ঢাকা মেইল ডেস্ক
১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০০ পিএম
যারা অস্থায়ী ভিসা নিয়ে কানাডায় আসতে চাচ্ছেন তাদের আগামী বছরগুলোতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। স্টুডেন্ট ভিসা, টেম্পোরারি ওয়ার্ক পারমিট ও ভিজিট ভিসায় এসে যারা স্থায়ী হতে চান তাদের জন্য সামনের বছরগুলো সহজ হবে না।
গত কয়েক বছর ধরে কানাডায় অধিক অস্থায়ী বাসিন্দা আগমনের ফলে, বিশেষ করে বাসা ভাড়া ও বাড়ির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। সাথে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, ও কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে ট্রুডো সরকারের ওপর সমালোচনা ও চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকারও নড়েচড়ে বসেছে।
সেই কারণে সরকার অস্থায়ী বাসিন্দা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০৩১ সাল নাগাদ ৩৯ লাখ (৩.৯ মিলিয়ন) নতুন বাসস্থান নির্মাণের বিশাল পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এই আবাসন সংকট কমতে আরও পাঁচ বছরের বেশি সময় লাগবে।
ইদানিং বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে কানাডায় পড়ার জন্য আসতে চাচ্ছে। IELTS এ ৬.৫ বা তার বেশি স্কোর থাকলে কানাডার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে। এক বছরের ডিপ্লোমার জন্য আঠারো থেকে বিশ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হয়। মাস্টার্স ডিগ্রি কিংবা পিএইচডির জন্য ষাট হাজার বা তার বেশি টিউশন ফি খরচ হয়। যদি কেউ কোনো স্কলারশিপ অথবা অনুদান যোগাড় করতে না পারে, সেক্ষেত্রে পুরো খরচ তাকেই বহন করতে হয়। এ তো গেল টিউশন ফি। এরপর থাকা, খাওয়া, যাতায়াত খরচ তো আছেই। টিউশন ফি একজন কানাডিয়ান বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স থেকে তিনগুণ বেশি হয়। এই বিশাল অংকের খরচ ও স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার অনিশ্চিয়তা নিয়ে ঝুঁকি কেবলমাত্র বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরাই নিতে পারে।
এরপর ঠান্ডা আবহাওয়া, ভাষাগত সমস্যা, কালচারাল সমস্যা তো বড় চ্যালেঞ্জ। এক বছরের ডিপ্লোমার জন্য এক বছরের কাজের অনুমতি এবং দুই বছরের ডিপ্লোমার জন্য তিন বছরের কাজের অনুমতি চাইলে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজ যোগাড় করা সহজ নয়। বাংলাদেশে যারা সোনা-রুপার চামচে খেয়ে রাজপুত্র-রাজকন্যার মতো বড় হয়েছেন, তাদেরকে কানাডায় এসে নিজে রান্না করে খাওয়া, থালাবাসন ধোঁয়া, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয়।
আরও পড়ুন: প্রবাসীরা সাবধান!
অন্যদিকে সাধারণ পরিবারের সন্তানেরা পিতামাতার জমানো অর্থ, জায়গা, ফ্ল্যাট বা বাড়ি বিক্রি করে পড়তে আসাটা অনেক বড় ঝুকিপূর্ণ বলে আমার ধারণা। অনেকে ওয়ার্ক পারমিট, ভিজিট ভিসা নিয়ে আসেন। ভিজিট ভিসা নিয়ে এসে কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া খুবই কঠিন। পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন। এরপর কানাডিয়ান এমপ্লয়ারের LMIA (Labour Market Impact Assessment) জব অফার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কানাডিয়ান এমপ্লয়ারের বলতে হয় উক্ত পদে কানাডিয়ান সিটিজেন বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়া যায়নি তাই বিদেশি কর্মচারী নিয়োগ দিচ্ছি। এটাও জোগাড় করা সহজ নয়।
এই তিন প্রকার অস্থায়ী বাসিন্দার ভিসা করতে মিডলম্যানের মাধ্যমে শত শত আবেদনকারী প্রতারিত হচ্ছেন। মিডলম্যান কমিশন নিচ্ছে। সাধারণ পরিবারের পক্ষে এই ধরনের অনিশ্চিত ঝুঁকি নেওয়া মোটেই উচিৎ নয়। ভারতে সরকারি চাকুরি পাওয়া অনেক কঠিন। সরকারি চাকুরিতে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। সেক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করলেই চাকরির সুযোগ পায়। একজন ছাত্রের ডাক্তারি পড়তে হলে ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ লাখ রুপির মতো খরচ হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সেই কারণে বেশিরভাগ ভারতীয় বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও বিদেশের চেয়ে পড়ার খরচ কম এবং দেশে বসবাস করে বাবা-মায়ের সাথে থেকে লেখাপড়া অনেক সহজ।
বাংলাদেশে এখনও কম পুঁজিতে নানা ধরনের ছোট ব্যবসা শুরু করার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে দেশের টাকা দেশে থাকবে। দীর্ঘদিন প্রবাসী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার থেকে পিতামাতার হোটেলে খেয়ে সুখে-দুঃখে বাবা-মায়ের পাশে থেকে ক্যারিয়ার গড়া অনেক সহজ।
কানাডায় আসার পর ইদানীং অনেক অস্থায়ী বাসিন্দা অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপে চলে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। অনেক ভারতীয় ফেরত যাচ্ছেন। কারণ থাকা-খাওয়া, বাসা-ভাড়া এখানে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সেই কারণে আজ যারা বাংলাদেশ থেকে কানাডায় এসে স্থায়ী হতে চান, কানাডার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা ও গবেষণা করে আসার সিদ্ধান্ত নেবেন। নইলে পরে পস্তাবেন।
লেখক: আলমগীর দারাইন, ক্যালগেরি, কানাডা