফেসর আশরাফ ও প্রফেসর মাহফুজ যদি একজন সাংবাদিককে ঘৃণা করে থাকেন, সেটি আমি। 

এর কারণ হচ্ছে, তারা মনে করে থাকেন যে, ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী, ২৫তম, ২৬ ও ২৭তম বিসিএস নিয়ে বিতর্কের মূলে আমার রিপোর্টিং, অন্যদের দিয়ে লেখানো, থানায় প্রশ্নপত্রসহ পরীক্ষার দিন প্রত্যুষে জিডি করানো, আন্দোলন উস্কে দেওয়া- এসবে আমার মুখ্য ভূমিকা আছে। 

তারা মনে করেন যে, ২৫তম বিসিএসে বড় অংকের অর্থ লেনদেনের তথ্য সমকালে প্রকাশের পেছনে আমি ভূমিকা রেখেছি। প্রফেসর মাহফুজ ভাইয়ের যে ডায়েরিতে অর্থ লেনদেনের বিস্তারিত ছিল, তা ফাঁস হয় আমার মাধ্যমে। এছাড়া নন-ক্যাডার প্রশ্নফাঁস, ভাইভা পরীক্ষা সামনে রেখে মধুর ক্যান্টিনে তালিকা তৈরিসহ নানান তথ্য চাউরের খলনায়ক (!) আমি। 

যে কারণে তারা আমাকে ঘৃণা করেন। 

এর একটা প্রমাণ উল্লেখ করি। আমার বিসিএসের বা সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা কখনো ছিল না। সাংবাদিক হবো- এটাই ছিল নেশা ও স্বপ্ন। তাই যখন আমার বন্ধুরা ২৫ ও ২৬তম বিসিএসে অ্যাপ্লাই করে, তখন আমি তাদের নানানভাবে সাহায্য করি। 

এরমধ্যে মাথায় চিন্তা আসে, জীবনে বিসিএসের একটা ভাইভা দিয়ে দেখি। যেই চিন্তা সেই কাজ। ২৭তম বিসিএসে অ্যাপ্লাই করি। প্রিলি ও রিটেন পাস করে ভাইভা পর্ব আসে। ডেট হয়। অপেক্ষা করতে থাকি।

সম্ভবত ২০০৬ সাল। একদিন বিকেলে যুগান্তরে যাওয়ার লক্ষ্যে টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির অফিসে অপেক্ষা করছি। এরমধ্যে আমার এক বন্ধু (ছাত্রদলের একটি হলের সভাপতি) কল দিয়ে বললো, “কই”। সমিতিতে আছি- বলার পর বললো, মিলন চত্বরে আয়, গোপন কথা আছে। সমিতিতে বলা যাবে না। 

আমি সেখানে যাওয়ার পর ও বললো, “ম” ভাই ভাইভার তালিকা করেছে। একটু পর ভবনে নিয়ে যাবে। তুই গিয়ে তোর নামটা লেখায়ে আয়। 

”ম” ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকলেও সেটা ছিল ওয়ার্কিং এবং শীতল, উষ্ণ নয়। কারণ তিনি মনে করতেন যে, আমি তাদের গ্রুপের সমর্থক বা মদদদাতা নই। এসব বিষয় মাথায় আসে। 

তখন ভাবি, আমার তো চাকরি দরকার নেই। বিসিএস ভাইভা কেমন হয়- সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করা দরকার। তাই কারও কাছে ধর্ণা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কী?

আমার বন্ধুর পীড়াপীড়িতে শেষে মধুর ক্যান্টিনে গেলাম। সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং ক্যাম্পাসের তখন আলোচিত সাংবাদিকের মুখে তালিকার কথা শোনার পর তিনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। পাশাপাশি, যদিও তালিকার কথা অস্বীকার করলেন, কিন্তু বললেন, “তেমন কিছু হলে তোমার নাম থাকবে।”

অনেক লম্বা কাহিনী। কিন্তু পাঠকের জন্য বলা দরকার। “প” নামে আরেক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। ভাইভা বৈতরণী পার করতে তিনি অনেককে সাহায্য করে থাকেন তখন। তিনি  একজন প্রফেসর বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য খুব চাপ দিলেন। তাকে যতই বলি যে, আমার চাকরির দরকার নেই। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। তার চাপাচাপিতে এলাকার বড়ভাই ওই প্রফেসরের বাসায় গেলাম। তিনি জানালেন, স্যার (প্রফেসর আশরাফ) আমার ওপর খুব ক্ষুব্ধ। তিনি যেহেতু ২৭তম বিসিএসের চেয়ারম্যান, তাই যা বলার আমাকেই বলতে হবে।

তিনি আমাকে সঙ্গে করে স্যারের বাসায় নিয়ে গেলেন। কিন্তু স্যার বললেন, আমার উপর “হ” ভবন বিশেষ করে এক বড় ভাই (নাম উল্লেখ করলাম না) খুব অসন্তুষ্ট। তিনি না বললে তালিকায় আমার নাম রাখা সম্ভব নয়। তাই তাকে দিয়ে স্যারকে (প্রফেসর আশরাফ) বলাতে হবে। 

আমি দেখলাম, দারুণ মজা। আমার ওপর ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন বিশেষ করে যারা দেশ-জাতি চালাচ্ছেন তখন, তাদের তালিকা লম্বা। এর শেষ তো দেখা দরকার। তাই ভবনের ওই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বললেন, তিনি আশরাফ স্যারকে বলবেন। 

পরে “প” ভাইয়ের সঙ্গে একদিন আশরাফ স্যারের বাসায় গেলাম। তিনি সেদিন ভালো আপ্যায়ন করলেন। পাশাপাশি জানালেন, সেই ভাই রিকমেন্ডেশন করেছেন। তাই আমি তালিকাভুক্ত। নো টেনশন। আমি তার বোর্ডেই ভাইভা দেব!

ততদিনে দেশে ওয়ান-ইলেভেন ঘটে গেছে।

পিএসসির ভেতরে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, এটা যারা বিসিএস ভাইভা দিয়েছেন তারা জানেন। কিন্তু পিএসসির পিয়ন-দারোয়ান, কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, সদস্য অনেকেই আমাকে চেনেন। তাই ভাইভার দিন প্রকাশ্যে না হলেও লুকিয়ে সেদিনও মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পেরেছি। সিকিউরিটি কর্মীরা সার্চ না করে লম্বা সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়।

ভেতরে গিয়ে জানতে পারলাম, আমি প্রফেসর আশরাফের বোর্ডে নই, মোহাম্মদ আশরাফের বোর্ডে ভাইভা দেব। প্রভাবশালী এই সাবেক অতিরিক্ত সচিব নম্বর প্রদানে খুবই কঞ্জুস এবং নম্বরকে বাপের সম্পত্তি মনে করে থাকেন। তাই নম্বর কম দেন। আমি বাথরুমে গিয়ে প্রফেসর আশরাফকে কল দিলাম এবং বললাম, এ কী করলেন?

তিনি বললেন, “সমস্যা নেই, পরীক্ষা দাও। আশরাফ ভাইকে আমার সব বলা আছে।”

ভাই বোর্ডে গেলাম এবং যথারীতি তুলোধুনো। আমিও ঝগড়া করলাম কোনো কোনো প্রশ্নের জবাবে। অর্থ্যাৎ, উত্তরে আমি আমার অবস্থান ধরে রাখলাম। বিশেষ করে ইয়াজউদ্দিন সাহেব রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও চিফ অ্যাডভাইজরের দায়িত্বগ্রহণ ঠিক হলো কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে। আরও অনেক কিছু। লম্বা সময় ধরে ভাইভা। 

বের হওয়ার পর অপেক্ষারত অন্য প্রার্থীরা ঘিরে ধরলেন। “কী ভাই, এত সময় ধরে ভাইভা দিলে; না পারলে তো এত সময় রাখে না; ক্যাডার নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন” ইত্যাদি।

ওইদিন রাতে প্রফেসর আশরাফকে কল দিলাম। জানালেন, বাসায় এসো। গেলাম। জানতে চাইলাম ঘটনা। তিনি জানালেন, তার বোর্ডে আমাকে নিতে না  পারলেও আশরাফ সাহেবকে বলা ছিল। আমাকে ভাইভায় ৯০ দেওয়া হয়েছে ১০০ এরমধ্যে। 

আমি তখন জানালাম, “আপনি কী জানেন, ওই বোর্ডে প্রফেসর প্রদীপ কুমার রায় সদস্য ছিলেন”। বললেন, “হ্যাঁ, জানি তো।” আমি বললাম, “তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক, তা জানেন?” এইবার চুপ হয়ে গেলেন প্রফেসর আশরাফ।

আমি বললাম, আমাকে ৫৫ নম্বর দেওয়া হয়েছিল। তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঝগড়া করে তা ৬৫ করেছেন। তাকে ফোন দেন, জানেন সত্যিটা।

তখন প্রফেসর আশরাফ বললেন, “দেখো, তোমার উপর ম্যাডাম (পিএসসির তখনকার চেয়ারম্যান প্রফেসর তাহমিদা, শিল্পী তাহসানের মা) খুব ক্ষ্যাপা। তোমার নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষেপে যান। তাই তোমাকে আমার বোর্ডে নিতে পারিনি। চিন্তা করো না, আমি দেখছি।”

ব্যক্তিগত স্মৃতি এখানে শেষ করি এটা লিখে যে, ওই বিসিএসে আমার চাকরি হয়নি। পরে ড. সা’দত হুসাইন চেয়ারে বসার পর ও আন্দোলনের মুখে ২৭তম বিসিএসের রেজাল্ট বাতিল হয়। কিন্তু আমার সেই পণ অনুযায়ী দ্বিতীয়বার আর বিসিএসের ভাইভাতে যাইনি।

এখন আসি আসল আলাপে। 

প্রফেসর তাহমিদার সঙ্গে আমার এখনও শীতল সম্পর্ক। চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায়ের পর ক্যাম্পাস বা বিভিন্ন প্রোগ্রামে যখনই দেখা হয়েছে, তিনি একটা প্রশ্নই করতেন, “তুমি মুসতাক না?” আর আমিও বার বার একই জবাব দিয়েছি, “জি, ম্যাডাম। কেমন আছেন?” তিনি বলতেন, “তোমার মতো কেউ আমাকে অপমান করেনি।” 

প্রফেসর তাহমিদার সঙ্গে আমার এমন সম্পর্ক সত্ত্বেও বলবো, আবেদ আলীদের দিয়ে প্রশ্নফাঁস করিয়ে পয়সা কামানোর ব্যক্তিত্ব তিনি নন। এ প্রসঙ্গে আমি সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদের ভাষায় বলবো, “‘তাহসানের বাবা–মা দুজনেই অত্যন্ত সৎ মানুষ। ...প্রকৃত অসৎদের ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

এজন্যই উপরে আমি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা এনেছি। সরকারি বিভিন্ন দফতরে বর্তমানে যারা চাকরি করছেন তাদের অনেকেই হয়তো ড্রাইভার-পিয়নদের ব্রোকার নিযুক্ত করে পয়সা-কড়ি ইনকাম করতে পারেন, কিন্তু প্রফেসর তাহমিদা তেমন ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তাই কোনো বিষয় ধামাচাপা দেওয়া বা কোনো দিকে ভারসাম্য আনতে সেলিব্রেটি তাহসান ও তার মাকে সামনে আনা হলো, সেটাই ভাবনার বিষয়।

এমনকি বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাদিককেও আমি “মাল কামানোদের” সেই কাতারে ফেলব না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাদেরকে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কেন অত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালেন? এর নানান জবাব আছে। হতে পারে, ২০১৩ সালের ইলেকশন করে দেওয়ার পুরস্কার পেয়েছেন ড. সাদিক। সোহরাব হোসাইনেরও তেমন কোনো অবদান থাকতে পারে (আমার মতে নেই)। অথবা, হতে পারে পরীক্ষার হলে ওহী পৌঁছে গেলে প্রশ্নফাঁসের দরকার হয় না মিছিল-স্লোগানকারীদের উতরে নেওয়ার জন্য। 

তাহলে? বাকি থাকে কেবল ভাইভায় ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯০ দেওয়াটা। সেজন্য চেয়ারম্যান লাগে না। আকবরদের মতো ব্যক্তিরা যখন সদস্য হয়, তখন “ধরে আনতে বললে বেঁধে আনা”র লোকের অভাব থাকে না। ওটা তো ইশারাই কাফি। তাই সোহরাব হোসাইনদের মতো সজ্জনরা প্রতিবন্ধক হতে পারেন না কোনো অনৈতিক কাজে।

তবে এটা খুশির খবর যে, যে কারণেই হোক, আবেদ আলী, মতিউর, বেনজীর-আজিজ সাহেবরা প্রকাশ্যে আসছেন। তাদের ধনসম্পদের খবর জাতি জানছে। এটা মন্দ না। চলুক না আর কিছুদিন এই নাটক!

(নোট: ২৪তম বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর রমনা থানায় একটি জিডি হয়েছে। জিডিটি করেছিলেন আমাদের বন্ধু, পরবর্তীতে আমার রানিংমেট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমামুল হক শামীম। তবে দায়টা আমাকে নিতে হয়েছে)।

লেখক: সাংবাদিক