ঢাকা মেইল ডেস্ক
১৭ মে ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
লড ব্রাইস বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে সে শাসনব্যবস্থা যেখানে কোনো শ্রেণির ওপর ন্যস্ত না থেকে সমগ্র সমাজের সদস্যদের ওপর ন্যস্ত থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্যই সমাজের আগ্রহী সবাইকে নিয়েই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর একটি হলো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। এজন্য এই সামাজিক সুরক্ষার উদ্যোগকে সর্বস্তরের মানুষের স্বাগত জানানো এবং এর সুফলের কথা চিন্তা করে নিজেদের সম্পৃক্ত করা উচিত। তাতে মনে হয় আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গল ও নিরাপত্তা বয়ে আনবে।
দল মত নির্বিশেষে নিজেদের দুঃসময়ের নিরাপত্তার জন্য হলেও এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার পাঁচটি স্কিমের যেকোনো একটিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করা যুক্তিযুক্ত হবে। নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের অভাবে সমাজে ইদানীং যে নেতিবাচক দিক তৈরি হচ্ছে তাতে বাঙালি জাতিকে নিজ নিরাপত্তার জন্য পেনশন স্কিম আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার পথ দেখাবে বলে পূর্বানুমান করা যেতে পারে।
সরকারের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদানসাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যেকোনো বাংলাদেশি কর্মীও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতা তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
সর্বজনীন পেনশনের পাঁচটি স্কিম চালু হয়েছে- প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা, প্রত্যয়। আরেকটি চালু হবে। প্রবাস স্কিমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য, প্রগতি স্কিমে ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য, সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিত কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক ইত্যাদি বিভিন্ন কায়িক শ্রমের পেশায় নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য, সমতা স্কিমে স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্র নাগরিকদের জন্য, প্রত্যয় স্কিমে সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা। পাঁচটি স্কিমের নির্দিষ্ট মাসিক চাঁদা নির্ধারিত হয়েছে, চাইলে কেউ একটি স্কিম থেকে পেশাগত কারণে অন্য স্কিমে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন করতে পারবে।
তাই শিক্ষিত জনসাধারণের উচিত হবে, পেনশন স্কিম সম্পর্কিত ক্লিয়ার ধারণা রাখা। সেই জন্য স্মার্ট বাংলাদেশে গুগলে সর্বজনীন পেনশন স্কিম লিখে সার্চ করে একবার হলেও ওয়েবসাইটে গিয়ে এই উদ্যোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা জরুরি। জানার পরে সমাজের জন্য মঙ্গলজনক মনে হলে যে যার জায়গা থেকে ব্যক্তিভেদে তা প্রচার করা। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, অফিস আদালতে, রাজনৈতিক সভায়, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে এ সম্পর্কিত জোরালো সঠিক প্রচার প্রচারণা দরকার।

প্রচারের কথা এলো যেহেতু একটা উদাহরণ টানছি, যা এই পেনশন সম্পর্কে জানতে আমাকে প্রভাবিত করছে। ৫ মে ২০২৪ ‘রংপুর বিভাগীয় পেনশন মেলার কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তফাজ্জল হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে পেনশন স্কিম সম্পর্কে প্রচারণার উদ্দেশে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী। মহাপরিচালক মহোদয় পেনশন স্কিম সম্পর্কে তথ্যবহুল উপস্থাপন করেন তথ্য উপাত্ত সহকারে বিভিন্ন উদাহরণের আলোকে। তিনি সমাজব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সব ষড়যন্ত্রের অপব্যাখ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার, সন্দেহ রুখে দিয়ে পেনশন স্কিমে জনপ্রতিনিধিরা যেন জনসাধারণকে স্থানীয় পযার্য়ে সম্পৃক্ত করতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন।
তিনি সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশে চালু রয়েছে। এটা বাংলাদেশের নতুন কোনো ধারণা নয়। কিন্তু যেখানে যুক্তরাজ্য বার্ধক্যদের সুরক্ষার কথা ভেবে চালু করেছে স্বাধীনতার ২০০ বছর পর, যুক্তরাষ্ট্র চালু করেছে স্বাধীনতার ১৭৫ বছর পর, ভারত চালু করেছে এই যে ২০১৩ সালে। কিন্তু নবীন এই রাষ্ট্রটির স্বাধীন হওয়ার ৩৭ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদে’ কর্মক্ষমতাহীন বার্ধক্যদের জীবনের আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার কথা ভেবেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আর ১৪ বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পরিশেষে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
আসুন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিজের পরিবারকে, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সম্পৃক্ত করি। এটির সুফল সম্পর্কে এবং কুফল নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র ও অপব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে, সে সম্পর্কিত পরিষ্কার ধারণা নিজ নিজ জায়গা থেকে সমাজের মানুষের সামনে তুলে ধরি। উন্নত জাতিতে রূপান্তরিত হোক বাঙালি জাতি, এটাই আমাদের তারুণ্যের চাওয়া। যুগে যুগে বাঙালি জাতি তার আত্মমর্যাদা নিয়ে চলুক বিশ্ব দরবারে।
লেখক: উপ শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক, জাবি ছাত্রলীগ