images

অফবিট / শিল্প ও সাহিত্য

১০ বছরে কতটা পূরণ হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা?

ঢাকা মেইল ডেস্ক

১৯ জুলাই ২০২২, ০৭:০২ পিএম

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ঠিক দশ বছর আগে ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে মারা যান দেশের জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ। দুই শতাধিক ফিকশন, নন-ফিকশন বইয়ের লেখক হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশ তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তার একেকটি বই প্রকাশের পরপর হাজার হাজার কপি বিক্রি হতো।

সাহিত্য বিশ্লেষকদের মতে, তার নিজস্ব একটি লেখার স্টাইল ছিল, যা অসংখ্য পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। অনেক পাঠকের জন্য তিনি বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করেছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে বড় একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

দশ বছর পর সেই শূন্যতা কতটা পূরণ হয়েছে?

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর ভক্তরা মিলে 'হিমু পরিবহন' নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হুমায়ূন আহমেদ যেসব স্বপ্ন দেখতেন, যা করার কথা ভাবতেন, সেগুলো করা।

এই সংগঠনের একজন সদস্য আহসান হাবীব মুরাদ বলছেন, তিনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই পড়ে বড় হয়েছে।

‘হুমায়ূন আহমেদের জায়গায় হুমায়ূন আহমেদ। (পরবর্তী সময়ে) হয়তো তার চেয়ে অনেক ভালো লেখক আসতে পারে। কিন্তু তার যে ধারা, যে জায়গা, সেটা থেকেই যাবে। সেটা আর পূরণ হবে না,' বলছেন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার স্টাইলে অনেকে উপন্যাস বা গল্প লেখার চেষ্টা করেছে, যদিও সেসব বই খুব বেশি পাঠকপ্রিয়তা পায়নি।

হুমায়ূন আহমেদের লেখার ভক্ত আহসান হাবীব বলছেন, কারও স্টাইল অনুসরণ করে হয়তো তার পেছন পেছন কিছুদিন যেতে পারবে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। এটা নকল হয়েই থাকে, তার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব না।

'আমি একটা বই হয়তো পড়ছি, হুমায়ূন আহমেদের লেখার মতো লাগছে। কিন্তু তার বই পড়ার যে আনন্দ, সেটা পাওয়া যায় না' তিনি বলছেন।

h2

দেশের একজন জনপ্রিয় লেখক মহীবুল আজিজ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, 'তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমার মনে হয় না, লেখকের শূন্যতা এখনো পূরণ হয়েছে। ওনার উপন্যাসের বিষয়বস্তু ওনার মতো করে লিখেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পাঠককে উনি টেনে নিতে পারেন।'

তিনি বলছেন, 'মধ্যবিত্ত আমাদের দেশের একটি বড় সামাজিক শ্রেণি। তিনি মধ্যবিত্তের একটা দিক না, নানান দিক নিয়ে লিখেছেন। তাদের অনেক শূন্যতা, সংকট, অবস্থা- লেখায় সমস্যাগুলো নিয়ে এসেছেন। তাই আমার মনে হয় না, তার লেখার সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে।'

'তার যে বহুমুখী প্রতিভা, অনেক জিনিসকে এক করে নিয়ে আসা, সেই জায়গাটায় আমাদের এখনও শূন্যতা আছে। এটাও একসময় হয়তো ঠিক হয়ে যাবে, তবে এখনো সেটা আছে,' তিনি বলছেন।

অন্যদের বই হুমায়ূন আহমেদের মতো বিক্রি হয় না কেন?

বাংলাদেশে এখনও প্রতি বছর কয়েক হাজার গল্প, উপন্যাসের বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রকাশকরা বলছেন, হুমায়ূন আহমেদের বই যেভাবে বিক্রি হতো, এই লেখকদের জনপ্রিয়তা থাকলেও সেভাবে বই বিক্রি হয় না।

আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলছেন, 'এক কথায় যদি বলতে হয়, তাহলে বলি, তার জায়গায় এখনও কেউ আসতে পারেনি। তার লেখার যে জাদুকরী, মানুষকে আকর্ষণ করা, হুমায়ূন আহমেদ সেটা করতে পেরেছিলেন। অন্য লেখকরা হয়তো সেভাবে পারেননি। স্বাভাবিকভাবে এই কারণে ওই জায়গাটা আর কেউ পূরণ করতে পারেননি।'

তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদের একেকটা বই প্রথম প্রকাশে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কপি ছাপানো হতো। তাঁর বই কিনতে লম্বা লাইন তৈরি হতো।

কিন্তু এখন যেসব বই ছাপানো হয়, সাধারণত প্রথম প্রকাশে ৪০০ বা ৫০০ কপি ছাপানো হয়ে থাকে।

প্রকাশকরা বলছেন, প্রতিটি বই মেলায় নতুন প্রকাশিত কোনো বইয়ের তুলনায় ১০ বছর পরেও হুমায়ূন আহমেদের পুরনো কোনো বই এখনও তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

hh33

লেখক মহীবুল আজিজ বলছেন, 'উপন্যাস, নাটক, সিনেমা- নানা ধরনের মাধ্যমে কাজ করার মাধ্যমে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পেরেছেন। তাকে নিয়ে মানুষের স্বাভাবিক একটা আগ্রহ তৈরি হতো। লেখক হিসাবে আগেই তো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর বাইরে চলচ্চিত্র, গীতিকার সব মাধ্যমে সফল হয়েছেন। তার প্রতি পাঠকদের এতো আগ্রহ তৈরির পেছনে এটারও ভূমিকা ছিল। এত বহুমুখী প্রতিভা কিন্তু অন্য অনেকের মধ্যে দেখা যায় না।'

পাঠক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে অন্য লেখকদের লেখার পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে তার ভক্ত আহসান হাবীব মুরাদ বলছিলেন, 'তাঁর একটা বই পড়তে শুরু করলে আপনি আর বের হতে পারবেন না। আপনাকে শেষ করে বের হবে। হয়তো তার চেয়ে অনেক ভালো লেখক আছেন, কিন্তু শুরু থেকে লেখায় এই ধরে রাখার বিষয়টা থাকে না।'

তবে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের শূন্যতা পূরণ না হলেও তার পাঠকের বই পড়ার একটা উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন প্রকাশক ওসমান গনি।

'আগে যারা মাসুদ রানা পড়তো, রোমেনা আফাজের বই পড়তো, পরবর্তী সময়ে যারা হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েছে, তারা এখন সিরিয়াস ধরনের বই পড়তে শুরু করেছে। ফলে আগের চেয়ে সিরিয়াস ধারার বইয়ের কাটতি কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখানে একটা বড় সফলতা এসেছে,' বলছেন প্রকাশক ওসমান গনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা

জেবি