images

মতামত

জনদুর্ভোগ ও নষ্ট কর্মঘণ্টার দায় নেবে কে?

ঢাকা মেইল ডেস্ক

২৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:১১ পিএম

বর্তমানে আমরা যারা রাজধানীতে বসবাস করি তাদের নাগরিক সেবাগুলোর মধ্যে দুর্ভোগের অন্যতম নাম যানজট। আপনি ঘর থেকেই বের হন কিংবা অফিস বা ব্যবসা-বাণিজ্য যেখান থেকেই বের হন না কেন দু’পা ফেলেই আপনাকে যানজটের সম্মুখীন হতে হবে। জনদুর্ভোগে নাগরিকের জীবন বিপর্যস্ত। শারীরিক মানসিকভাবে যখন বিপর্যস্ত তখন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। কর্মঘণ্টা বলতে একজন নাগরিকের কাজের সময়কে আমরা বুঝে থাকি। তাছাড়া একজন নাগরিক তার দৈনন্দিন কাজের সাথে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে যে অর্থনৈতিক সুবিধা পেত তাও কর্মঘণ্টা হিসেবে বিবেচিত হবে।বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যানজটের কারণে এই কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়া। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে করে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার।

এরমধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডেঙ্গু মহামারি, গ্রামগঞ্জে সারা বছর কর্মসংস্থান না থাকা, জীবনযাত্রার ব্যয় যখন অসহনীয় তখন সাধারণ কর্মজীবী মানুষ রাজধানীমুখী। রাস্তায় বের হলে শুধু মানুষ আর মানুষ। সড়কে গাড়ি যখন যানজটে স্থগিত তখন ফুটপাত দিয়ে হাঁটা মানুষের দায়। ফুটপাত দখল করে দোকান ব্যবসা আবার রাস্তায় এক লেন বন্ধ করেও দোকানপাট চলছে। এরমধ্যে রাজধানীতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চলছে এক দফা বনাম সরকারি দলের শান্তি সমাবেশ। আর এরমধ্যে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি। রাজধানী পুরোটাজুড়ে চলছে সড়ক অবরোধ করে শান্তি সমাবেশ বনাম এক দফা। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য তারা মহাব্যস্ত এ পাড়া ও পাড়া ঘুড়ছে আর বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছে। সরকার ও তাদেরকে গণতন্ত্রের মহা সংজ্ঞা বুঝাচ্ছে। বিপন্ন মানবজীবন হাজার হাজার কোটি টাকার কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে নাগরিকের। ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির।

একটি রাজনৈতিক দল যখন সরকার গঠন করে তখন তার প্রধানতম কাজ হচ্ছে নাগরিকের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা। কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন ঘটনা না ঘটতে দেওয়া। কিন্তু হায় বিধিবাম বিরোধী দল যখন এক দফা করে তার পাল্টা জবাব দিতে সরকারের বিভিন্ন সংগঠন শান্তি সমাবেশের নামে রাস্তা অবরোধ করে। আবার বিরোধী রাজনৈতিক দল নিজেদের অঙ্গ সংগঠন এবং অন্যান্য শরিক রাজনৈতিক দল বিক্ষিপ্তভাবে সারা রাজধানীতে সভা-সমাবেশের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় গিয়ে জনগণ যাতে স্বস্তিতে শান্তিতে থাকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়। এ সকল কর্মকান্ডে নাগরিকের জীবন আজ ওষ্ঠাগত হতে চলেছে। যে শিক্ষকরা জাতির মেরুদন্ড তৈরি করবেন তারা কিনা পুরানো পল্টন থেকে শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক ধরে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত আজ ১২ দিন যাবত সড়ক বন্ধ করে তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন করে। আসলে দোষটা মনে হয় আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে জন্ম নিয়েই করেছি। সরকার বিরোধী দলের যদি লক্ষ্য থাকে নাগরিকদের সেবা করার তাহলে আমার প্রশ্ন নাগরিক দুর্ভোগ ও নাগরিকের কর্মকান্ড নষ্টের দায় আপনাদেরকে নিতে হবে। হয়তো কেউ কেউ আমার এই লেখা পড়ে প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে সভা-সমাবেশ হবে কোথায়? আমি আপনাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই পল্টন ময়দান এবং মুক্তাঙ্গন গেল কোথায়? সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন হল একটি রাজনৈতিক দলের সভামঞ্চ?

তর্ক-বিতর্ক যাই থাকুক রাজনৈতিক দল এবং সরকারের মূল উদ্দেশ্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করা এ কথাটি ভুলে গেলে চলবে না। তাই আগামী আরও চার মাস সামনে পড়ে আছে নির্বাচনের। তাই জনদুর্ভোগ যাতে আগামী দিনে আর সৃষ্টি না হয় তার দায় দায়িত্ব সরকার ও রাজনৈতিক দলকেই নিয়ে সমাধানে আসতে হবে।

লেখক: মহিউদ্দিন আহমেদ, আহবায়ক, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ।

টিএই/এমএইচটি