১৯ মে ২০২৪, ০৩:৫৬ পিএম
দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১–এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। দ্রুত নগরায়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য সম্ভাবনাময় এই খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যবসা-বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।
ইন্টেরিয়র ব্যবসায় গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ইন্টেরিয়রের ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করতে মৌলিক কিছু নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার বিকল্প কিছু নেই। বর্তমানে দেশে ইন্টেরিয়র ব্যবসা নিয়ে যে কিছু বিতর্ক, অনিশ্চয়তা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে ইন্টেরিয়র সেক্টরে কোনো মৌলিক নীতিমালা না থাকা।
ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠানে মালিকানার ধরন কী হবে, পরিচালনা কীভাবে হবে, বিনিয়োগের স্বরূপ, পণ্য বা সেবার প্রয়োজনীয় তথ্য, পেমেন্ট মেথড, শিপিং, ডেলিভারি, রিফান্ড, সম্পদ ও দায়ের অনুপাত, গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রতিকার সবই থাকতে হবে ইন্টেরিয়র নীতিমালায়। যেহেতু ইন্টেরিয়র সেক্টর ক্রমান্বয়ে যে কোনো দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে, তাই বর্তমান সময়ে ইন্টেরিয়র সেক্টরের ব্যর্থতা যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে। সেজন্যই বর্তমান বিবেচনায় ভবিষ্যতের জন্য নীতিমালার প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়নের বিকল্প কিছু নেই।
এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্সসহ সকল লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করা, ভ্যাট-ট্যাক্সের সুস্পষ্ট নির্দেশনা, ইন্টেরিয়র পরিচালনা নীতিমালা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি বিষয়ে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন, ইন্টেরিয়র অভিযোগ সেল গঠন, বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, ঋণপ্রাপ্তিতে সহায়তা, প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকি চিহ্নিত করে দূরীকরণ, এই সেক্টরে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, ভোক্তা অধিকার, লেনদেনের নিরাপত্তা, নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, ক্রসবর্ডার ইন্টেরিয়র ডিজাইন নীতিমালা তৈরি, লজিস্টিক সাপোর্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকা প্রয়োজন এই নীতিমালায়।
বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের এই ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই কর্মসংস্থানের অফার সম্ভাবনাময় এই খাতের মাধ্যমে কিভাবে এই খাতে আরও বেশি কর্মসংস্থান সম্ভব হয় এবং উদ্যোক্তা বৃদ্ধি করা যায়, সেই বিষয়গুলোও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
বিশ্বব্যাপী ইন্টেরিয়রের কিছু মৌলিক নীতি আছে। বাংলাদেশেও নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব অপরিহার্য নীতি বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জাতীয় ডিজাইন পলিসি-২০০৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিসহ অনেক দেশে ডিজাইন পলিসি এর সাথে ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে সমন্বয় করে পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশগুলোর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে নীতিমালার নতুন বিষয় সংযোজন এবং বিদ্যমান নীতিমালায় পরিবর্তনও আনছে। ভারতের ডিজাইন নীতিমালায় একটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন থেকে শুরু করে ভোক্তাদের সন্তুষ্টি বিধানে প্রয়োজনীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। যেহেতু ইন্টেরিয়র সেক্টর রিয়েল এস্টেট এর সাথে বেশি সম্পৃক্ত, এই আইন এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইন্টেরিয়র ডিজাইন পলিসি গ্রহণ করা যেতে পারে। অন্যথায়, আলাদা ডিজাইন পলিসি প্রণয়ন করে ঐ পলিসিতেও ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠান কিংবা ভোক্তা কারো জন্যই এখন পর্যন্ত যুগোপযোগী কোনো আইনি কাঠামো না থাকায় এ খাতটিতে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত ইন্টেরিয়র ব্যবসার জন্য কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সুবিধামতো ব্যবসায়িক কৌশল অবলম্বন করেছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। একাধিক ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠান যখন বিপর্যয়ের মুখে এসে উপনীত হয়েছে, তখন আইনি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সমস্যা হওয়ার পর এটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার চেয়ে সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই নীতিমালা দেওয়াটা বেশি জরুরি। বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইন খাতের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা অনেক আগেই দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র খাতে খুব দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই শিল্পের বিকাশ, আমদানি-রফতানি উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এর মাধ্যমে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য জাতীয় ইন্টেরিয়র নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে।
লেখক: সিইও, রিয়েল ইন্টেরিয়র
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি ওনার্স এসোসিয়েশন- বিডকোয়া
অনার্স ও মাস্টার্স (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)
পিএইচডি গবেষক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)