images

মতামত

‘নীতিতে আপোষহীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’

ঢাকা মেইল ডেস্ক

১৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির গর্ব, অহংকার। এ মহানায়কের জন্ম না হলে আমরা আজকের বাংলাদেশ পেতাম না। পেতাম না আমাদের অধিকার, আমাদের মহান স্বাধীনতা।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে যে ছোট্ট খোকার জন্ম হয়েছিল, তিনি রচনা করেছিলেন একটি ইতিহাস। তার হাত ধরেই জন্ম হয় একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি হলেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জন্মশত বর্ষ পেরিয়ে ২০২১ সালে জাতি উপস্থাপন করেছে জাতির পিতার ১০১তম জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় জাতির পিতার অবিস্মরণীয় ভাষণ দেন। ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, সেই ঘোষণাও বজ্রগর্ভ ভাষণে অবগাহন করে উঠল জনতা। অর্জিত হলো একটি মানচিত্রের, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। আর তা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আপোষহীনতা, দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার কারণে। সেদিন বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতিতে অটল, আপোষহীন ও দৃঢ় মনবলে বলীয়ান।

মানবতাবাদী নেতা

বঙ্গবন্ধু ছিলেন ধার্মিক, মানবতাবাদী, উদার ও সংগ্রামী। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তিনি রাজনীতিতে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মানুষকে সমানভাবে দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন অসম্প্রদায়িক মানবতাবাদী নেতা।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এ বাংলার হিন্দু মুসলমান বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পাকিস্তানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের আগস্টে কলকাতায় ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরা ওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন জায়গায় ছুটেছেন অসহায় মানুষের সাহায্য করতে। দুই বাংলায়ই ঘুরেছেন সম্প্রীতি বজায় রাখতে।

নীতিতে আপোষহীন

বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপোষহীন নেতা। তিনি কোনো লোভ, লালসা বা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতি করেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাইতো তিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরে চার হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। স্বাধীন দেশের জন্য তিনি দুইবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার জন্য ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে পাকিস্তানে সরকার গঠনে যোগ্যতা অর্জন করে। তখন বাঙালি আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা হয়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণে বলেছেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, দেশের মানুষের অধিকার চাই।…’ আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।

তার এ দৃঢ় মনোবল, নীতিতে অটলতা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করেছে। বাঙালি মুক্তি সংগ্রামের জন্য তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে আপোষ করেননি। তিনি নিজের ক্ষমতার লোভে, প্রতিষ্ঠার লোভে, প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভে আপস করেননি। তিনি আপস করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। এতে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। তার চারিত্রিক যে দৃঢ়তা, চারিত্রিক বলিষ্ঠতা, যোগ্য নেতৃত্ব ও বাংলার মানুষের অধিকার অর্জনের আপোষহীনতা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতায় পরিণত করেছে।

দূরদর্শী নেতা

বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী নেতা। তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন। ছয় দফায় ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির কথা, দুটি আলাদা প্রায় স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশে হওয়ার কথা। ছয় দফা আন্দোলনের জন্যই বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলায় জড়ানো হলো, বঙ্গবন্ধু তখন করাগারে বন্দি ছিলেন। উনসত্তরের যে গণআন্দোলন হলো তার মূল কারণ ছিল শেখ মুজিবকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেয়া হলো।

বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন বাঙালির দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। সেজন্য তার জীবনের বিরাট অংশ জেলে কাটাতে হয়েছে। তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু জনতার মাঝে ফিরে এসে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সকলকে সংগ্রামে নামতে বলেন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে সুখী সমৃদ্ধ ও অর্থনৈতিকভাবে মজবুত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, এক কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন ও দেশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলেন ও দেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নের মহাসড়ক নির্মাণ করেন।

জাতির জনকের যোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতির জনকের স্বপ্ন লালন করে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছেন।

আজ আমরা স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি কিন্তু আমাদের মাঝে বঙ্গবন্ধু নেই। আছে তার নীতি, আদর্শ দূরদর্শিতা ও মানবতাবোধ। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর দেখানো মহাসড়কেই।